সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে ২০ জন সেনা কর্মীর। সংঘর্ষে একাধিক চিনা সেনাও নিহত হয়েছে বলে দাবি ভারতীয় সেনার। তবে এ প্রসঙ্গে এখনও নীরব বেজিং। প্রাথমিক ভাবে এক কর্নেল- সহ তিন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর কথা মঙ্গলবার সকালেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়। রাতে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকাকালীন গুরুতর আহত আরও ১৭ জন সেনা প্রবল ঠান্ডায় মারা গিয়েছেন। গালওয়ানে অফিসার সহ মোট ২০ জন সেনা কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তবে, দেশের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা।
৪৫ বছর পরে ভারত-চিন সীমান্ত সংঘর্ষে সেনা মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত। গালওয়ান, প্যাংগং, নাকুলা সহ বেশ কয়েকটি অঞ্চল দিয়ে চতিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে বলে জানায় সেনা। এমনকী গালওয়ান সহ নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে বেশ কয়েকটি জায়গায় চিনারা সমরাস্ত্র ও সেনা মজুত করে। ফলে ভারতও ওইসব এলাকায় সেনা সংখ্যা বাড়ায়। ফলে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়।
এরপরই দুই দেশের তরফে উত্তেজনা প্রশমণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৬ই জুন উভয় দেশের সেনার কমান্ড পর্যায় আলোচনা চলে। জারি ছিল কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনাও। নিয়ন্ত্রণ রেখার বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে দু'দেশের সেনাই পিছিয়ে য়ায। সোমবারও ভারত-চিন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ে আলোচনা হয়। কিন্তু, ওই রাতেই ফের সংঘর্ষে জড়ায় ইন্দো-চিন সেনা। ভারতের দাবি বিনা প্ররোচনাতেই হামলা চালিয়েছে চিন।
মঙ্গলবার সকালেই ভারতীয় সেনার তরফে বলা হয় নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে কর্নেল বি সন্তোষ বাবু, হাবিলদার কে পাজানি ও কুন্দন ওঝার মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দু'দেশের সেনা কর্তারা বৈঠক করছেন বলেও দাবি করে ভারতীয় সেনা। এরপরই পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত, তিন বাহিনীর প্রধান এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
লাদাখ সীমান্তে সোমবার মধ্যরাতে ভারত-চিন সংঘর্ষে ভারতীয় অফিসার এবং দুই জওয়ানের মৃত্যুতে ভারতকেই দায়ী করেছে চিন। মঙ্গলবার বেজিংয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় ভারতই ‘সীমান্ত পেরিয়ে’ ‘চিনের সেনাদের আক্রমণ’ করে। চিনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমস সেদেশের বিদেশ দফতরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইন্দো-চিন সীমান্তে 'মারাত্মক শারীরিক সংঘর্ষের' ঘটনা ঘটেছে। চিনা সেনা মুখপাত্র 'ভায়ঙ্কর সংঘর্ষ ও প্রাণহানী'র কথা স্বীকার করেছে।
১৯৭৫ সালে ভারত-চিন সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। অরুণাচলে চিনা সেনার অতর্কিতে আক্রমণে প্রাণ শহিদ হন ভারতীয় সেনা। তার আগে ১৯৬৭ সালে সিকিমের নাথুলায় দু'দেশের সেনার সংঘর্ষে প্রাণ যায় ৮৮ জন ভারতীয় সেনা ও ৩০০-র বেশি চিনা সেনার।
সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ও শাইওক নদীর মোহনার কাছে যে স্থানে সংঘাত বেঁধেছে তা ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্ট বলে পরিচিত। ভারতীয় সেনার দাবি, চুক্তি অনুসারে নদির পশ্চিমে থাকার কথা ভারতীয় সেনার ও পূর্বে চিনা সেনার। মধ্যবর্তী অংশ বাফার জোন। সোমবার বাফার জোন থেকে চিনা সেনার তাঁবু সরাতে গিয়েছিল ভারতীয় বাহিনীর বিহার রেজিমেন্ট। তখনই অতর্কিতে পাথর ছুড়তে শুরু করে চিনা বাহিনী। তার পর লোহার রড, বাঁশ দিয়ে মারধর শুরু হয়। বেশ কয়েকজন সেনাকে নদিতে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকটি দেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হলেও বাকিদের দেহের খোঁজ মেলেনি। হাইপোথার্মিয়াতে বেশ কয়েকজন সেনা মারা যায়। বেশ কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে চিন বন্দি করলেও দুই বাহিনীর মেজর পর্যায়ের আলোচনার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এদের অনেকের দেহেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সোমবারের ঘটনার পর পের নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা বেড়েছে। উভয় দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে বলে জানা গিয়েছে।
Read in English