সীতা ইলিয়ার পাথর দিয়ে নির্মাণ হবে রাম মন্দির। সীতা ইলিয়া শ্রীলঙ্কার সেই জায়গা, যেখানে সীতাকে বন্দি করে রেখেছিল রাবণ। এমনটাই প্রচলিত আছে। পড়শি দেশের হাই কমিশনার মিলিন্ডা মোরাগডা ভারতকে সেই পাথর উপহার দেবে। এমনটাই বিদেশ মন্ত্রক সুত্রের খবর।
চলতি সপ্তাহেই সরকারি ভাবে এই খবর জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ভারতীয় হাই কমিশনার। তিনি ট্যুইটে লেখেন, ‘সীতা ইলিয়ার একটি পাথর অযোধ্যার রাম মন্দিরের একটা স্তম্ভ তৈরিতে ব্যবহার হবে। ইন্দো-লঙ্কা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বহন করবে সেই পাথর।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার সীতা ইলিয়ায় একটি মন্দিরে দেবী রূপে পূজিত হন সীতা। এখানেই নাকি বন্দি ছিলেন তিনি এবং প্রতিদিন রামের উদ্দেশে পুজো করতেন। তাঁকে মুক্ত করতে প্রার্থনা করতেন।
মকর সংক্রান্তির পরেরদিন, শুক্রবার দেশজুড়ে রামমন্দিরের জন্য অনুদান সংগ্রহ শুরু করল রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। প্রথম ব্যক্তি হিসাবে ৫ লক্ষ ১ টাকা অনুদান দিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের খবর অনুযায়ী, সরকারের তরফে নির্মাণ কাজ এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশোনা করার জন্য তৈরি করা এই ট্রাস্টকে অনুদান দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমার, গোবিন্দ দেব গিরি, ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ এবং আরও অন্যান্য প্রতিনিধিরা এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে কোবিন্দের কাছে মন্দির নির্মাণের জন্য অনুদান চান। অলোক কুমার জানিয়েছেন, “তিনিই হলেন দেশের প্রথম ব্যক্তি যাঁর কাছে এই অনুদান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে গিয়েছিলাম আমরা। তিনি ৫,০০,০০১ টাকা অনুদান দিয়েছেন।”
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সংঘ পরিবারের শাখা সংগঠনগুলি অনুদান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে দেশজুড়ে। শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির নিধি সমর্পণ অভিযান নামে এই কর্মসূচি আজ, শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজ্যের হিন্দু পরিবারের কাছে তাঁরা যাবে মন্দির নির্মাণের জন্য দান সংগ্রহ করতে। এই ট্রাস্টের তত্বাবধানে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে নির্মাণ-সহ প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখভালের জন্য। কমিটিতে রয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্যসচিব নৃপেন্দ্র মিশ্র, প্রাক্তন বিএসএফ ডিজি কে কে শর্মা।
অযোধ্যায় মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণে আনুমানিক খরচ পড়বে ১১০০ কোটি টাকা। শুধুমাত্র মন্দিরের জন্য খরচ হবে ৩০০-৪০০ কোটি। এদিন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান ১ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন অনুদান হিসাবে। বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী পাটনায় মন্দির নির্মাণের অনুদান সংগ্রহ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
অপরদিকে, অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির জন্য আর্থিক অনুদান দিলেন গায়ক সোনু নিগম (Sonu Nigam)। সোমবার লখনউতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) সঙ্গে দেখা করেন গায়ক। সেখানেই তাঁর হাতে রাম মন্দিরের নির্মাণের জন্য টাকা তুলে দেন। সোনুর এমন সৌজন্যমূলক সাক্ষাতে আপ্লুত যোগীও। আর সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের তরফে সেই মুহূর্তের ছবি প্রকাশ্যে আসতেই, নেটজনতার প্রশ্ন, তাহলে কি সোনু নিগম বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন?
লকডাউনের পর নিউ নর্ম্যালে মাস খানেক দুবাইয়ে ছিলেন সোনু নিগম। যেখানে কিনা তাঁর ছেলে পড়াশোনা করে। দিন কয়েক আগেই মুম্বইয়ে ফেরেন বলিউড গায়ক। সেখান থেকেই রবিবার অযোধ্যায় যান। পৌঁছেই হনুমানগড়িতে রাম মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন। নিষ্ঠা নিয়ে সেখানকার সন্ধ্যা আরতিতে অংশগ্রহণ করেন। তিনি জানান যে, তাঁর ইচ্ছে ছিল রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি ইট উপহার দেওয়ার, দেশে ফিরে আগে সেটাই করেছেন।
মন্দির থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিকবশতই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হতে হয় সোনুকে। সেখানেই তিনি জানান যে, “দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল যে অযোধ্যায় আসব। আজ নিজের সেই ইচ্ছেপূরণ করলাম।” যোগীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লঞ্চ করা একটি কয়েনও উপহার পেলেন সোনু।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেও তিনি বেজায় আপ্লুত। বলিউড গায়কের মন্তব্য, “যোগী আদিত্যনাথ একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা। ভীষণই বিচক্ষণ। আমি লখনউতে ছিলাম। তাই রাম মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুযোগ হয়ষ বহুদিনের ইচ্ছেপূরণ হল। মঙ্গলবার কাশী বিশ্বনাথের মন্দির দর্শনে যাব এবং পুজো দেব। আমি মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে বলেছি, ওঁর চিন্তাভাবনা দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে, তাই ভবিষ্যতে আরও উন্নততর দেশ গড়ার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা উচিত ওঁর।” আর ‘আজান বিতর্কিত’ গায়ক সোনু নিগমের এমন মন্তব্যের পরই নেটজনতার একাংশ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন যে, তাহলে কি তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাচ্ছেন?