কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সফরের মাঝেই হিংসার আগুনে জ্বলে উঠলো মণিপুরে। ২সপ্তাহের শান্তির পর নতুন করে উত্তেজনা ছড়াল পার্বত্য রাজ্যে। বৃহস্পতিবার ভোরে হিংসায় ২ জনের মৃত্যু ঘিরে ইম্ফলে উত্তেজনা বেড়েছে। ইম্ফল পশ্চিমের কাংপোকপি জেলার সীমান্তের হারাওথেল গ্রামে মেইতি সম্প্রদায়ের দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি সকাল সাড়ে ৫টার নাগাদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইম্ফল শহরের কেন্দ্রস্থলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং শ’য়ে শ’য়ে মানুষ মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় জড়ো হয়। জড়ো হওয়া মহিলারা হিংসা বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্লোগান’ দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামলাতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও RAF মোতায়েন করা হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়।
এদিকে রাহুলের মণিপুর সফরের মাঝেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচার’-এর অভিযোগে সরব কংগ্রেস। মণিপুর সফরের মাঝেই রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, ‘মণিপুরের শান্তি ফেরানোয় সরকার বাধা দিচ্ছে’। বিষ্ণুপুরে পুলিশ কনভয় আটকে দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে চপারে চূড়াচাঁদপুরে গিয়ে ত্রাণশিবির পরিদর্শন করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ত্রাণশিবির পরিদর্শনকালে মণিপুর রাজ্য বিজেপি ও কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন রাহুল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মণিপুরের ভাই-বোনদের কথা শুনতে এসেছিলাম। কিন্তু, সেসব শুনতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’ এনিয়ে টুইট করেছেন রাহুল। তিনি লিখেছেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে সরকার আমাকে বাধা দিচ্ছে। শান্তি আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।’
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর কনভয়কে বিষ্ণুপুরের কাছে পুলিশ থামিয়ে দিয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা আমাদের অনুমতি দেওয়ার মত অবস্থায় নেই। রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে ঢেউ তোলার জন্য রাস্তার দু’পাশে মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরা বুঝতে পারছি না কেন পুলিশ আমাদের থামিয়েছে।’ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও পুলিশের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন। রমেশ বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদী মণিপুর সংকটের ব্যাপারে নীরব থাকলেও রাহুল গান্ধী অশান্ত পার্বত্য রাজ্যে নিরাময়ের বার্তা নিয়ে পৌঁছেছেন।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বৃহস্পতিবার সকালে মণিপুরে তার দুই দিনের সফরে ইম্ফল পৌঁছন। কথাই ছিল তিনি ত্রাণশিবির পরিদর্শন করবেন। মণিপুরে সপ্তাহব্যাপী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। চলমান হিংসার মধ্যে রাহুলই হলেন প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, যিনি মণিপুর সফর করলেন।
মণিপুর সফরে পুলিশ রাহুল গান্ধীর কনভয় থামানোয়, তীব্র সমালোচনা করেছে কংগ্রেস। মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং বলেছেন, ‘এটা একধরনের স্বৈরাচার। আমাদের গণতন্ত্র কী পরিস্থিতিতে রয়েছে, এটা তার একটা নমুনা। আমরা এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। আমরা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তাঁদের সান্ত্বনা দিতে এসেছি।’