দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে পাঁচ দিন। নতুন করে চলতে শুরু করেছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। একরাশ আতঙ্ক চোখে মুখে নিয়ে প্রণাম ঠুকতে দেখা গিয়েছে অনেক যাত্রীকেই। সেদিনের ভয়াবহতাকে এখনও যেন কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। তবে ট্রেনই তাদের ভরসা। থাকা খাওয়া-সেই সঙ্গে বাঁচারও। তাই অতীতকে ভুলে নতুন ছন্দে যাত্রীরা।
তেমনই এক যাত্রী শেখ মুরুদ্দিন, কতবার তিনি এই ট্রেনে যাতায়াত করেছেন তার হিসাব রাখেননি তিনি। প্রতি সপ্তাহেই চেন্নাই যেতে হয় তাকে। তবে ট্রেনে ওঠার আগে বুধবার তিনি প্রণাম করেই ট্রেনে উঠেছেন। ওডিশার বাহানাগায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যুর পর ১৫০০ যাত্রীকে নিয়ে বুধবার ফের শালিমার থেকে যাত্রা শুরু করে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। মুরুদ্দিন জানান, শুক্রবার তার ওই ট্রেনেই ওঠার কথা থাকলেও পরে পরিকল্পনা বাতিল হয়। ট্রেনে অন্য অনেকের মতো, মুরুদ্দিনের ভ্রমণ একেবারেই শখের যাত্রা নয়। চেন্নাই তার কর্মস্থল। বুধবার, ২৩-বগির ট্রেনটিতে ১,৪৭৭জন যাত্রী ছিলেন এবং সাধারণ বগিতে অতিরিক্ত ভিড় চোখে পড়েছে।
ট্রেনের এস৫ বগিতে ছিলেন বিহারের বিলেট সাউ। ট্রেন ছাড়ার আগে তাকে হনুমান চালিসা পাঠ করতে শোনা যায়। ট্রেন যাত্রা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মৃত্যু থাকলে এসি রুমে বসে হার্ট অ্যাটাকেও মানুষ মরতে পারে। ঝুঁকি নিতেই হবে আমাদের মত আম-আদমিকে’। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর পরিযায়ী শ্রমিকের পাশাপাশি ট্রেনটিতে অনেকেই আছেন যারা দক্ষিণে চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করেন।
B1 শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা পূজা কুমারী, তিনি বলেন, ‘যতবার ট্রেনটিতে ঝাঁকুনি হয় বুক কেঁপে ওঠে। টেলিভিশনের পর্দায় যে ছবি দেখেছি সেই ছবি আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমাদের’।
শালিমার থেকে চেন্নাই পর্যন্ত সপ্তাহে প্রতিদিন চলে করমন্ডল এক্সপ্রেস। শালিমার স্টেশনের স্টেশন মাস্টার বলেন, ‘একেবারে অন টাইম পৌঁছে দেওয়া এবং প্রতিদিন চলাচলের কারণে ট্রেন সবসময় ভর্তি থাকে যাত্রীতে। অবসরপ্রাপ্ত টিকিট পরীক্ষক গঙ্গা মন্ডল মনে করেছেন সেই দিনগুলির কথা যেখানে কর্তব্যের খাতিরে তাকে করমন্ডল এক্সপ্রেসে রাতের পর রাত কাটাতে হয়েছে’।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জাহারানা বিবি বুধবার এই ট্রেনেই চড়েছিলেন। তিনি জানান, ‘বাংলায় কোন কাজ নেই, চেন্নাইতে ইটভাটায় কাজ করলেও প্রতিদিন ৭০০-৮০০টাকা মজুরি মেলে। জীবনের ভয় করলে পেট চলবে না”। বালেশ্বর পৌরসভার হেডক্লার্ক গজধর মিশ্র বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে ভদ্রক এবং বালেশ্বর তিনি এই ট্রেনেই যাতায়াত করেন। শুক্রবার, তিনি তাড়া থাকার কারণে জনশতাব্দীতে উঠেছিলেন। গুনগুন করতে করতে তিনি গেয়ে উঠলেন, "জিন্দেগি এক সফর হ্যায় সুহানা, ইয়াহন কাল কেয়া হো কিসনে জানা।"