ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলায় জাদুকরী বিদ্যা এবং তন্ত্রসাধনার অভিযোগে চার আদিবাসীকে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে দুজন যাজকসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করল ঝাড়খণ্ড পুলিশ। অভিযুক্তদের দাবি, নিগৃহীত আদিবাসীরা 'তন্ত্রসাধনা এবং জাদুকরী বিদ্যার' সাধনা করত। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রবিবার অভিযুক্তরা ঝাড়খণ্ডের নগর-সিসকারি গ্রামের চার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। যে লাঠিগুলি দিয়ে হত্যা করা হয়, সেগুলিও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
ইতিমধ্যে সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডেই গিরিডি শহরের ঝাঁঝরি মোহল্লায় তিন ব্যক্তিকে তন্ত্রসাধনা করার সন্দেহে শারীরিক অত্যাচার এবং মানুষের মলমূত্র খেতে বাধ্য করার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় আরও এক অভিযুক্ত আপাতত পলাতক।
আরও পড়ুন, একুশের সমাবেশে যাওয়ায় তৃণমূল কর্মীকে ‘পিটিয়ে খুন’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডাইনি সন্দেহে ৮৮ জনকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে ঝাড়খণ্ডে। নগর-সিসকারি গ্রামের ঘটনার প্রেক্ষিতে গুমলা থানার পুলিশ সুপার অঞ্জনি কুমার ঝা জানান, তদন্তে উঠে এসেছে যে মৃত ব্যক্তিরা 'ওঝা' এবং 'গুণিন' পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এসপি আরও বলেন, "এই মাসেই অসুস্থতার কারণে একটি ছেলে মারা যায়। বাসিন্দাদের সন্দেহ ছিল, এই চারজনই কিছু জাদু করে ছেলেটিকে মেরে ফেলেন।"
ঠিক কী হয়েছিল?
জানা যাচ্ছে, রবিবার ভোররাতে ৪.৩০ নাগাদ আট অভিযুক্ত ওই চারজনের বাড়িতে চড়াও হয়। তদন্তে প্রকাশ, ওই চারজন হলেন সুনা ওরাওঁ (৬৫), চম্পা ওরাওঁ (৭৯), ফাগনি ওরাইঁ (৬০) এবং পিরো ওরাইঁ। চারজনই গুমলা জেলার সিসাই থানার অন্তর্গত নগর সিসকারি গ্রামের বাসিন্দা। এই চারজনকে বাড়ি থেকে বের করে লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারা হয় যতক্ষণ না তাঁরা জ্ঞান হারান। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭ (দাঙ্গা), ১৪৮ (সশস্ত্র আক্রমণ), ১৪৯ (বেআইনি সমাবেশ) এবং ৩০২ (ইচ্ছাকৃত খুন) ধারা অনুযায়ী আক্রমণকারী অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়ুন, বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্যের পরামর্শ নেওয়া হয়নি: মমতা
পুলিশের তরফে জানানো হয়, সরকারিভাবে এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, নানারকম সচেতনতা বৃদ্ধি প্রচার সত্ত্বেও গত দুই মাসে ঝাড়খন্ডের সরাইকেলা, খুঁতি এবং গুমলায় ডাইনি সন্দেহে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক এবং মানবিক সচেতনতা সমিতির পক্ষ থেকেও ডাইনি সন্দেহে হত্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে।
Read the full story in English