কাবুল জয়ের এক বছর, তালিবান জমানায় নারীরা কী আজও ব্রাত্য? অন্তত এক বছর পূর্তিতে মহিলাদের অংশ নেওয়ার সার্বিক চিত্র সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাবুল জয়ের এক বছর পর মহিলাদের স্বাধীনতা কার্যত তলানিতে। মানব অধিকার নিয়েও সরবর হয়েছেন সেদেশের সাধারণ আম-আদমি। চোখের সামনে শিল্পীর বাদ্যযন্ত্রকে পুড়িয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সংবাদমাধ্যমে গান-পয়েন্টের মুখে সঞ্চালকের সংবাদপাঠ এমন একাধিক ভিডিও এই এক বছরে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সামনে এসেছে।
মহিলাদের শিক্ষা নিয়েও তালিবানিরা যে তেমন উৎসাহী নয় তা তাদের কার্যকলাপে একপ্রকার পরিষ্কার। কিন্তু তার মধ্যেও হাল ছাড়েননি আফগান মহিলারা। দেশে নানা প্রান্তে গড়ে উঠেছে গোপন বিদ্যালয়। আর সেখানেই তালিবানি হুঙ্কার উপেক্ষা করেই চলছে নারীদের বেঁচে থাকার লড়াই!। তেমন এক বিদ্যালয়ের দেওয়ালে লেখা ‘বিদ্যা দান পুণ্য অর্জন করার সমান’। কাবুলে আন্ডারগ্রাউন্ড স্কুলটি এই বছরের জুলাই মাসে শুরু হয়। সেখানে আগত মহিলার সংখ্যা প্রায় ৫০ ছুঁইছুঁই। সকলেই তালিবানি চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। সেখানেই সকলের সঙ্গে ক্লাস করছেন ২০০১ সালে পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়া এক আফগান মহিলা।
তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “ ২০০১ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার পর আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারিনি। এখন নিজের সন্তানদের যাতে কিছু শেখাতে পারি তারজন্য নিজে কিছু শিখতে ক্লাসে এসেছি”। বিকেল ৩টে থেকে ৫ টা পর্যন্ত চলে ক্লাস। শিক্ষার দয়িত্বে রয়েছেন এক গ্রাজুয়েট আফগান মহিলা।
আরও পড়ুন: < ‘কেজরিওয়ালই মদ কেলেঙ্কারির নায়ক’! বিজেপির তীব্র কটাক্ষের মুখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী >
তিনি বলেন, “যখন আমরা প্রথম শুরু করি, হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি মেয়ে ছিল, কিন্তু স্কুলের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং এখানে এখন পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০। আমাকে হয়তো শীঘ্রই অন্য একটি ক্লাস শুরু করতে হবে,”। চলতি বছর জুনে রাষ্ট্রসংঘের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয়। যাতে বলা হয়েছে তালিবানি শাসনকালে মহিলাদের অধিকার ফের খর্ব হতে শুরু করেছে। নারী স্বাধীনতা প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এমন অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য নারী শিক্ষার গুরুত্বের কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়”।
ইসমাতুল্লাহ কোহিস্তানি ২০০৩ সাল থেকে জাদুঘরে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, “ তালিবানিরা আমাকে সপ্তাহে একদিন এসে সই করতে বলেছে। সেই মোতাবেক আমি একদিন কাজে আসি এবং সই করি বেতন পাই”। মারওয়া কোহিস্তানি একটি সরকারি বিভাগে চাকরি করতেন। তালিবানি শাসন কায়েম হতেই চাকরি গিয়েছে তার।
তিনি বলেন, “নিজে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছি। সারাদিন বাড়িতে বসে থাকা! বাইরে বেরোলেই হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের”। বিজয় দিবসেও কাবুলের রাস্তায় মহিলাদের অংশগ্রহণ সেভাবে চোখে না পড়ায় নারী স্বাধীনতার বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে এসেছে।
গত বছর এমনই এক দিনে দেশ জুড়ে শয়ে শয়ে মানুষ দেশ ছাড়ার হিড়িকে সামিল হয়। মার্কিন পণ্যবাহী বিমানে চড়ে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেকেই। কাবুলের বেশিরভাগ মহিলার দাবি, তালেবান ক্ষমতায় আসায় নারী স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ। বোরখার আড়ালের জীবন স্বাধীনতার একবছরে নারীদের জন্য তালেবানদের সেরা উপহার