ওয়াকফ বোর্ডে দুর্নীতির দু'বছরের এক পুরোনো মামলায় আপ বিধায়ক আমানুল্লা খানকে চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল দিল্লির আদালত। দিল্লি পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা (এসিবি)-র অভিযোগ আমানুল্লা খান অবৈধভাবে চার কোটি টাকা নিয়েছিলেন। অতিরিক্ত বিশেষ বিচারক বিকাশ ধুলের কাছে এসিবির হয়ে অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী অতুলকুমার শ্রীবাস্তব ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আদালত চার দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তিনি কীভাবে ওই টাকা পেয়েছেন, এই চার দিনে সেই ব্যাপারেই খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এসিবির তদন্তকারীরা।
এসিবি দাবি করেছে, তারা একটি ডায়েরি পেয়েছে। সেই ডায়েরিতে অর্থ লেনদেনের একটি তালিকা রয়েছে। সেই তালিকায় নাম রয়েছে খানের। ওই ডায়েরিতে বলা হয়েছে যে খানও অবৈধভাবে নগদ চার কোটি টাকা পেয়েছেন। এসিবির এই অভিযোগের জবাব দিয়েছে আম আদমি পার্টি। দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে এই আর্থিক লেনদেন হয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা এবং উত্তরাখণ্ডে। আপের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়েছে, দলের এই বিধায়কের রোজগার চার লক্ষ টাকা। তাঁর আয়কর ফাইলেও তেমনটাই বলা আছে। বাকিটা এসিবির সাজানো বলেই অভিযোগ আপ নেতৃত্বের।
আপের অভিযোগ, খানের বিরুদ্ধে আদালতে একটি ভিডিও পেশ করেছে এসিবি। সেই ভিডিওয় প্রমাণ করার চেষ্টা হয়েছে যে খান যথেষ্ট প্রভাবশালী। তাই সে মুক্তি পেলে তদন্তে অসুবিধা হবে। অথচ, যখন তদন্ত চালানো হয়, সেই সময় খান ও আপ নেতা-কর্মীদের ব্যাপক হেনস্থা করেছেন এসিবির কর্তারা। এমনটাই অভিযোগ আম আদমি পার্টির। আপের পক্ষ থেকে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন প্রবীণ আইনজীবী রাহুল মেহরা। তিনি আপ বিধায়কের পুলিশি হেফাজতের বিরোধিতা করেন।
আরও পড়ুন- সাত দশক পর ভারতে এল চিতা, কেন বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এদেশ থেকে?
রাহুল মেহরা আদালতে জানান, এই যে অর্থ লেনদেনের কথা বলা হচ্ছে, তা বিভিন্ন রাজ্যে হয়েছে। যেখানে খান যাননি। তদন্তকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারেন। এমনকী, লন্ডন-আমেরিকাতেও যেতে পারেন। তাদের তদন্তের নাম করে এসব জায়গায় ঘুরতে কোনও অর্থও লাগে না। এখন তারা কী চেষ্টা করছে? পুলিশ এমন করে আবেদন জানিয়েছে যেন মন্দিরে ঘণ্টা বাজাচ্ছে। মন্দিরে ঘণ্টা বাজিয়ে বলছে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চাই। অথচ, পুলিশের কাছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণই নেই। মেহরা বলেন, 'এসিবি ওয়াকফ বোর্ডে বেআইনি কার্যকলাপের কথা বলছে। এখানে বেআইনি কার্যকলাপের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? যদি কাজে কোনও ভুল হয়ে থাকে, তা সংশোধন করা যেতে পারে। এনিয়ে হাজার হাজার রায় রয়েছে।'
মেহরা আদালতকে জানান, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ এনেছে এসিবি। কিন্তু, কোন নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে, সেটা বলতে পারেনি এসিবি। কেন তারা এই অভিযোগ আনছে, সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব তো এসিবির। এরপর মেহরা জানান, মামলাটি ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি নথিভুক্ত হয়েছিল। তার একমাস পর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন হয়। সেই সময় এই অভিযোগ করার অর্থ ছিল আমানুল্লা খানকে অপদস্থ করা। যে প্রার্থী ভোট চাইতে যাচ্ছে, তাঁকে কলঙ্কিত করা। কিন্তু, তার পরও আমানুল্লা খান ব্যাপক ব্যবধানে জয়ী হন।
আপের আইনজীবী আদালতকে জানান, এরপর দিল্লি পুলিশ ওই বিধায়ককে একজন বাজে চরিত্রের মানুষ ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণার বিরুদ্ধে আমানুল্লা খান দিল্লি হাইকোর্টে যান। তার জেরে দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হয়। আপের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, 'এসিবি কি দুই বছর ধরে ঘুমোচ্ছিল? এতদিন কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?' মেহরা আরও দাবি করেন, 'উদ্ধার হওয়া ডায়েরির কোনও গুরুত্বই নেই।'
Read full story in English