শ্রমিক উদ্ধারে সাফল্যের পর উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে নানা মুহূর্ত। সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং। (এক্সপ্রেস ছবি- চিত্রল খামভাটি/পিটিআই)
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ৪০০ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান সফলভাবে শেষ হল। আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককেই সুড়ঙ্গ থেকে বের করা হয়েছে। ১২ নভেম্বর থেকে উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা টানেলের ভিতরে ওই শ্রমিকরা আটকে ছিলেন। উদ্ধারের পর আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হাসপাতালে। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গত কয়েকদিন ধরে তিনি গোটা অভিযান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ১৭ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয় আটক প্রথম শ্রমিককে। সন্ধের পরই এনডিআরএফ উদ্ধারকর্মীরা সুড়ঙ্গের ভিতরে দড়ি দিয়ে বাঁধা স্ট্রেচার নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ)-এর কর্মী। প্যাসেজের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের কাছে পাঠানো হয় চাকাযুক্ত স্ট্রেচার। সেখানে শ্রমিকদের কাছে চলে যাওয়া এনডিএমএর কর্মীরা ছিলেন। তাঁরা শ্রমিকদের স্ট্রেচারে শুইয়ে দেন। দড়ি ধরে টেনে সেই চাকা লাগানো স্ট্রেচার প্যাসেজ দিয়ে বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা। গত কয়েকদিন ধরে ড্রিল করে তৈরি করা হয়েছে এই প্যাসেজ। যার কাজ শেষ হয়েছে মঙ্গলবার।
Advertisment
সুড়ঙ্গের ভিতরে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছিল। শ্রমিকদের আটকে পড়ার জায়গা থেকে বের করে এই চিকিৎসাকেন্দ্রেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। কোনও সমস্যা যাতে না-হয়, সেজন্য উত্তরাখণ্ডের স্বাস্থ্য দফতর ৮টি শয্যারও ব্যবস্থা করেছিল এই অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্রে। চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ দল মোতায়েন করা হয়েছিল সুড়ঙ্গের মধ্যে।
সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভিকে সিং।
এর আগে এনডিএমএ সন্ধ্যার দিকে জানিয়েছিল, উদ্ধারকাজ শেষ হতে রাত কাবার হয়ে যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি দুপুর থেকেই উদ্ধার অভিযানের সাফল্যের সাক্ষী হতে সুড়ঙ্গের কাছেই ছিলেন। অভিযান শেষ হতে দেরি হবে জানার পর তাঁকে গাড়ি করে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই ঘরে নাটকীয় পরিবর্তন। দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ও উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে চলে এসেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে আধিকারিকদের নিয়ে সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রবেশও করতে দেখা যায়। এই সময় এনডিএমএর কর্মীরা জানিয়ে দেন, খননের কাজ সফলভাবে শেষ হয়েছে। তাঁদের কর্মীরা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। শ্রমিকদের বের করে আনা হচ্ছে।
Uttarakhand Tunnel Rescue Operation Live Updates: 400 hour Uttarakhand tunnel rescue ends in success, first worker brought outhttps://t.co/BKl53gDWHy
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসন জানায় যে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের ভিতর মাত্র ২ মিটার খননকাজ বাকি। শীঘ্রই ১৭ দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। একইসঙ্গে জানানো হয়, উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের বেরিয়ে আসা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। শ্রমিক উদ্ধারে আর কিছু পরেই আসবে সাফল্য। এই খবর পেয়ে তড়িঘড়ি মঙ্গলবার বেলা গড়াতেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তিনি বলেন, 'উদ্ধারকারী দল উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা-বারকোট সুড়ঙ্গে আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধারে দুপুর ১টা ১০ নাগাদ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। শ্রমিকদের বেরিয়ে আসা এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। আটকে পড়া ৪১ শ্রমিককে কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স এবং মেডিকেল টিমও এখানে প্রস্তুত আছে।' উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের চিনিয়ালি সাউর কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে বলে আগে থেকেই ঠিক ছিল। সেই মতো ওই হেলথ সেন্টারকে পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।
VIDEO | Uttarkashi tunnel collapse UPDATE: Visuals from Chinyalisaur Community Health Centre where the 41 workers - trapped in the tunnel since Nov 12 - will be brought following their rescue, which is expected anytime soon. pic.twitter.com/v1KsTM5cLE
মঙ্গলবার উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া সিল্কিয়ারা টানেলের ৬০ মিটার লম্বা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে ড্রিল করেন। উদ্ধারকাজ যতই এগোতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে প্রতীক্ষার শেষ লগ্নের উত্তেজনা। এই টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকরা হায়দরাবাদের নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের কর্মী। সংস্থাটি জানিয়েছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আসা অ্যাম্বুল্যান্সে খাবারও পাঠানো হয়েছে। সংস্থার সহকারি এইচআর বিকাশ রানা বলেন, 'অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়েই শ্রমিকদের জন্য আলু গোভি, রোটি, ডাল এবং ভাত পাঠানো হয়েছে।' অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তাঁদের সঙ্গে আছে স্ট্রেচার।
শ্রমিকদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল গ্রিন করিডর। তৈরি রাখা ছিল চিনুক হেলিকপ্টারও। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধার অভিযানের যাবতীয় খবরাখবর দিয়েছে। এনডিএমএ শেষ লগ্নে জানায় যে একজন করে শ্রমিককে, 'ব়্যাট হোল মাইনিং' পদ্ধতিতে খোঁড়া গর্তের মধ্যে দিয়ে বের করা হবে। এজন্য ব্যক্তিপিছু সময় লাগবে ৩ থেকে ৫ মিনিট। সব মিলিয়ে ৪১ জনকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
উদ্ধারের সরঞ্জাম ভেঙে যাওয়ার পর ব়্যাট হোল মাইনিং পদ্ধতিতে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এজন্য অভিজ্ঞ ৬ শ্রমিককে ঝাঁসি এবং দিল্লি থেকে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের জন্যই উদ্ধার অভিযানে গতি আসে।