পাকিস্তানের সঙ্গে ৬২ বছর পুরনো সিন্ধু জল চুক্তি (আইডব্লিউটি) সংশোধনের পথেই হাঁটতে চায় ভারত। ভারত বরাবরই সিন্ধু জল চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে সওয়াল করেছে। চুক্তির বিষয়ে পাকিস্তানের অনীহার কারণেই এখন ভারত সেটি সংশোধনের নোটিস জারি করতে বাধ্য হয়েছে।
ভারত সরকার ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরের সিন্ধু জল চুক্তি (IWT) সংশোধনের জন্য প্রতিবেশি পাকিস্তানকে একটি নোটিস জারি করেছে। সরকার বলেছে, ‘পাকিস্তানের একাধিক ভুল পদক্ষেপের ফলেই ‘সিন্ধু জল চুক্তি’ বাস্তবায়নের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে এবং এই চ্যুক্তি সংশোধনের জন্য নোটিস জারি করতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার'। সিন্ধু জল চুক্তি হওয়ার পর জল বণ্টনে ভারত বরাবরই নরম মনোভাব দেখিয়ে এসেছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্ততায় ১৯৬০ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আয়ুব খানের সঙ্গে সিন্ধু নদের জল ব্যবহার নিয়ে চুক্তি হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই এই সিন্ধু নদের জল ব্যবহার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে টানাপোড়েন চলছে। টানা ৬ বছর ধরে আলাপ আলোচনার পর ১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেহরু পাকিস্তানে গিয়ে করাচিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন।
সূত্রের খবর অনুসারে, পাকিস্তানের কার্যকলাপে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করার সময়, ভারত সরকার আরও বলেছে যে ভারত অক্ষরে অক্ষরে পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি বাস্তবায়নে নমনীয় মনোভাব দেখিয়ে আসছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে কোন সাহায্য পায়নি ভারত। ভারত সরকার বলেছে যে ‘ভারত পারস্পরিকভাবে সিন্ধু জল চ্যুক্তিতে একটি মধ্যস্থতার পথ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, পাকিস্তান ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী সিন্ধু কমিশনের ৫টি বৈঠকের সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছে। এই কারণেই এখন পাকিস্তানকে নোটিস জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
নোটিসের উদ্দেশ্য
এই নোটিসের উদ্দেশ্য হল সিন্ধু জল চুক্তি লঙ্ঘন সংশোধন করার জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের মধ্যে আন্তঃসরকারি আলোচনায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া। এই প্রক্রিয়াটি গত ৬২ বছরে পরিস্থিতির পরিবর্তন অনুসারে সিন্ধু জল চুক্তি সংশোধণ করবে। ভারত ও পাকিস্তান ৯ বছরের আলোচনার পর ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিন্ধু জল চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে বিশ্বব্যাংকও মধ্যস্থতাকারী হিসাবে অংশ নেয়। পাকিস্তানের তরফে এই চুক্তির নিয়ম-কানুনকে ক্রমাগত উপেক্ষা করার পর এই বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এই প্রথমবার তাতে পরিবর্তন করার নোটিশ জারি করা হল। সিন্ধু জল চুক্তির লঙ্ঘন সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে আলোচনার একটি সুযোগ করে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে গত ৬২ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী চুক্তিতে প্রয়োজনীয় বদল আনা যেতে পারে।
২০১৫ সালে ভারতের ঝিলম নদীতে কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছিল পাকিস্তান। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, সিন্ধু জল চুক্তি মেনেই প্রকল্পে নির্দিষ্ট পরিমাণ জল ব্যবহার করবে ভারত। কিন্তু তাতে কান দেয়নি পাকিস্তান। নোটিস প্রসঙ্গে পাক বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে যে বর্তমানে কোর্ট অফ আরবিট্রেশনে কিষেণগঙ্গা এবং রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আপত্তি নিয়ে শুনানি চলছে। সেইদিক থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই ভারত এই পন্থা অবলম্বন করেছে বলে পাকিস্তানের দাবি।
অতীতে দেখা গিয়েছে, সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে পারস্পরিকভাবে আলাপ-আলোচনার পথেও বসতে নারাজ পাকিস্তান। ভারতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বারবার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিন্ধু কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু এই সম্পর্কে আলোচনা করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান। সেই কারণেই শেষমেশ চুক্তি সংশোধনের পথে হাঁটতে চাইছে ভারত। পাকিস্তান শুরু থেকে ভারতের উদারতাকে হালকাভাবে নিয়ে চলেছে। এই চুক্তির বিধান উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় আপত্তিও তুলেছে।
৬২ বছরের পুরনো 'সিন্ধু জল চুক্তি' নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে পাকিস্তানকে নোটিস দিয়েছে ভারত। সূত্রের খবর, ২৫ জানুয়ারি, চুক্তির 7 (3) ধারার অধীনে ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির সংশোধনের বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে একটি নোটিস পাঠিয়েছেন। নোটিসে 'সিন্ধু জল চুক্তি' লঙ্ঘন সংশোধনের জন্য পাকিস্তানকে ৯০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। আইডব্লিউটি-তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে কীভাবে বিরোধগুলি সমাধান করা হবে। তা সত্ত্বেও পাকিস্তান বারবার চুক্তি' লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ ভারতের। এবার সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানকে নোটিস দিয়ে ফের চুক্তির সংশোধনের বিষয়ে আলোচনার পথে এগোতে চাইছে ভারত।