সার দিয়ে দাঁড়িয়ে মৃতদেহ বোঝাই মিনিট্রাক। আর সামনে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত এক বিজেপি সাংসদ। এহেন অসংবেদনশীল কাজ করে বিরোধীদের তোপের মুখে বিজেপি সাংসদ অলোক শর্মা। কংগ্রেস এই কীর্তিকে ‘নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ’ আখ্যা দিয়েছে। সোশাল মিদিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় এক ভিডিওয় দেখা গিয়েছে ‘মুক্তি বাহন’ নামে করোনা রোগীদের মৃতদেহ বোঝাই ছ’টি মিনি ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন সেই সাংসদ।
বিরোধীদের অভিযোগ, ‘শুধু ফটো তোলার জন্য সেই বাহনগুলোকে দাঁড় করানো হয়েছিল।‘ যদিও নোংরা রাজনীতি করছে কংগ্রেস। এই দাবি করে অভিযোগ খণ্ডন করেছেন সেই বিজেপি সাংসদ। তিনি বলেছেন, ‘আমি ওই বাহনগুলো জেপি হসাপাতালকে দিয়েছি মৃতদেহ বহন করতে। সংবাদমাধ্যমের সামনেই সেই বাহনগুলো মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল। আমি ওখানে ছিলাম সব ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা দেখতে।‘
দেখুন সেই ভিডিও:-
শেষ মুহুর্তের গুছিয়ে নেওয়ার ব্যস্ততা তুঙ্গে। ঝাড়খণ্ডে রাজমিস্ত্রির কাজ করা শ্রমিকের তখন বাড়ি ফেরার তাড়া, উত্তরপ্রদেশের শ্রমিক ব্যস্ত খাওয়ারের দোকানটিকে বন্ধ করতে। কিছু ফেলে যাচ্ছেন না তো? প্রশ্ন করছেন নিজেকেই। এক বছরের আগের স্মৃতি এখনও টাটকা। তাই যা ফেলে রেখে যাবেন তা কেবল সেই লকডাউন স্মৃতি।
দিল্লিতে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘আটকে পড়ার ভয়ে’ নিজভূমে ফেরার হিড়িক পড়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে। ২০২০ এর লকডাউন স্মৃতি এতটাই ক্ষতবিক্ষত, তার পুনরাবৃত্তি চায় না কেউই। অতএব রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাসে তখন লম্বা লাইন। আতঙ্কের পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে হাত জোড় করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। করজোরে আবেদন করলেন শ্রমিকদের কাছে ফিরে না যাওয়ার। আশ্বাস দিলেন পরিস্থিতি অনুকূলই থাকবে। কিন্তু স্মৃতি যে অন্য ডাক দেয়!
আনন্দ বিহার বাস স্ট্যান্ডে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড় ভয় ধরাচ্ছে। লোটাকম্বল নিয়েই হাজির হয়েছে অনেকে। কেউ উত্তরপ্রদেশ, কেউ বিহার কেউ আবার ঝাড়খণ্ডে ফিরবে। প্রশ্ন করতেই সমস্বরে জবাব এল, ‘আমরা আবার আটকে পড়তে চাই না।” বেশিরভাগেরই একটাই কথা গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার আস্বাদ চান না কেউ। পরিবারের কাছে ফেরাটাই লক্ষ্য। বসন্ত কুঞ্জে মিস্ত্রির কাজ করা মহম্মদ মুমতাজ আনসারি (২০) বলেন, “আমার বাড়ি ধানবাদে। ওখানেই ফিরে যাচ্ছি। লকডাউনে কোথাও কোনও কাজ থাকে না। এবার আগের থেকেও সংক্রমণ বেশি। কোনও হাউসিং সোসাইটিতে কাজ করতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।”
আনসারি ভাগ করে নিলেন লকডাউনের তিক্ত অভিজ্ঞতা। কুড়ি বছরের যুবা বলে চলেন, “গত বছর দিল্লিতে একবেলা খাওয়ার জন্য জীবন পাত করতে হয়েছিল। কোথাও এক কিলো ময়দা পেয়েছি, বাকি খাওয়ার পেয়েছি অন্য কোথাও। বাড়ির থেকে টাকা চেয়ে পাঠাতে হয়েছিল। এক বছর যা জমিয়েছিলাম সেই টাকাই খরচ করতে হয়েছে। যতক্ষণ না পরিস্থিতি ঠিক হচ্ছে আর ফিরব না।”