সতের বছর পার হয়ে গিয়েছে সেই মৃত্যুর। ন বছর ধরে বাবা বেতন না পাওয়ায় স্নাতকস্তরের ছাত্র সেই ছেলেটি পাটনা হাইকোর্ট চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছিল। সেই বকেয়া বেতনের অর্থের জন্য এখনও তার পরিবার এক দুয়ার থেকে অন্য দুয়ারে ছুটে বেড়াচ্ছে। বকেয়ার পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকা।
২২ বছরের চন্দন ভট্টাচার্য কোর্স ফি না দিতে পারায় পার্ট টু তে ভর্তি হতে পারেনি। ২০০২ সালের ১৫ অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবসের দিন, সে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার বাবা পারিজাত ভট্টাার্য ছিলেন বিহার স্টেট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের কর্মী। সে সংস্থা এখন আর নেই। পারিজাত বেতন পাননি ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। চন্দনের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। ৪ দিন পর সে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। পারিজাত ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২০০৫ সালে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে পর পর প্রকাশিত রিপোর্টের সূত্র ধরে বরিষ্ঠ আইনজীবী কপিলা হিঙ্গোরানি এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন। শীর্ষ আদালত ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিহার ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন কর্পোরেশনের ৩৫ হাজার কর্মীকে অন্তর্বতী পেমেন্ট করতে হবে।
২০১৭ সালে হিঙ্গোরানির মেয়ে প্রিয়া হিঙ্গোরানি, যিনি নিজেও একজন আইনজীবী, ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে বলেন,. বিহার এগ্রিকালচারাল কর্পোরেশনের ৭৫৩ জন কর্মীর বকেয়া বেতন চূড়ান্ত ভাবে মেটাতে হবে। ২০১৮ সালের মে মাসে, আদালত নির্দেশ দেয় এই কর্মীদের চূড়ান্ত বকেয়া মেটাতে হবে বিহার সরকারকে। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর রাজ্য সরকার কৃষি দফতরকে এ বাবদে ১২৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করে।
চন্দনের ছোট ভাই অমর এখন স্নাতকোত্তর পাঠরত। এ বিষয়টি তিনিই দেখাশোনা করছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, "এই ক' বছরে, আমি এক অফিস থেকে অন্য অফিসে ছুটে বেড়াচ্ছি। আমার দাদা আত্মহত্যা করেছিল বাবা তার পড়ার খরচ জোগাতে পারেননি বলে। আমি মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী সবার সঙ্গে দেখা করেছি... এবার টাকা যখন মঞ্জুর হয়েছে, আমার বাবার বকেয়াও মিটবে।"
অমর জানালেন, এই বিলম্ব ও মামলা তাঁর পরিবারকে কীভাবে ভুগিয়েছে। "আমার দিদি প্রতিমার বয়স ৪০। আর্থিক ও শারীরিক সমস্যার কারণে তার বিয়ে হয়নি। বাবার জায়গায় কোনও চাকরিও মেলেনি তার। সবচেয়ে খারাপ হল, আমাদের সিস্টেমের অমানবিকাতা আমি দেখতে পেয়েছি। আমি জানি না, আমার বাবার এত কষ্টে রোজগার করা টাকা জোগাড় করার জন্য আর কী কী করতে হবে, যে বাবাও চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন।" অমর এখন কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করেন।
কৃষি বিভাগের সচিব এন শ্রাবণ কুমার অবশ্য বলেছেন, "আমি চন্দন ভট্টাচার্যের বিষয়টা জানি। আমার দিক থেকে কোনও কাজ বাকি নেই।"
কৃষি বিভাগের বিশেষ সচিব রবীন্দ্রনাথ রাই এ বিষয়টির দেখভাল করছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি জানান, "চন্দনের ব্যাপারটা সামনে এসেছে। আমরা ৭৫৩টি পরিবার, যাদের বকেয়া রয়েছে, তাদের সবাইকে সমান গুরুত্ব দেবার চেষ্টা করছি। প্রত্যেক কর্মীর বকেয়া হিসেব করছি আমরা। চূড়ান্ত পেমেন্টের বিষয়টি মন্ত্রিসভার অনুমোদনসাপেক্ষ। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে টাকা দেবার কাজ শুরু হবে।"