ফের সংবাদ শিরোনামে দিল্লি, ফিরল শ্রদ্ধাকাণ্ডের নৃশংসতা। এখনও কাটেনি শ্রদ্ধাকাণ্ডের রেশ। তার মাঝেই ফের একই ধাঁচে নিজের প্রেমিকাকে ঠান্ডা মাথায় ডেটা ক্যাবেল দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে ফ্রিজের ভিতর ভরে রাখার ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে মৃত তরুণীর নাম নিক্কি যাদব। বয়স ২৫।
ফের একবার শিরোনামে দিল্লি! রাজধানীর বুক কাঁপিয়ে দিয়েছিল কিছুদিন আগের শ্রদ্ধা ওয়ালকরের খুনের ঘটনা। প্রেমিকের হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছিল তরতাজা এক তরুণীকে। খুনের পর শ্রদ্ধার দেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটে ফ্রিজে লুকিয়ে রাখার পর জঙ্গলে ফেলে দিতে গিয়ে শেষমেশ ধরা পড়েছিল তাঁর প্রেমিক তথা অভিযুক্ত আফতাব পুনাওয়ালা। আর তার রেশ কাটতেই না কাটতেই রাজধানীর নজফগড়ের এক ধাবার ফ্রিজারে উদ্ধার হয়েছে ২৫ বছরের নিক্কি যাদবের দেহ।গ্রেফতার করা হয়েছে ধাবার মালিক তথা নিক্কির প্রেমিক সাহিল গেহলটকে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে, মৃতার দেহ দেখে বোঝা যাচ্ছে কয়েকদিন আগেই খুন করা হয়েছিল তাঁকে। বেশ কিছুদিন ধরে সম্পর্কে থাকলেও নিক্কিকে না জানিয়ে অন্য এক মহিলাকে বিয়ের পরিকল্পনা করে এগোচ্ছিল অভিযুক্ত। সেই খবর জানতে পারাতেই প্রেমিকাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে প্রেমিক সাহিল। নিজের প্রেমিকাকে ডেটা কেবলের তার জড়িয়ে পেঁচিয়ে খুন করেছে সাহিল বলেই মনে করছে পুলিশ। তরুণীর দেহ উদ্ধারের পর তা ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের দাবি, সাহিল ও নিক্কির মধ্যে মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল, কিন্তু সাহিল কাউকে কিছু না জানিয়ে ১০ই ফেব্রুয়ারি অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন। নিক্কি যখন বিষয়টি জানতে পারে, তখন নিক্কি তাতে তীব্র আপত্তি জানায়। এমন কী বিয়ের জন্য সাহিলকে জোর করতে থাকেন। গত ৮ এবং ৯ ফেব্রুয়ারি সাহিল নিক্কিকে কাশ্মীরি গেট এলাকায় দেখা করতে ডাকেন। পুলিশের দাবি, এদিনই দুজনের মধ্যে প্রবল তর্কাতর্কি হয় এবং এরপরই সাহিল নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর নিক্কির মৃতদেহ গাড়িতে করে এনে ফ্রিজের ভিতর লুকিয়ে রাখে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এই হত্যাকাণ্ডের পর সাহিল ১০ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করে। পুলিশ বলছে, নিক্কি হরিয়ানার বাসিন্দা। দিল্লিতে পড়াশোনা করত। তার পরিবার হরিয়ানায় থাকে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে সাহিলের ধাবার ফ্রিজের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয় নিক্কির মৃতদেহ।
সাহিলকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য রাও তুলারাম মেমোরিয়াল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পুলিশ এখন জানতে চাইছে, কেন সাহিল মেয়েটিকে হত্যার পর তার লাশ প্রায় ৪-৫ দিন ফ্রিজে লুকিয়ে রেখেছিল? সাহিল কি শ্রদ্ধা ওয়াকারের মতো এই মেয়েটির লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলার পরিকল্পনা করেছিল? দিল্লি পুলিশ এই সকল বিষয়ে সাহিলকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সাহিল গ্রেটার নয়ডার গালগোটিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ফার্মা কোর্সে ভর্তি হন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকিও ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হয়। দুজনেই গ্রেটার নয়ডায় একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন । লকডাউন কালে সামান্য দূরত্ব বাড়ে।
লকডাউন পর্ব মেটার পর দুজনেই আবার উত্তম নগর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, সাহিলের পরিবার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের ঠিক করে। সাহিল ওই মেয়েকে বিয়ে করতে চায়নি, কিন্তু তার পরিবারের চাপে সে বিয়ে করতে রাজি হলেও নিক্কির কাছে সে বিষয়টি লুকিয়ে রাখে।
৯ ফেব্রুয়ারি সাহিল নিকিকে তার সঙ্গে দেখা করতে ডেকেছিলেন। নিকি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে উভয়ের মধ্যে প্রবল ঝগড়া বাঁধে হয় এবং সাহিল তার গাড়িতে রাখা ডেটা কেবিলের তার জড়িয়ে নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার মৃতদেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে সাহিল এবং নিক্কি যাদব দুজনেই দুজনকে ২০১৮ সাল থেকে একে অপরকে চিনতেন। দুজনেই কোচিং সেন্টারে একসঙ্গে কোচিং করতেন। এরপর বেশ কিছুদিন লিভ-ইন রিলেশনে ছিলেন দুজনই। দুজনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। সাহিলের পরিবার অন্য কারুক সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেছিল।