৯ বছর আগে নাগরিকত্বের প্রমাণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তাঁর ছেলে। শেষমেশ চরম হতাশায় তিনি আত্মহত্যার পথে বেছে নিয়েছিলেন বলে দাবি পরিবারের। মাস তিনেক আগে একই নোটিশ পেয়েছেন ৮২ বছরের আকোল রানি নমশুদ্রা। তবে অবশেষে অশীতিপর বৃদ্ধার ভারতীয় হওয়ার স্বীকৃতি জুটেছে।
গোটা পরিবারের জন্য এটি ভীষণই একটি আনন্দের সময়। ৮২ বছর বয়সে 'ভারতীয়' হওয়ার স্বীকৃতি আদায় করে নিলেন অসমের এই বৃদ্ধা। অশীতিপর আকোল রানি নমশুদ্রার মেয়ে অঞ্জলি এর আগে ২০১৫ সালে নিজের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রমাণ-তথ্য নাড়াচাড়ার পর অবশেষে অসমের কাছাড় জেলার শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল (এফটি) জানিয়েছে, 'আকোল বিদেশি নন'।
শিলচর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হরিটিকর গ্রামের বাসিন্দা আকোল রানি নমশুদ্রা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে তলব করে। এর আগে ২০০০ সালে তাঁর নামে একটি মামলা হয়েছিল। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ তিনি অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছিলেন বলে অভিযোগ দায়ের করে মামলাটি করা হয়েছিল। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই অশীতিপর আকোলকে তলব করে ট্রাইব্যুনাল।
বৃদ্ধা আকোলের পাশাপাশি তাঁর দুই সন্তান অঞ্জলি ও অর্জুনকেও ২০১২ সালে তলব করে ট্রাইব্যুনাল। তাঁদেরও নাগরিকত্বের প্রমাণ দর্শানোর চিঠি ধরানো হয়েছিল। পরিবারের দাবি, নাগরিকত্বের প্রমাণ দর্শানোর ওই তলবি নোটিশ পেয়েই চূড়ান্ত হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন অর্জুন। সেই হতশা থেকেই শেষমেশ তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি পরিবারের।
আরও পড়ুন- বৈবাহিক ধর্ষণ কি অপরাধ? দ্বিধাবিভক্ত দিল্লি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে মামলার অনুমতি
কাছাড়ের অর্জুনের আত্মহত্যার খবরটি ২০১৪ সালে সেখানে লোকসভা ভোটের প্রচারে যাওয়া নরেন্দ্র মোদীর কানেও গিয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মোদী সেদিন অর্জুনের মৃত্যু ইস্যুতে সেই সময়ে অসমের কংগ্রেস সরকারকেই নিশানা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ''ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে অসম সরকার (কংগ্রেসের) মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। অর্জুনের মৃত্যু বৃথা যায়নি। অসমের ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা লক্ষাধিক মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি প্রাণ দিয়েছেন। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা এই মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেব না।''
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেদিনের সেই ভাষণই আজ মনে পড়ছে বৃদ্ধা আকোল রানি নমশূদ্রের মেয়ে অঞ্জলির। সেদিন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে মোদীর সেই বক্তব্যে পরিবার কিছুটা হলেও ভরসা পেয়েছিল। কিন্তু সেই ভরসায় ফের আঘাত গত ফেব্রুয়ারিতে। অঞ্জলির ৮২ বছরের মা আকোল রানি নমশূদ্রাকে ফের নাগরিকত্বের প্রমাণ দর্শানোর নোটিশ ধরাল ট্রাইব্যুনাল। এপ্রসঙ্গে অঞ্জলি রায় বলেন, ''আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছিল না। এত কিছুর পরেও এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে আমার ভাইয়ের ব্যাপারে কথা বলার পরেও মাকে আবার এর মধ্য দিয়ে যেতে হবে।''
স্থানীয় আইনজীবীরাই এই পরিবারটিকে সাহায্য করেছেন। ৫৫ বছরের অঞ্জলি রায় জানিয়েছেন, পারিশ্রমিক ছাড়াই আইনজীবীরা তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ জোগাড় থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করে দিয়েছেন। শেষমেষ ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন ৮২ বছর ধরে এদেশেই থাকা আকোল রানি নমশূদ্র।
Read full story in English