বছর দুই আগে বাস দুর্ঘটনায় দুটি হাতই হারিয়েছিলেন কর্নাটকের ছাত্রী শ্রেয়া সিদ্ধানাগৌড়া। জীবনযুদ্ধ শুরু তখনই। হাত ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছিলেন শ্রেয়া নিজেই। ২০১৬ সালের দুর্ঘটনার স্মৃতিকে ভুলে গিয়ে অবশেষে খুঁজে পেলেন 'হাত সঙ্গীকে'। কিন্তু গ্রহীতা তো পুরুষ। মহিলার শরীরে পুরুষের হাত প্রতিস্থাপন? এশিয়াতে যা কোনওদিন হয়নি সেই ইন্টার জেন্ডার হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট হল ভারতেই। যদিও ট্রান্সপ্লান্টের পর হাত দেখে বোঝার উপায় নেই, এই হাত কার? এশিয়া মহাদেশে যা কখনও হয়নি, সেই অসাধ্য সাধন সম্ভব হল কীভাবে?
অমৃতা ইনস্টিটিউটের প্লাস্টিক সার্জন ডা: মোহিত শর্মা বলেন, "পশ্চিমের দেশে মেয়ের হাত ছেলের হাতে ট্রান্সপ্লান্টের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ভারতে এমন ঘটনা এই প্রথম। যেখানে দাতা এবং গ্রহীতার হাতের লিম্ফ্যাটিক নডিউলও মিলে গিয়েছে এবং সেখান থেকে ফ্লুইডও প্রবাহিত হয়েছে। আর হাতের রঙ সেই আগের মতো আসার একটাই কারণ মেলানিন প্রোডিউসিং সেল।" প্রসঙ্গত, অমৃতা ইনস্টিটিটিউট এশিয়ায় একমাত্র হাসপাতাল যেখানে সফলভাবে হাত প্রতিস্থাপন করা হয়েছে একাধিকবার। তবে ইন্টার জেন্ডার হ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট এই প্রথম।
আগের মতোই সেই একই হাতের লেখায় লিখতে পারছেন শ্রেয়া
শ্রেয়া বলেন যে এক আফগান নাগরিকের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন যিনি এক বছর থেকে দাতার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। সেখানে খুব অল্প সময়েই এর্নাকুলামের রাজাগিরির ছাত্র শচীনের সন্ধান পান শ্রেয়া। বাইক অ্যাক্সিডেন্টে ব্রেন ডেথ অবস্থায় ছিলেন শচীন। শ্রেয়ার সঙ্গে রক্তের গ্রুপ মিলে যাওয়ায় দেরি করেনি শ্রেয়ার পরিবার। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট মাসে ১৩ ঘন্টা ধরে ১৬ জন ডাক্তারদের দলের সহায়তায় এই অপারেশনটি করা হয়।
আরও পড়ুন: অ্যাসিডে পুড়েছে স্বামী-সন্তানের দেহ, ভয়ঙ্কর স্মৃতির ‘ধ্বংসাবশেষে’ শোকাতুর দিল্লি
অঙ্গদানের মধ্যে বিশেষ করে হাত প্রতিস্থাপন খুবই বিরল ঘটনা। হাত প্রতিস্থাপনের পর প্রায় দেড় বছর ধরে ফিজিওথেরাপির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন শ্রেয়া। তিনি বলেন, "প্রথমে খুব ভারি লাগত হাতটা। পরে আসতে আসতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।" মেয়ের এত বড় একটা অপারেশনের সময় থেকে নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করে রেখেছিলেন শ্রেয়ার মা। তিনি বলেন, "আমি প্রত্যেক দিন ওর হাতটা দেখতাম। আসতে আসতে হাতটা ওর হাতের মতোই দেখতে হয়ে গিয়েছিল। অভূতপূর্ব একটা পরিবর্তন"।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন