আকস্মিক ধেয়ে আসা হড়পা বানে তছনছ হিমাচল প্রদেশের একাধিক অংশ। সঙ্গে চলছে তুষার ঝড় আর প্রবল বৃষ্টি। প্রকৃতির এই হঠাৎ তান্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে রয়েছে পাঞ্জাব এবং জম্মু-কাশ্মীরও। আপাতত ওই রাজ্যগুলির বিভিন্ন এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এই অঞ্চলে নদীগুলির জলের মাত্রা বেড়েছে, পং ড্যামের জল ইতিমধ্যেই বিপদসীমা পেরিয়েছে। ভাক্রা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ জলের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে পং বাঁধ থেকে প্রায় ৪৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হয়। পাশাপাশি রোপার বাঁধ থেকেও রাতে প্রায় ১ লাখ কিউসেক জল ছাড়া হয়। যার ফলে জলে ডুবেছে হিমাচলের একাধিক এলাকা। সম্প্রতি নজরদারি বজায় রাখার জন্য এই জেলার প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঞ্জাব সরকারের অনুরোধে উদ্ধার কার্যের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় ম্যালেরিয়াতে মৃত ৬, মন্ত্রী বললেন মহামারী নিয়ন্ত্রণে
যমুনার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় হরিয়ানা সরকার উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। সোমবার সন্ধে সাড়ে আটটায় যমুনাগর জেলার হঠনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে ২.১৬ লাখ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এরকমই চলতে থাকলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জল ঢুকে যেতে পারে দিল্লিতেও। তবে সরকারি আধিকারিকরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান যে হরিয়ানায় যমুনা ও ঘগগার নদীগুলি এখনও বিপদ সীমারেখার নীচে।
হিমাচল ও পাঞ্জাব মিলিয়ে মোট প্রাণ হারিয়েছেন আট জন। এদের মধ্যে রয়েছে আট বছর বয়সী একটি শিশু এবং অমৃতসরের ১২ বছরের এক কিশোর। কাপুরথালা ও নওয়ানশহারে ছাদ ধসের ঘটনায় ইতিমধ্যে মারা গেছেন পাঁচজন। মানালির কাছে বিয়াস নদীতে গাড়ী পড়ে গিয়ে মারা গেছেন তিনজন। মানিকরণ উপত্যকায় পার্বতী নদীতে দুজন ভেসে যান।
জম্মু ও কাশ্মীরের পাহাড়ী দোডা জেলায়, একটি বাড়ির দিকে ধেয়ে আসে কাদার ঢল। সময়মত বাড়ি থেকে বেরোতে পারেন না বাসিন্দারা। বাড়িতে সেসময় ছিলেন পরিবারের পাঁচজন সদস্য। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়। প্রবল দুর্যোগে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকার্য। এই সমস্যার মধ্যে ২৯ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গিতে মৃত দুই, উল্লেখ নেই ডেথ সার্টিফিকেটে
উত্তরাখণ্ডে, কেদারনাথ যাওয়ার পথে লিনচোলি নদীর কাছে পাঁচ মিটার প্রশস্ত পথটি জলের তোরে ভেসে গেছে। ঘটনায় ৫০০ তীর্থযাত্রী আটকে পড়েছে। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার ম্যাজিস্ট্রেট মঙ্গেশ ঘিলদিয়াল বলেন, "মুক্তিযুদ্ধ চলছে। মঙ্গলবার থেকে তীর্থযাত্রীদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে।"
রাস্তা, রেল এবং বিমান পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা জুড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে ফসলের। IMD বা ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের খবর অনুসারে, রবিবার রাত ৮.৩০ থেকে পাঞ্জাবের পাটনকোট ও গুরুদাসপুরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪০ মিমি; হিমাচল প্রদেশে ১৬০ মিমি এবং হরিয়ানায় আসানধে ১৬০ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে।