আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিযুক্ত কমিটির রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে আগেই জমা পড়েছে। সেই রিপোর্ট মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আনেন কমিটির চার সদস্য। রিপোর্টে ‘আসামবাসীর সংজ্ঞা’ নির্ধারণে ১৯৫১ সালকেই ভিত্তিবর্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চৌদ্দ সদস্যের কমিটির রিপোর্ট গত ফেব্রুয়ারিতেই আসাম সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়।
আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা লাগুর লক্ষ্যে ‘আসামবাসীর সংজ্ঞা’ নির্ধরণ অত্যন্ত জরুরি। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে আসাম চুক্তিতে স্থানীয় উপজাতী সহ অন্যান্য স্থানীয় গোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এছাড়া ভারতের অন্যান্য যেসব নাগরিক ১ জানুয়ারি ১৯৫১ সালের আগে আসামে এসেছেন তাঁরা ও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম অসমীয়া বলে গণ্য হবেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জারি করা এক বিবৃতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এই রিপোর্ট প্রকাশকে 'অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক' বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, চুক্তির পুঙ্খাপুঙ্খ বিযয় বলবৎ করতে আসাম সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেছেন, এর আগে কোনও সরকার চুক্তির ৬ ধারা লাগু করতে কমিটি গঠন করেনি। সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারও পুরো বিষয়ে পদক্ষেপ করছে। সুতরাং, একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা না দিয়ে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।'
মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, 'আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে আদিবাসী মানুষদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় রাজ্য সরকার সবসময় বন্ধপরিকর। এক্ষেত্রে কোনও শর্ত বা অপোস রাজ্য সরকার করবে না।'
মঙ্গলবার আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক নিযুক্ত কমিটির রিপোর্ট যে চার সদস্য প্রকাশ করেন তার মধ্যে সমুজ্জবল ভট্টাতার্য, দীপঙ্কর নাথ ও লুরিনজ্যোতি গগোই অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের কার্যকর্তা। অপর জন হলেন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও অরুণাচলপ্রদেশের অ্যাডভোকেট জেলারেল নীলয় দত্ত।
১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তিতে অবৈধ বিদেশি নির্ধারণে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ভিত্তি বর্ষ বলে বিবেচনা করা হয়। এনআরসি-তেও ওই বছরই ভিত্তি বর্ষ হিসাবে উল্লেখ ছিল। তবে এক্ষেত্রে কারা যোগ্য- তা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল না।
আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা অনুসারে “অসমিয়া মানুষের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভাষাগত পরিচয়ের সুরক্ষা দেবার জন্য এবং তার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম সাংবিধানিক, আইনি ও প্রশাসনিক সুরক্ষাকবচ দেওয়া হবে।” ১৯৮৫ সালের শেষে সাংবিধানিক ও আইনি বিষয়, আন্তর্জাতিক চুক্তি, জাতীয় দায়বদ্ধতা ও মানবিক বিষয়ের সমস্যা মাথায় রেখে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
নাগরিকত্ব আইনকে কেন্দ্র করে গত বছর শেষের দিকে গোটা আসাম উত্তাল হয়। সেই সময় সোনোয়াল সরকার প্রতিশ্রতি দেয় যে, আসমিয়া উপজাতির স্বার্থ রক্ষায় আসাম চুক্তির ৬ নম্বর ধারা বলবৎ করা হবে।
রিপোর্টে উল্লেখ, সংসদীয়, পরিষদীয় ও স্থানীয় প্রশাসনে আসামবাসীর প্রায় ৮০ শতাংশ আসন সংরক্ষণের সুপারিশ রয়েছে। গ্রুপ সি ও ডি পর্যায়ে সব সরকারি ও বেসরকারি অফিসে ৮০ শতাংশ থেকে ১০০ আসামবাসির কাজের সংরক্ষমের কথা বলা হয়েছে। সরকার পোষিত ও পিপিপি মডেলের সংস্থাতেও আসামবাসীর চাকরির সংরক্ষণের কথা রয়েছে। ওই রিপোর্টে ইনার লাইন পারমিটের বিষয়েও সুপারিশ রয়েছে। এছাড়া, আসান বিধানসভার উচ্চ কক্ষ কেবলমাত্র আসামবাসীর জন্য সংরক্ষণের কথা বলা রয়েছে। রিপোর্টে জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে অসমীয়া জনগোষ্ঠী ব্যতীত অন্য ব্যক্তিদের কাছে যে কোনও উপায়ে একই স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করার সুপারিশ করা হয়।
রিরোপর্ট ফেব্রুয়ারিতে জমা পড়লেও আসাম সরকার এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে নীরব। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। গগৈই বলেছেন, 'এটা সরকারি নথি, পাঁচ মাস পরে সবার জানার অধিকার রয়েছে। কেন সরকার চুপ, তা জানতে চাই। কেন এখনও প্রতিশ্রুতি বলবৎ হচ্ছে না তার জবাব দিতে হবে।'
অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের পরামর্শদাতা আজিজুর রহমান বলেন, 'আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন যে ১৯৫১ সালের আগে কোনও ব্যক্তি আসামে ছিলেন? এখনও পর্যন্ত তা নির্ধারণের কোনও প্রক্রিয়া নেই। এটা কি নির্বিচারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? ১৯৫১ সালের এনআরসি তালিকা রাজ্যের বেশ কয়েকটি অংশে মেলেনি এবং বর্তমান এনআরসি তৈরি করা হচ্ছে ১১৯৭১-কে ভিত্তি বর্ষ বিবেচনা করে।'
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন