বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নজরে ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ! এই সিরাপগুলি ব্যবহারে ইতিমধ্যেই একটি সতর্কতা জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। কেন এই সতর্কতা? WHO জানিয়েছে এই সিরাপগুলির মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা বিষাক্ত এবং সম্ভাব্য মারাত্মক। দিন কয়েক আগেই আফ্রিকায় ৭০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। তারপরই এই কাশির সিরাপ ব্যবহারে সতর্কতা জারি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সেই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করল ডিসিজিআই। তবে গাম্বিয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ভারপ্রাপ্ত কমিটি এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে সেদেশে কিডনি সংক্রমণের কারণে যে ৭০টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে তার সঙ্গে ভারতে তৈরি কাশির সিরাপের যোগ রয়েছে। সিরাপ খাওয়াতেও সংক্রমণ এবং মৃত্যু বলেই রিপোর্টে উল্লেখ করেছে গাম্বিয়া ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ভারপ্রাপ্ত কমিটি।
এর আগে দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ডব্লিউএইচও-এর রেগুলেশন অ্যান্ড প্রি-কোয়ালিফিকেশন ডিরেক্টর রজেরিও গাসপারকে একটি চিঠিতে জানিয়েছে, কাশির সিরাপের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে সকল নির্দেশাবলী মেনে যথাযথ ভাবেই তা প্রস্তুত করা হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, সিরাপে ক্ষতিকারক রাসায়নিকের কোনও প্রমাণ ডিইজি বা ইজি পাওয়া যায়নি।
মেইডেন ফার্মার কাশির সিরাপগুলোর নমূণা পরীক্ষায় কোন ত্রুটি ধরা পড়েনি সংসদে উল্লেখ করেছে সরকার। সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO) রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার, হরিয়ানার সহযোগিতায় তদন্ত চালায় তাতে কোনও গাফিলতি ধরা পড়েনি। রাসায়নিক ও সার প্রতিমন্ত্রী ভগবন্ত খুবা বলেন, ওষুধগুলির নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের জন্য চণ্ডীগড়ের আঞ্চলিক ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: < গবীরদের জন্য মোদীর ‘নববর্ষের উপহার’, বিনামূল্যে রেশন পাবেন ৮১ কোটি মানুষ >
সেখান থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা গেছে সকল প্রকার নিয়ম মেনেই কাশির সিরাপগুলি তৈরি করা হয়েছিল। মিডিয়া রিপোর্ট তুলে ধরে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া চিঠিতে ডিসিজিআই জানায়, গাম্বিয়ায় শিশু মৃত্যু এবং কাশির সিরাপগুলির মধ্যে কোনও সরাসরি যোগসূত্র মেলেনি, এমনকি কিছু শিশু এই সিরাপ সেবন করেনি। যদিও ডিজিসিআইয়ের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের দাবিতেই অনড় থাকল গাম্বিয়া সরকার।
ডাব্লুএইচও এর আগে জানায়, “গাম্বিয়াতে যে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে তার সঙ্গে সরাসরি এই কাশির সিরাপের যোগসূত্রের সম্ভাবনা রয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে”। মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ভারতে তৈরি চারটি কাশির সিরাপ নিয়ে সাবধানতাও জারি করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এই চারটি সিরাপ হল প্রোমেথাজিন ওরাল সলিউশন, কোফ্যাক্সমালিন বেবি কফ সিরাপ, ম্যাকফ বেবি কফ সিরাপ এবং ম্যাগ্রিপ এন কোল্ড সিরাপ। এই সমস্ত সিরাপগুলি হরিয়ানার মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের তৈরি। WHO-এর সতর্কবার্তায় বলে যে চারটি পণ্যের প্রতিটির নমুনার বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, এই সিরাপগুলিতে ক্ষতিকারক ডায়েথিলিন গ্লাইকোল এবং ইথিলিন রয়েছে। যেগুলো সেবন করা মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
বিশেষ সতর্কতায় ডব্লিউএইচও বলেছে যে এই সমস্ত সিরাপ অনিরাপদ এবং সেগুলির ব্যবহারে বিশেষ করে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও বলা হয়েছে যে এই সিরাপ খেলে পেটে ব্যথা, বমি, ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন এবং কিডনির সমস্যার মত লক্ষণও দেখা দিতে পারে। যা অনেকক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যদিও WHO-এর এই অভিযোগকেই মান্যতা দিল গাম্বিয়া প্রশাসন।
কমিটি, এই সপ্তাহে পেশ করা তার প্রতিবেদনে, মেইডেন ফার্মাকে কালো তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে, এর পণ্যগুলি গাম্বিয়ার বাজার থেকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি জারি করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে সিরাপটিতে ডায়থাইলিন গ্লাইকল এবং ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া গেছে। কমিটি বলেছে যে ভারতের মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তারা তাদের ইমেল এবং কলগুলিতে সাড়া দিচ্ছে না। কমিটি মনে করে যে মেইডেন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড শিশুমৃত্যুর জন্য দায়ি এবং নিম্নমানের ওষুধ সেদেশে রপ্তানি করেছে।