ইন্ট্রান্যাজাল বা নাকের মধ্যে কোভিড টিকা দেওয়ার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করল ভারত বায়োটেক। প্রথম পর্বের এই পরীক্ষা শুরু হল বুধবার। সূত্রের খবর, প্রথম দিনেই ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পটনা, চেন্নাই এবং নাগপুরেও খুব শীঘ্রই এই পরীক্ষা শুরু করতে চলেছে ভারত বায়োটক। সবুজ সঙ্কেত পেলেই নাগপুরে ভারত বায়োটেক দফতরে এই পরীক্ষা শুরু করবে বলে জানা গিয়েছে। দেশ জুড়ে ১৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে পরীক্ষামূলক এই পর্বে এই টিকা দেওয়া হবে। যদি পরীক্ষায় সফল হয় এই টিকা, তা হলে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তা একটা ‘গেম চেঞ্জার’ হবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। এখনও পর্যন্ত যত টিকা দেওয়া হয়েছে দেশে, সব ক'টি ক্ষেত্রেই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই টিকার ক্ষেত্রে কোনও সিরিঞ্জই লাগবে না। কেন না নাকের ভিতর স্প্রে করা হবে টিকাটি।
‘ইন্ট্রান্যাজাল’ এই টিকা কথা আগেই জানিয়েছিলেন ভারত বায়োটেক-এর প্রধান কৃষ্ণ এল্লা। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই টিকা তৈরির কথা জানিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন, দ্রুত এই টিকা নিয়ে পরীক্ষা শুরু করবেন তাঁরা। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ হাজির। বুধবার থেকেই শুরু হয়ে গেল টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ। এল্লার দাবি, গবেষণায় দেখা গিয়েছে নাক দিয়ে টিকার বিষয়টি সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। কারণ নাকের মধ্য দিয়েও করোনার সংক্রমণ ঘটে।
টিকাকরণের জন্য যে ২টি সংস্থার টিকাকে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র, তার মধ্যে ভারত বায়োটেক-এর কোভ্যাক্সিন অন্যতম। দু’টো ডোজ দেওয়া হচ্ছে এই টিকার। নাকের ভিতর দিয়ে যে টিকা দেওয়া হবে, সে ক্ষেত্রেও দুটো ডোজই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন এল্লা।
এদিকে, টিকাকরণ চলছে কিন্তু এরই মাঝে ফের বাড়ল করোনার দাপট। মহারাষ্ট্র এবং দেশের পাঁচটি রাজ্যে ফের করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ভারতের গত পাঁচ মাস ধরে অবিশ্বাস্যভাবে কমেছিল আক্রান্তের সংখ্যা। এখন যে রাজ্যে সংক্রমণ নতুন করে শুরু হচ্ছে সেখানেও কিন্তু একেবারে কমে গিয়েছিল করোনা সংক্রমণ। কিন্তু বর্তমানে দেশে সংক্রমণের মাত্রা ইতিমধ্যে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে এটা স্পষ্ট যে দেশে হার্ড ইমিউনিটি এখনও হয়ইনি।
পরীক্ষার হার কিন্তু কমেনি। কিন্তু একসময় দৈনিক যে সংখ্যা নেমেছিল হাজারে তা এখন ফের পেরিয়েছে ১৪ হাজার। লকডাউন পুরোপুরি উঠে যাওয়ার পর থেকেই স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, চলছে কৃষি আন্দোলন। সেখানে নেই কোনও সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরার বালাই। সেরোসার্ভের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ ইতিমধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। পরীক্ষার মাধ্যমে যা সনাক্ত করা কঠিন। আগের থেকে সেই সংখ্যা কম হলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে অনেকটাই।
উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির সাম্প্রতিক একটি সেরোসার্ভেতে দেখা গেছে যে কমপক্ষে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে দেশব্যাপী এমন কোনও সমীক্ষা নেই যা দেশের বৃহৎ অংশের জন্য তুলনীয় সংখ্যা দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, তামিলনাড়ুতে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে যে জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশই সংক্রামিত হতে পারে করোনা ভাইরাসে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলায় মহারাষ্ট্রের অমরাবতী ও অচলপুরে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন জারি ছিল।
সেইসঙ্গে পুণে ও নাসিকে জারি করা হয়েছে নাইট কার্ফু। দেশের অন্যান্য রাজ্যে করোনা সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও মহারাষ্ট্রে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। উদ্বেগ বাড়িয়েছে পঞ্জাবের সংক্রমণবৃদ্ধিও।