বাংলা, বিহার, মহারাষ্ট্রের পর এবার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে বাতিল করা হল কেরালার প্রস্তাবিত ট্যাবলো। যা ঘিরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব বিজয়ন সরকার। রাজনৈতিক স্বার্থেই মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছে কেরালার বাম সরকার। কোন যুক্তি বাদ কেরালার প্রস্তাবিত ট্যাবলো তা নিয়ে অবশ্য কিছু জানায়নি কেন্দ্র। এর আগে বাংলার ট্যাবলো প্রস্তাবকে খারিজ করে করায় 'বাংলাকে অপমান করেছে কেন্দ্র', এই মর্মেই মোদী-বিরোধী সুর চড়ায় মমতা শিবির।
কেরালার আইনমন্ত্রী একে বালান বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেন কথাকলি মহিনিয়াত্তাম ও চেন্দার উপর এত ঘৃণা তা বুঝতে পারছি না। এর আগে এইধরনের যুক্তরাষ্ট্রীয় বিরোধী সরকার দেখাছেন যারা কেরালার নাম উঠলেই তাকে আক্রমণ করে উন্মত্ত হয়ে ওঠে? এটাই আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি।' তাঁর সংযোজন, 'বিশ্বের কাছে রাজ্যের সংস্কৃতি তুলে ধরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হল কেরালাকে। এর মধ্যে কী রাজনীতি থাকতে পারে?'
আরও পড়ুন: ‘বাংলাকে অপমান করা হয়েছে’, ট্যাবলো বিতর্কে কেন্দ্রকে তোপ তৃণমূলের
আসন্ন প্রজাতান্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যেসব ট্যাবলো প্রদর্শিত হবে শুক্রবার তারই তালিকা প্রকাশ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তালিকায় কেন্দ্রীয় সরকারের ৬টি বিভাগ ও ১৬ রাজ্যের ট্যাবলো প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে বিজেপির বন্ধু বিজেডি শাসিত ওড়িশ্যা, তেমনই রাখা হয়েছে কংগ্রেস সরকারের চারটি রাজ্যেকে। তালিকা অনুশারে ২৬ জানুয়ারি এবার রাজপথে দেখা যাবে, আসাম, ছত্তিশড়, গোয়া, গুজরাট, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মেঘালয়, ওড়িশ্যা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের সুসজ্জিত ট্যাবলো। এছাড়াও থাকবে, শিল্প ও অন্তবর্তী বাণিজ্য মন্ত্রক, পানীয় জল, শৌচ, অর্থ দফতরের ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বিভাগ, বিপর্যয় মোকাবিলা ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ট্যাবলো।
বৃহস্পতিবারই কেন্দ্র-রাজ্যে তরজায় 'প্রজাতান্ত্রিক' মোড় লাগে। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে বাদ দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো। তৃণমূলের বিধানসভার পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় বলেন, 'পশ্চিমবঙ্গ সরকার নরেন্দ্র মোদীর জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আছে বলেই এমন সৎ মায়ের ন্যায়ের আচরণ করছে বিজেপি। আমরা সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি বলেই কেন্দ্র আমাদের ট্যাবলোর প্রস্তাব বাতিল করেছে। এর আগেও পশ্চিমবঙ্গের এমন প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে।' এরপরই তৃণমূলের মন্ত্রীর সাফ বক্তব্য, 'এই জাতীয় সস্তা রাজনীতি আমাদের বিরোধিতা থেকে বিরত রাখবে পারবে না। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জনগণকে অপমান করেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তাঁদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে।'
আরও পড়ুন: ‘মোদী কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত?’ চরম কটাক্ষ মমতার
বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন করেছে শিবসেনা। এরপরই প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে বাদ পড়ল মহারাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ট্যাবলো। যা ঘিরে সেনা-বিজেপি বাদানুবাদ তুঙ্গে। সেনা শিবিরের পক্ষ থেকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ তোলা হয়। পাল্টা, বিজেপি মুখপাত্র মাধব ভাণ্ডারী বলেছেন, 'এই প্রথম নয়, এর আগে কেন্দ্র ও রাজ্যে কংগ্রেস সরকার থাকালীনও মহারাষ্ট্রের ট্যাবলো বাদ পড়েছিল।'
প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য মোট ৫৬টি প্রস্তাবের মধ্যে রাজ্য থেকে আসা ১৬টি এবং কেন্দ্রশাসিত এলাকা থেকে আসা ছ’টি প্রস্তাব নির্বাচন করা হয়েছে। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর, সবকটি রাজ্য মিলিয়ে ৩২টি ট্যাবলোর প্রস্তাব আসে। কেন্দ্রের মন্ত্রক এবং অন্যান্য দফতর থেকে আসে ২৪টি প্রস্তাব। ২০২০ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের জন্য মোট ২২টি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
Read the full story in English