আদালতের আদেশের পরে নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট ১৫টি প্রাচীন প্রত্নসামগ্রী ভারতকে ফিরিয়ে দেবে। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ফেলিসিয়া এ. মেনিন গত মাসে জাদুঘরে সুভাষ কাপুরের সরবরাহ করা ১৫ প্রাচীন ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে ‘অনুসন্ধান’ পরোয়ানা জারি করে।
এরপরই মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউইয়র্ক, ভারত থেকে "অবৈধভাবে পাচারকৃত” ১৫টি মূর্তি দেশে ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে" । আদালতের নির্দেশের পর ভারত সরকারকে ১৫ টি প্রাচীন ভাস্কর্য ফিরিয়ে দিচ্ছে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী পর্যন্ত দূর্মূল্য এই ভাস্কর্য ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে। মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে রয়েছে ৭৭টি প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্য, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তের পরই নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট ১৫টি প্রাচীন ভাস্কর্য ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। জানা গিয়েছে ৭৭টি আইটেমে সবকটি পাচার করে কুখ্যাত পাচারকারী সুভাষকাপুর।
গতকাল অর্থাৎ ৩০ শে মার্চ মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট এই বিষয়ে এক বিবৃতি জারি করেছে। এই সকল মূর্তি- ভাস্কর্য জাদুঘরে বিক্রি করেন বিক্রি করেছিলেন সুভাষ কাপুর। গত নভেম্বরে, ভারতের একটি আদালত কাপুরকে দেশ থেকে প্রত্নতত্ত্বসামগ্রী চুরি এবং অবৈধভাবে সেগুলিকে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে তার ভুমিকা খতিয়ে দেখে তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
কাপুরকে ২০১২ সালে জার্মানিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তামিলনাড়ু পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত নভেম্বরে, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং চুরির অপরাধের জন্য তাকে ১০বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে নিউইয়র্কের আর্ট অফ দ্য পাস্ট গ্যালারিতে আনুমানিক ৯৪ কোটি টাকা মূল্যের ১৯ টি প্রাচীন মূর্তি রপ্তানি করা হয বেশ কয়েক বছর আগে।
জাদুঘর একটি বিবৃতিতে বলেছে "ভারত সরকারের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে মর্যাদা দিয়ে এই বিষয়টি সমাধান করতে পেরে সন্তুষ্ট,"।মূর্তিগুলি খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে ১১ শতকের সময়কার। পোড়ামাটি, তামা এবং পাথরের অপরূপ নির্দশন তাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পাথর এবং পোড়ামাটির তৈরি ভাস্কর্যগুলিতে প্রাচীন ভারতীয় দেবতাদের মূর্তি চিত্রায়িত করা রয়েছে।
সুভাষ কাপুরের বিরুদ্ধে ১৪০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রত্নসামগ্রী পাচারের অভিযোগে মামলা রয়েছে। শুধুমাত্র তামিলনাড়ুতেই তার বিরুদ্ধে ৬ টি মামলা রয়েছে। এর আগে গত বছর ভারত থেকে চুরি হওয়া ৩০৭ টি প্রাচীন সামগ্রী ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেয় আমেরিকা, প্রায় ১৪ বছর তদন্তের পর, সেগুলিকে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যেগুলি চুরি করা হয়েছিল বা দেশ থেকে পাচার করা হয়েছিল। যেগুলির দাম প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বেশিরভাগই কুখ্যাত ব্যবসায়ী সুভাষ কাপুরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ম্যানহাটনের জেলা অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ এগুলি ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানান। ব্র্যাগ বলেছেন, কাপুরের বিরুদ্ধে ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নি অফিসের অভিযানে এই আইটেমগুলির মধ্যে ২৩৫টি সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। কাপুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ "আফগানিস্তান, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশ থেকে পণ্য চোরাচালানে তিনি সহায়তা করেছিলেন।"
মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট-এর তরফে বলা হয়েছে “এই সামগ্রীগুলি অনেক জায়গা থেকে চুরি করা হয়। সামগ্রীগুলির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রতি কোন সম্মান দেখায়নি চোরাকারবারীরা। ভারতের জনগণকে পৌরানিক সামগ্রী ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা গর্বিত”।