সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডে সাজা ঘোষণা করল আলিপুর আদালত। আগেই চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন ৬ জন। শুক্রবার সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডে খোঁড়া বাদশা-সহ চারজন দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আলিপুর আদালত। তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। রায় শোনার পরই আদালত চত্বরে ভেঙে পড়েন দোষীদের আত্মীয়রা। তাঁদের পরিবারের দাবি, ইচ্ছে করে ফাঁসানো হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ড ঘটে। বিষমদ খেয়ে মৃত্যু হয় মগরাহাট, উস্তি-সহ ডায়মন্ড হারবার মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় ১৭৩ জনের। এই ঘটনায় মগরাহাট এবং উস্তি থানাতে দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্বভার যায় সিআইডি-র হাতে। তদন্তে জানা যায়, যে চোলাই মদ খেয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, সেই চোলাই মদ বানাত কুখ্যাত ডন নূর ইসলাম ওরফে ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা।এই ঘটনা সংগ্রামপুর বিষমদকাণ্ড নামে পরিচিত। রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। নিহতদের পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার।
দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলে মামলা। অতঃপর গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় দেন আলিপুর জেলা আদালতের ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা বিচারক। বিষমদ কাণ্ডে খোঁড়া বাদশা সহ ৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। বাকি ৭ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।
সংগ্রামপুর বিষমদ কাণ্ডে মৃত্য হয়েছিল ১৭২ জনের। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল উস্তি থানায়। অভিযুক্ত ছিল ১২জন। দু’জন এখনও পলাতক। মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশা ও তাঁর স্ত্রী-সহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। চার্জশিট পেশ করা হয় ২০১২ সালে। অতঃপর গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় দেন আলিপুর জেলা আদালতের ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা বিচারক। বিষমদ কাণ্ডে খোঁড়া বাদশা সহ ৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। সাক্ষ প্রমাণের অভাবে বাকি ৬ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। এদিকে মগরাহাট থানায় যে মামলাটি দায়ের হয়েছে, সেই মামলা এখন বিচারাধীন বলে জানা গিয়েছে।
খোঁড়া বাদশা এবং বাকি অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি উস্তির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের। তাঁদের দাবি, খোঁড়া বাদশাদের বানানো বিষাক্ত চোলাই খেয়ে উস্তির ভারীউড়ান সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের মৃত্যু হয়েছিল একের পর এক। খোঁড়া বাদশাদের দাপটে মদের ঠেক চলত। যদিও সে সব অবশ্য এখন উঠে গিয়েছে। গ্রামের লোকই ঠেক ভেঙে দেন। তার পর থেকে পুলিশের নজরদারিও বাড়ে। বিষমদ কাণ্ডে স্বামী হারা তাপসী মাখাল বলেন, 'স্বামীর দিনমজুরির টাকায় সংসার চলত। রোজগারের বেশির ভাগ অবশ্য উড়িয়ে দিতেন নেশায়। তবু ওই ক’টা টাকাই ছিল ভরসা।’ তিনি এই রায়ে নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন,' কয়েক জন তো জামিন পেয়ে গিয়েছে, অবশ্য আমার স্বামী কে কেড়ে নেওয়া খোঁড়া বাদশা সহ অন্যান্যদের আমরা ফাঁসি চাই।"