অবৈধ বাংলাদেশিদের ধরতে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। ইতিমধ্যেই বহু বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করে তাদের শহর ও রাজ্য ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শনিবার বেঙ্গালুরু ফেরৎ ৫৫ জনের এক বাংলাদেশি দলকে হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যেনতেন প্রকারে দেশে ফিরতে চাইছেন ভারতে ঢুকে পড়া এইসব বাংলাদেশিরা।
প্রতিবেশী দেশের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত কয়েক সপ্তাহে ভারত থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের ওপারে ফেরার হার বেড়েছে। ইতিমধ্যেই ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগামী করয়েক সপ্তাহে যা আরও কয়েকগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই বেঙ্গালুরু পুলিশের হয়রানি ও আতঙ্কের স্বীকার হয়ে ফিরছেন বলে বাংলাদেশি সংবাদ পত্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আটক কেন্দ্র স্থান বাড়ন্ত, তবু বেঙ্গালুরুতে চলছে বাঙালি অনুপ্রবেশকারী ধরপাকড়
শনিবার বেঙ্গালুরু ফেরৎ ৫৫ জন অবৈধ বাংলাদেশীকে প্রায় ৪ ঘন্টা হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়। এই দলে বহু শিশু ও মহিলাকেও লক্ষ্য করা গিয়েছে। বেঙ্গালুরু পুলিশ, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও বিএসএফের আলোচনার পর তাদের বাসে করে সীমান্ত পার করানোর বন্দোবস্ত করা হয়। এবিষয়ে অবশ্য কোনও পুলিশ অফিসার বা বিএসএফ কর্তা কিছু বলতে চাননি। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার ও অবৈধ বাংলাদেশিদের নির্বাসন সংক্রান্ত কার্যকলাপের নোডাল অফিসার এস ডি সারানাপ্পা সানডে এক্সপ্রেসকে বলেন, 'অবৈধ বাংলাদেশিদের হাওড়া থেকে ৩০ জন পুলিশ পরিবৃত করে পাঠান হয়েছে। এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ, কর্নাটকের স্বরাষ্ট্র দফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করা হচ্ছে।' স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বলেছেন অবৈধ বাংলাদেশিদের রেয়াত করা হবে না। তারপরই সক্রিয় হয় বেঙ্গালুরু পুলিশ। অবৈধ বাংলাদেশিদের শহর ছাড়ার জন্য নোটিস ধরানো হয়।
গত অক্টোবরে বেঙ্গালুরুর দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে থেকে ৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা বেশিরভাগই লোকের বাড়িতে কাজ করে বা রাস্তায় জঞ্জাল তোলার কাজ করে থাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ফরেন অ্যাক্টে দুটি মামলা ধৃতদের বিরুদ্ধে করা হয়। ধৃতদের মধ্যে ২৪ জন মহিলা ও ১৬ জন শিশু রয়েছে। কার্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বোম্মাই বললেন, ‘বেঙ্গালুরু সহ কর্নাটকের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে। তাদের সরাতেই আসামের মতো এরাজ্যেও এনআরসি লাগু করা হবে। কেন্দ্রের সঙ্গে এনিয়ে কথা এগোচ্ছি।’
ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুশারে সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে এদেশ থেকে প্রায় ২০০ জন ওপাড়ে প্রবেশ করে। এরা প্রত্যেকেই অবৈধ উপায় ভারতে ছিল বলে দাবি করা হয় রিপোর্টে। ডেইলি স্টারের রিপোর্টে এই সংখ্যটা ৩২৯। সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে ৫৮ নম্বর বিজিবি ব্যাটেলিয়ানের অফিসারকে উদ্ধত করে বলা হয়েছে, 'এরা ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলে জঞ্জাল সাফাই, বাড়ির কাজ করে থাকে। এনআরসির তোড়জোড় চলছে ভারতে। তারপরই বারত থেকে অবৈধ উপায়ে এদেশে প্রবেশের হার বেড়েছে। প্রত্যেকেই দাবি করছে এরা বাংলাদেশি।'
আরও পড়ুন: এনআরসি নিয়ে নতুন ফর্মুলা এল ত্রিপুরা রাজপরিবার থেকে
হাওড়া স্টেশনে বেঙ্গালুরু ফেরৎ বাংলাদেশি দলের মধ্যে থাকা মহম্মদ জাহাঙ্গির বলেন, 'গত তিন বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে প্লাসটিকের জঞ্জাল তোলার কাজ করছি। এতে দিনে প্রায় ৪০০ টাকা আয় হয়, যা বাংলাদেশে ভাবাই যায় না। একদিন সকালে পুলিশ আমাকে জানাল, মেনে নিতে হবে যে আমি বাংলাদেশি , নয়-তো আমাকে জেলে থাকতে হবে। আমি স্বীকার করেছি আমি বাংলাদেশি। তাই আমাকে বাড়ি ফেরানো হচ্ছে।' একই কথা, গত চার বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজে যুক্ত বছর পঞ্চশের আব্দুল হাকিম ও তাঁর স্ত্রী হাসিনা বেগমের। হাকিম অকপটে জানালেন, 'এক দালালকে টাকা দিয়ে অবৈধ উপায় ভারতে প্রবেশ করেছি।'
বেঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, অবৈধ বাংলাদেশিদের হটাতে তাদের সক্রিয়তা বজায় থাকবে। এখনও পর্যন্ত শহর ও সংলঙ্গ এলাকা থেকে বেঙ্গালুরুতে বসবাসকারী অর্ধেকের বেশি অবৈধভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশিকে সরানো গিয়েছে। অনেকে পালিয়ে গিয়েছে। তবে তাদের সংখ্যা অবশ্য নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি পুলিশ।
Read the full story in English