বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের সাত সদস্যকে বুধবার মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল এক বিশেষ 'অ্যান্টি-টেররিজম ট্রাইব্যুনাল'। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালে দেশের রাজধানী ঢাকায় একটি ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ২০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করার। নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
হামলার পরিকল্পনা, বিস্ফোরক তৈরি করা, এবং খুন ছাড়াও অন্যান্য অপরাধে ওই সাতজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারপতি মোজিবুর রহমান। মামলায় অভিযুক্ত আরও একজনকে খালাস করে দেওয়া হয়। ভরা এজলাসে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বসে নিজের সিদ্ধান্ত শোনান বিচারপতি রহমান।
আরও পড়ুন: ভারতে ‘হয়রানি’ বাড়ছে, অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পেরোতে গিয়ে ওপারে ধৃত ২০০ বাংলাদেশি
আজ থেকে তিন বছরের কিছু বেশি আগে, ১ জুলাই, ২০১৬ সালের এক সকালে, ঢাকার হোলি আর্টিসান বেকারিতে বেশ কিছু মানুষকে আটকে রেখে গুলি চালাতে শুরু করে পাঁচজন হামলাকারী। হামলা চলাকালীন যাঁদের আটক করা হয়, তাঁদের মধ্যে জাপান, ইতালি, এবং ভারতের ১৭ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়। প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর নিহত হয় ওই পাঁচ সন্ত্রাসবাদীও, সঙ্গে নিহত হন দুজন নিরাপত্তা আধিকারিক।
প্রাথমিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী, কিন্তু এই দাবি অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। সরকারের বক্তব্য ছিল, হামলার পেছনে কোনও স্থানীয় গোষ্ঠীর হাত রয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের মতো আন্তর্জাতিক সংগঠনের কোনোরকম অস্তিত্ব নেই।
বড়সড় এই হামলা ছাড়াও বাংলাদেশে 'ইসলামের শত্রু' হওয়ার অভিযোগে বেশ কিছু বছর ধরে বিক্ষিপ্ত হামলার শিকার হয়ে এসেছেন আরও অনেকে, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচারক, লেখক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, বিদেশি, এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা।
বুধবার মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি, কিন্তু বিচারপতির বক্তব্য ছিল, বিদেশি নাগরিকদের ওপর এই ধরনের বড় মাপের এবং পরিকল্পিত প্রাণঘাতী আক্রমণ চালিয়ে দেশের সংবিধান এবং সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে অভিযুক্তরা।
অভিযুক্তরা নিজেদের দোষ স্বীকার করেনি, এবং তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যেতে পারে।
ঘটনার তদন্তে নেমে তদন্তকারীরা মূল অভিযুক্ত হিসেবে ২১ জনকে চিহ্নিত করেন, হামলার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত পাঁচজন সমেত। যে আটজনকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়, তারা বাদে আরও আটজন হামলা-পরবর্তী সময় নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক অভিযানে নিহত হয়।