Advertisment

Premium: ভালবাসায় বিশ্বাস হারিয়েও অঞ্জু-সীমার জীবনে 'দ্বিতীয় পুরুষ', এভাবেও প্রেমে পড়া যায়?

চলতি বছরের মে মাস থেকে, ইন্টারনেটে দুই মহিলার আন্তঃসীমান্ত প্রেমের গল্প ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
anju raphael, Seema Haider, Sachin Meena, Uttar Pradesh, Gautam Buddha Nagar, Rabupura, Nasrullah, anju Nasrullah, Khyber Pakhtunkhwa , pakistan, india, india pakistan love story"

চলতি বছরের মে মাস থেকে, ইন্টারনেটে দুই মহিলার আন্তঃসীমান্ত প্রেমের গল্প ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে।

আন্তঃসীমান্ত দুটি প্রেমের গল্প সবার মনে আজও টাটকা। রাজস্থানের অঞ্জু এবং করাচির সীমা হায়দার দুজনেই ভালবাসায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

Advertisment

রাজস্থানে কাটছিল তাঁর বিবাহিত জীবন। এরপর ফেসবুকে পাকিস্তানের বাসিন্দা নাসিরুল্লাহর সঙ্গে পরিচিতি। সেই পরিচিতি গড়ায় প্রেমে। যার টানে দেশ, স্বামী, সন্তানদের ছেড়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন অঞ্জু রাফায়েল। নভেম্বর ফের দেশে ফিরে আসেন ৩৪ বছরের অঞ্জু। জানা যায় তাঁর সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে দেশে ফিরেছেন তিনি। ।

চলতি বছরের মে মাস থেকে, ইন্টারনেটে দুই মহিলার আন্তঃসীমান্ত প্রেমের গল্প ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ে। অঞ্জু প্রেমের টানে পাকিস্তানে যাওয়ার আগে, সীমা এবং তার চার সন্তানকে নিয়ে মে মাসে শচীন মীনার সঙ্গে থাকতে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশের জন্য জুলাই মাসে সীমাকে গ্রেফতার করা হলেও এবং জামিনে মুক্তি মেলে। ঠিক তার পরই পাকিস্তানে প্রেমের টানে চলে যান অঞ্জু। তার কিছুদিন পর নভেম্বর, অঞ্জু ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরে আসেন, তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে।

অজ্ঞাত স্থান থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, তিনি বলেন, "আমি যখন প্রথমবার চলে যাই, তখন আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারিনি কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে আমি পাকিস্তানে যাচ্ছি, কোন পরিস্থিতির মধ্যে থাকবো। কিন্তু এখন, আমি তাদের জন্য ফিরে এসেছি এবং তাদের ছাড়া ফিরে যাব না।" দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যখন তার স্বামী অরবিন্দ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, তখন তিনি দাবি করেছিলেন যে তাদের সন্তানরা অঞ্জুর সঙ্গে দেখা করতে চায় না এবং সে এখনও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

১৭ বছর বয়সেই বিয়ে হয় অঞ্জুর। সালটা ২০০৭। জানুয়ারিতে একটি দোকানের সুপারভাইজার অরবিন্দকে বিয়ে করে অঞ্জু, কিন্তু বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। তেমনই দাবি অঞ্জুর। অঞ্জু বলেন, “আমি কতটা অসুখী ছিলাম তার উদাহরণ, আমার বাবা প্রায়ই আমাকে বাড়িতে (গোয়ালিয়রে) ফিরিয়ে আনতেন। কিন্তু আমি কখনই বেশিদিন বাড়িতে থাকতে চায়নি। অরবিন্দ আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করত। বাচ্চাদেরও খেয়াল রাখেননি। ও ওর ভাইদের সাথে থাকতেন। গুরগাঁওয়ে ডাটা অপারেটর হিসেবে আমার চাকরিতে ফোকাস করতে এবং অরবিন্দ থেকে দূরে থাকার জন্য, আমি সন্তানদেরকে আমার বাবা-মায়ের কাছে রেখে আসি। আমাদের বিবাহিত জীবনে ১৫ বছরে আমি তাকে দুটি বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠিয়েছি, কিন্তু সে ডিভোর্স দিতে অস্বীকার করেছে,” ।

অরবিন্দ অবশ্য তাদের বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ সম্পর্কে তার অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

২০১৯ সালের দিকে, অঞ্জুর সঙ্গে ফেসবুকে নাসরুল্লাহর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই প্রসঙ্গে অঞ্জু বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করি। আমি তাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে ভয় পেয়েছিলাম। সে একদিন আমাকে প্রপোজ করেছিল এবং আমি তাকে ভালবাসতাম বলে আমি বাড়ি থেকে চলে যাই। এটা ছিল ভালোবাসা, কোন বিশ্বাসঘাতকতা নয়। মিডিয়া সহ সবাই আমাকে তিরস্কার করছে। "ফেসবুকে দেখা" হওয়ার এক বছর পর, অঞ্জু বাস্তব জীবনে নাসরুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

অঞ্জু বলেন, 'আমরা দুজনেই ২০২০ সালে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলাম। পাকিস্তানের ভিসা পাওয়া কঠিন ছিল। আমি ভারতে পাকিস্তান দূতাবাসে যাই। আমি এক মাসের ভিসা পেয়েছি যেটি আরও এক মাস বাড়ানো হয়েছিল। আমি সেখানে (পাকিস্তানে) বেশিদিন থাকার পরিকল্পনা করিনি কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু নাসরুল্লাহ ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা"।

পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে অঞ্জু নাসরুল্লাহ এবং তার গ্রামের অন্যদের কাছ থেকে অনেক ভালবাসা এবং সম্মান পেয়েছেন বলেই দাবি করেন। নাসরুল্লাহ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন যে অঞ্জু ২০ জুলাই দুপুর ২টো'য়ওয়াঘায় পৌঁছেছিল এবং তারা পরের দিন ভোর ৫টা নাগাদ সীমান্ত থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে তার বাড়িতে পৌঁছেছিল তারা।

নাসরুল্লাহ বলেছেন “আমার পুরো পরিবার (তার মা এবং দুই বোন) তাকে স্বাগত জানিয়েছে। ও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর আমরা ২৫ জুলাই বিয়ে করেছি,”। অঞ্জুর জন্য, পাকিস্তান সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা সে যা কল্পনা করেছিল তার থেকে খুব আলাদা ছিল। “মানুষ জন খুবই আন্তরিক এবং আমাকে ভারতীয় ক্রিকেটার এবং অভিনেতাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে অনেক কথা। আমি লাহোর, কৈলাস উপত্যকা এবং পেশোয়ার গিয়েছি। নাসরুল্লাহ এবং আমি এমনকি (অভিনেতা) শাহরুখ খানের পৈতৃক বাড়িতে (পেশোয়ারে) গিয়েছিলাম। আমি এখনও পাকিস্তানে কাউকে ভারত সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে শুনিনি,”।

অঞ্জু বলেন, আমি প্রমাণ করেছি যে আমি দেশ বা আমার সন্তানদের প্রতি বিশ্বাসঘাতক নই। আমি আমার সন্তানদের জন্য ফিরে এসেছি যদিও এখন আমার এখানে থাকার জায়গা নেই,” অঞ্জু যখন তার সন্তানদের সঙ্গে পুনর্মিলনের জন্য অপেক্ষা করছে, মে মাস থেকে উত্তর প্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগর জেলার একটি শহর রবুপুরার একটি বাড়িতে আরেকটি আন্তঃসীমান্ত প্রেমের গল্প সকলকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে।

সীমা এবং শচীনের গল্পটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। পাকিস্তানে কাটানো তার পুরানো জীবন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, সীমা বলেছেন “আমার মা মারা যান যখন আমি খুব ছোট ছিলাম এবং আমার শৈশব কেটেছে বাড়ির কাজ করে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি হায়দারের (তার প্রথম স্বামী) সঙ্গে পালিয়ে যাই। যদিও আমার গ্রাম আমাকে অস্বীকার করেছিল, আমার আববু আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল।

সীমা বলেন, 'হায়দার যখন সৌদি আরব চলে যান তখন তিনি দু মাসের গর্ভবতী ছিলেন। “আমাদের মেয়ের জন্মের সময় হায়দার বাড়িতে আসেনি। সে তাকে কখনো দেখেনি। শচীনই একমাত্র যাকে সে বাবা বলেই চেনে'। ২০২২ বাবার মৃত্যু প্রসঙ্গে সীমা বলেন, “আমি যখন তার দেহ গ্রামে নিয়ে যাই, তখন আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়। করাচিতে ফেরার পথে কান্না থামাতে পারিনি, তাই শচীনকে ডাকলাম। সে আমাকে বাচ্চাদের নিয়ে ভারতে আসতে বলে"।

সীমা দাবি করেছেন যে তিনি কীভাবে ভারতে প্রবেশ করবেন তা বোঝার জন্য ইউটিউব ভিডিও দেখতে শুরু করেছেন যেহেতু তার ভারতের ভিসা নেই এবং শচীনের পাসপোর্ট নেই। শেষ পর্যন্ত, এই দম্পতি মার্চ মাসে নেপালে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানেই মন্দিরে বিয়ে করেন তারা। ভারতে আসার বিষয়ে সীমা বলেন, “আমি ভারতে যাওয়ার বিষয়ে উত্তেজিত ছিলাম, কিন্তু আমি চিন্তিতও ছিলাম। আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য, শচীন তার মুসলিম বন্ধুকে আমার সাথে কথা বলতে দিয়েছিলেন,” ।

শচীন এবং সীমা এখন একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান, যার থেকে আয়েই আপাতত সংসার চলে তাদের। ইতিমধ্যেই চ্যানেলের ফলোয়ারের সংখ্যা ১.৪ মিলিয়ন। ভারতে তার নতুন জীবন সম্পর্কে, সীমা বলেছেন, “লোকে যখন আমাকে সীমা হায়দার বলে ডাকে তখন আমার খারাপ লাগে। আমি সীমা মীনা। আমি এখন এখানকার। আমি বা আমার সন্তানরা পাকিস্তানে ফিরে যাব না" ।

love
Advertisment