Online Class during Lockdwon: লকডাউন ও করোনা প্রকোপে দেশব্যাপী বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রায় দেড় বছর স্কুল, ক্লাস, স্কুলড্রেস, সহপাঠী এবং ছুটির ঘণ্টার থেকে দূরে পড়ুয়ারা। সংক্রমণের ভয়ে বাতিল হয়ে চলেছে একটার পর একটা বোর্ড পরীক্ষা। অনলাইন ক্লাস এখন শিক্ষা গ্রহণের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু প্রত্যেন্ত গ্রাম, যেখানে এখনও রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ বিলাসিতা মাত্র। তাহলে কী দেশের সেই প্রান্তের পড়ুয়ারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত থাকবেন? না, তেমনটা হতে দিতে নারাজ কাশ্মীরের সরকারি স্কুলের শিক্ষক মনজুর আহমেদ চক।
বারামুলার এই মনজুর স্যার এখন প্রতিবন্ধকতা টপকে সপ্তাহে পাঁচ দিন নিয়ম করে চ্যাপ্টার-সহ সিলেবাস আপলোড করে চলেছেন রাজ্য শিক্ষা দফতরের পোর্টালে।সোমবার থেকে শুক্রবার কী তাঁর রুটিন? গ্রাম থেকে বেরিয়ে মোট ৪ কিমি চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পাহাড়ে চড়েন তিনি।সেই পাহাড়ের ওপরে যেখানে নেটওয়ার্ক ভালো, সেখানেই বসে পড়েন ওই শিক্ষক। এরপর চলতে থাকে শিক্ষা দফতরের ই-লার্নিং অ্যাপে সিলেবাস আপলোড। সেই সিলেবাসের সঙ্গে দেওয়া থাকে নোট্স।
ঠিক সেই সময়ে বারামুলার কোনও এক গ্রামে পড়ুয়ারা খোলা মাঠে বসে থাকেন। হাতে বাবা কিংবা মায়ের স্মার্ট ফোনে। মাঠের যে প্রান্তে একটু নেটওয়ার্ক ভালো, সেখানেই বসে চলে স্যারের আপলোড করা নোট্স-সহ সিলেবাস ডাউনলোড। নেটওয়ার্কের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে হাতে নোট্স চলে এলে মাঠে বসেই খানিকক্ষণ চোখ বুলিয়ে নেওয়া। তারপর বাকিটা হোমটাস্ক হিসেবে ঘোরে এসে পড়া। এভাবেই মনজুর স্যারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনলাইন এবং অফলাইন ক্লাস করে চলেছেন বারামুলার লিম্বা গ্রামের কয়েক শতাধিক পড়ুয়া।
শ্রীনগর থেকে ৯০ কিমি দূরে মনজুর স্যারের গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে সেখানে এখনও রাস্তা তৈরি হচ্ছে। গ্রামে ল্যান্ডলাইন সংযোগ পর্যন্ত নেই। এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই নিজের সঙ্কল্পে মগ্ন সেই স্যার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে মনজুর আহমেদ বলেছেন, শিশুদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া আমার একটা লড়াই। সেই লড়াইয়ের অংশ আমার ছাত্ররা।
যে গ্রামে মনজুরের বাস, সেই লিম্বারে কমবেশি ৬৫০ পরিবারের বাস। কিন্তু সেই গ্রাম এতটাই প্রত্যন্ত যে অনলাইন ক্লাস, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সেখানে মরুদ্যান। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক ছাত্রের বাবা বলেন, ‘আমাদের গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে অনেক বন্যপ্রাণী আছে। ভাল্লুকও আছে। সেই ভয়ে কাউকে একা ছাড়ি না। এমনকি সন্ধ্যার পর কাউকে আসতেও দিই না।‘
তবে ন্যূনতম শিক্ষার জন্য গ্রামবাসীদের অনেকে বড় শহরে চলে যাচ্ছে। এমন বিলাপ শোনা গিয়েছে সেই অভিভাবকের গলায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন