শ্রদ্ধা নেই মানতেই পারছেন না তার বন্ধুরা। আফতাবের সঙ্গে সম্পর্কের পর অনেকটাই পরিবর্তন এসেছিল শ্রদ্ধার মধ্যে এমনটাই জানিয়েছেন তার পুরনো বন্ধুরা। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোমবার শ্রদ্ধার বন্ধু রজত শুক্লা জানান, 'আজ হঠাৎ মোবাইলে শ্রদ্ধার খুনের খবর দেখে কেঁপে উঠি। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার বন্ধুকে এভাবে খুন করা হয়েছে'।
তিনি বলেন, "২০১৮ থেকেই আফতাবের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন শ্রদ্ধা। প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও পরে শ্রদ্ধা মাঝে মধ্যেই আমাদের জানাত আফতাব প্রায়ই তাকে মারধর করত। কিন্তু ও আফতাবকে খুবই ভালবাসত তাই ওকে ছেড়ে আসার কথা কখনও কল্পনাও করতে পারত না”। রজত আরও জানান, চলতি বছরের ৮ মে দিল্লিতে আসেন দুজনেই। দিল্লিতে আসার পর শ্রদ্ধার সঙ্গে আর সেভাবে যোগাযোগ ছিল না”।
শ্রদ্ধার আরেক বন্ধু লক্ষ্মণ নাদির আদতে পালঘরের বাসিন্দা তিনি বলেন, “শ্রদ্ধা ও আফতাবের মধ্যে ঝগড়া-মারামারি লেগেই থাকত। সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কথা আমাদের বহুবার বলেছিলেন শ্রদ্ধা। একবার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে আমরা একবার পুলিশের কাছে আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে প্রস্তুত ছিল। তবে স্রেফ শ্রদ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে সেটা করিনি। শ্রদ্ধার পরিবারকেও একাধিক বার বন্ধুরা সাবধান করেছিল। শ্রদ্ধা অনেক আগে অনুমান করেছিল যে সেন খুন হতে পারে। একাধিকবার আমরা এর আগে আফতাবকে সাবধানও করি”।
লক্ষ্মণ জানান, “মৃত্যুর দু মাস আগেও শ্রদ্ধার সঙ্গে তার কথা হয়। আগস্টের পর আর কোন মেসেজের উত্তর পাইনি। ফোনও বন্ধ ছিল। তারপর থেকে চিন্তা বাড়তে থাকে। মনে হল এবার পুলিশের সাহায্য নেওয়া উচিত। আমি অবশেষে তার ভাইকে বললাম শ্রদ্ধার কোন খবর পাচ্ছি না এবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করা উচিত”।
লিভ-ইন পার্টনারকে নৃশংস ভাবে খুনের পর তাঁর দেহ ফ্রিজে পুরে রেখেছিল আফতাব পুনাওয়ালা। এমন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পরও দক্ষিণ দিল্লির মেহেরৌলির ফ্ল্যাটে আরেক মহিলাকে নিয়ে এসেছিল আফতাব। দিল্লির নৃশংস কাণ্ডের তদন্তে নেমে চোখ কপালে তোলার মতো তথ্য পেল পুলিশ। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে মাঝে মধ্যেই চলত পার্টি।
শ্রদ্ধাকে খুনের পর বাম্বল নামে একটি ডেটিং অ্যাপে এক মনোবিদের প্রেমে পড়ে আফতাব। তার আগে এই অ্যাপেই ২০১৯ সালে শ্রদ্ধার সংস্পর্শে আসে সে। সূত্রের খবর, জুন-জুলাই মাসে একাধিকবার আফতাবের ফ্ল্যাটে আসেন সেই মহিলা। তখন শ্রদ্ধার দেহাংশ বাড়িতেই ফ্রিজে রাখা ছিল। তদন্তকারী গোয়েন্দাদের মতে, গত ১৮ মে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়। এর পর তাঁর ইনস্টাগ্রাম থেকে বন্ধুদের মেসেজ করে আফতাব। যাতে শ্রদ্ধার বন্ধুদের কোনও সন্দেহ না হয়। শ্রদ্ধার ক্রেডিট কার্ডের বিলও মিটিয়ে দেয় যাতে সংস্থাগুলি শ্রদ্ধার মুম্বইয়ের ঠিকানায় যোগাযোগ না করে।
আরও পড়ুন: < রসগোল্লা সৃষ্টির ইতিহাস জানাতে বেনজির উদ্যোগ, মহানন্দে সামিল খুদে পড়ুয়ার দল >
নানা ভাবে খুনের তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল আফতাব। তদন্তে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে দুজনের প্রেম শুরু হয়। কিন্তু কারওরই পরিবার এতে রাজি ছিল না। পালঘর থেকে দুজনে উচ্চশিক্ষার জন্য মুম্বইয়ে চলে আসে। এর পর একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। ২০১৯ সালে শ্রদ্ধা একটি স্পোর্টস সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেন। অন্যদিকে, আফতাব একটি পাঁচতারা হোটেলে শেফের প্রশিক্ষণ শেষ করে।
তবে কয়েক বছরের মধ্যে আফতাব এবং শ্রদ্ধার সম্পর্কে তিক্ততা চলে আসে। একে অপরকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। দুজনেই এই লড়াই থেকে মুক্তি চাইছিল। এর পর গত এপ্রিলে দুজনে হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান বানায়।
বেড়ানোর পর দুজনে দিল্লিতে একটি এক কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ১৫ মে ভাড়া নেওয়ার পর তিনদিনের মাথায় ফের দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়। তার পরই শ্রদ্ধাকে খুন করে আফতাব। ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ করে শ্রদ্ধাকে খুন করা হয়। এর পরই দেহ টুকরো টুকরো করে আফতাব।
গত ১৪সেপ্টেম্বর শ্রদ্ধার ভাই শ্রীজয় বিকাশ ওয়াকারকে তার এক বন্ধুকে ফোন করে জানায় গত ২ মাস ধরে শ্রদ্ধার ফোন বন্ধ রয়েছে। এর পরেই শ্রদ্ধার বাবা, বাবা ৬ মানিকপুর থানায় মেয়ের নেমে নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও তদন্তে নেমে পুলিশকে বেশ কিছু বাঁধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
খুনের ঘটনা ৬ মাস কেটে গিয়েছে এখন পুলিশ মনে করছে খুনের ঘটনায় সমস্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা যথেষ্ট কঠিন। খুনের ঘটনায় আফতাবকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশের কাছে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত সীমিত তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে। দেহের টুকরোগুলি জঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে ছুড়ে ফেলা হয় বলেই জেরায় জানিয়েছে আফতাব।
এখন পর্যন্ত পুলিশ মাত্র ১০-১২টি নমূনা সংগ্রহ করতে পেরেছে। ডিএনএ টেস্টের পরই পুলিশ দেহাংশ গুলির বিষয়ে নিশ্চিত হবে। পুলিশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মৃত যুবতীর মাথা উদ্ধার করা, যার মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে যে ফ্রিজটি উদ্ধার করে তাতে কোন রক্তের দাগ ছিল না। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এমন কিছু রাসায়নিক আফতাব ব্যবহার করে যাতে রক্তের দাগ সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা যায়। পাশাপাশি খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রটিও এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।