Advertisment

৩৭ কোটির বিমার টাকা হাতাতে নিজের মৃত্যুর গল্প! তদন্তে কেঁচো খুঁড়তেই কেউটে

Maharashtra: পুলিশ সুপার মনোজ পাতিল বলেন, ‘বিমার টাকা দাবি সংক্রান্ত দরখাস্ত পড়তেই বিমা সংস্থার সন্দেহ হয়।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Maharashtra Man, Fake Death

পুলিশি হেফাজতে ধৃত ৫ জন।

Maharashtra: সাপের ছোবলকে মারণাস্ত্র বানিয়ে নিজের মৃত্যুর চিত্রনাট্য। উপলক্ষ্য জীবন বিমার সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা হাতানো। কিন্তু বিধি বাম, বিমা সংস্থার পাল্টা তদন্তে সেই শ্রীমান এখন চার শাগরেদ-সহ শ্রীঘরে। এমনই এক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলা। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত প্রভাকর ওয়াঘচুরে বেশ কয়েক বছর মার্কিনবাসী ছিলেন। সেই সময় মার্কিন এক বিমা সংস্থার অধীনে ৫ মিলিয়ন ডলার জীবনবিমা করিয়েছিলেন। ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছর জানুয়ারিতে দেশে ফেরেন কীর্তিমান। বিমার সেই টাকা হাতাতেই ভবঘুরে এক ব্যক্তিকে কেউটেরর ছোবল খাইয়ে খুন করেন তিনি।

Advertisment

ঠাণ্ডা মাথায় সেই মৃতদেহ নিজের বাড়িতে এনে চার শাগরেদের সাহায্যে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হসাপাতালে পাঠান। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেই ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করে হাসপাতাল। হাসপাতালের তরফে ওয়াঘচুরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর রিপোর্ট পাঠানো হয় স্থানীয় রাজুর থানায়। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে নামলে ওয়াঘচুরের ভাইপো প্রবীণ কাকার দেহ শনাক্ত করেন। ওয়াঘচুরের পরিচিত হিসেবে হর্ষদ লাহামগেও দেহ শনাক্ত করেন। পাশাপাশি হাসপাতাল মৃত্যুর কারণ হিসেবে সাপের কামড়কে নথিবদ্ধ করে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অর্থাৎ ওয়াঘচুরের অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ রিপোর্ট ফাইল হয় থানায়।   

এরপরেই চিত্রনাট্যে পট পরিবর্তন। বিমার টাকা দাবি করে মার্কিন সেই সংস্থায় দরখাস্ত জমা পড়ে। বিমা সংস্থার তরফে আহমেদনগর কমিশনারেটে যোগাযোগ করা হয়। চেয়ে পাঠানো হয় ওয়াঘচুরে মৃত্যু সংক্রান্ত নথি। পুলিশ এবার তাঁর গ্রামের বাড়ি যায়। পড়শিরা বলে সাম্প্রতিক কালে সাপের কামড়ে কোনও গ্রামবাসীর  মৃত্যুর খবর তাঁরা শোনেনি। তবে গত এপ্রিল মাসে ওয়াঘচুরের বাড়ির সামনে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। পড়শিদের এই বয়ানে পুলিশের সন্দেহ হয়।

ওয়াঘচুরের আত্মীয়দের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তখন খোঁজ পড়ে তাঁর ভাইপো এবং পরিচিত লাহামগের। ওয়াঘচুর ঘনিষ্ঠ লাহামগে পুলিশকে বলেন, ‘কোভিডে মৃত্যু হয়েছে প্রবীণের।‘ পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। এবার তাঁরা অভিযুক্তের ফোন কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা শুরু করে। সেই রেকর্ড ঘেঁটেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। দিব্যি বেঁচে আছেন প্রভাকর। শুধু তাই নয় হাসপাতালে দেহ শনাক্তের সময় তিনি নিজেকে প্রবীন অর্থাৎ মৃতের ভাইপো দাবি করেন। এরপরেই আটক করা হয় প্রভাকরকে।‘

এই বিষয়ে আহমেদনগরের পুলিশ সুপার মনোজ পাতিল বলেন, ‘বিমার টাকা দাবি সংক্রান্ত দরখাস্ত পড়তেই বিমা সংস্থার সন্দেহ হয়। কারণ এর আগে একবার ২০১৭ সালে স্ত্রীকে মৃত দেখিয়ে তাঁর নামে থাকা বিমার টাকা হাতানোর চেষ্টা করেছিল প্রভাকর। পরে জানা গিয়েছিল, বেঁচে আছেন অভিযুক্তের স্ত্রী। এই ঘটনায় একইভাবে তদন্তে নেমে আমরা জানতে পেরেছি এক সাপুড়ের থেকে সেই কেউটে এনে ভবঘুরে এক ব্যক্তিকে কামড় খাইয়ে খুন করেছেন প্রভাকর। ঘটনাচক্রে সেই ভবঘুরে ব্যক্তি প্রভাকরের মতোই দেখতে ছিলেন। তাই হসাপাতালে শনাক্তকরণে সমস্যা হয়নি। কারণ সেখানে মূল অভিযুক্ত মৃতের আত্মীয় হিসেবে দেহ শনাক্ত করতে এগিয়ে এসেছিলেন।‘

পুলিশি তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, এই দুষ্কর্মের কয়েকদিন আগে থেকেই অন্যত্র থাকা শুরু করেছিলেন প্রভাকর। তাঁকে এই চিত্রনাট্য রুপায়নে সাহায্য করেছে দুই শাগরেদ সন্দীপ তালেকর এবং প্রশান্ত চৌধুরী। তাঁরাই সেই ভবঘুরেকে খুঁজে বের করেন,  হর্ষদ লাহামগেও বুঝিয়ে এই কাজে শাগরেদ বানান এবং সাপ জোগার করেন। জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ৫ জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি জেরায় বাকি অভিযুক্তরা স্বীকার করেছেন, মোটা টাকার টোপ দিয়েই এই কাজে তাঁদের যুক্ত করেছিলেন প্রভাকর।  

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Maharashtra Man Fake Death Insurance Claim
Advertisment