Advertisment

আতঙ্কিত কাশ্মিরী পড়ুয়ারা: 'আমরা দরজা খুলতে পারছি না। খুব ভয় লাগছে'

দেহরাদুনের বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী সংগঠন কাশ্মিরীদের "বিশ্বাসঘাতক" আখ্যা দিয়ে ফরমান জারি করে, "২৪ ঘণ্টার মধ্যে" যেন সমস্ত কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রী শহর ছেড়ে চলে যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

শুক্রবার তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে বেধড়ক পেটায় বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ কিছু দক্ষিণপন্থী সংগঠনের সদস্য। শনিবারও ভোগান্তি কমলো না উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুনে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের। বরং অবস্থার এতটাই অবনতি হলো যে তাঁদের মধ্যে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হোস্টেলের বা ভাড়া বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে ভেতরে বসে রইলেন।

Advertisment

গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় সন্ত্রাসবাদী হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। এর পরেই দেহরাদুনের বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী সংগঠন কাশ্মিরীদের "বিশ্বাসঘাতক" আখ্যা দিয়ে ফরমান জারি করে, "২৪ ঘণ্টার মধ্যে" যেন সমস্ত কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রী শহর ছেড়ে চলে যায়।

আরো পড়ুন: নিহত জওয়ানদের সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নজফগড়ের নবাব

শনিবার তাঁদের হোস্টেলের চারদিক ঘিরে থাকা উত্তেজিত জনতার ভয়ে হোস্টেলের একটি কামরায় নিজেদের আটকে রাখেন উপত্যকা থেকে আসা প্রায় ২০ জন ছাত্রী। অনেকেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, প্রাণের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ডলফিন ইনস্টিটিউটে জুওলজি পাঠরতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ বছরের এক ছাত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমরা প্রায় ২০ জন মেয়ে হোস্টেলের ঘরে বন্দি করে রেখেছি নিজেদের। আমাদের হোস্টেলের বাইরে শয়ে শয়ে লোক। অনেকের হাতেই লাঠি আর পাথর রয়েছে। আমরা আলো নিভিয়ে দিয়েছি। পুলিশে খবর দিয়েছিলাম, তারা এসেওছিল, কিন্তু তাদের বক্তব্য, আমাদের ওই লোকগুলোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ওরা বলছে আমরা বিশ্বাসঘাতক, কিন্তু আমরা তো এই অপবাদ পাওয়ার মতো কিছু করি নি। আমরা দরজা খুলতে পারছি না। খুব ভয় লাগছে। সাহায্য করার মতো কেউ নেই।"

বিএফআইটি-র জিওলজি বিভাগের ২৩ বছরের এক কাশ্মিরী ছাত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "একদল লোক বিএফআইটি-র সামনে শুক্রবার দুজন কাশ্মীরী ছাত্রকে মারধর করে। এরপর তিনজন লোক আমাদের ভাড়া বাড়িতে এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে আমাদের বাইরে বেরোতে বলে। আমরা কাশ্মিরী কিনা জানতে চায়, তারপর প্রায় ১০০ জন লোক জড়ো করে ফিরে আসে। 'হিন্দুস্তান কে গদ্দারোঁ কো গোলি মারো' বলে স্লোগান দিচ্ছিল ওরা। আপাতত আমরা বাড়িতে বন্দি। বাড়িওয়ালা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলছেন, কিন্তু আমরা রাস্তায় বেরোব কী করে? ওরা তো চারদিকে।"

জম্মু কাশ্মীর ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্র নাসির খুহামি বলেন, "আমি কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, স্টুডেন্টদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।" এই সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সমগ্র উত্তর ভারতের কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত কাশ্মিরী পড়ুয়ারা। খুহামি আরও বলেন, "আমরা চণ্ডীগড়ে ২০ টি ঘর ভাড়া নিয়েছি যাতে দেহরাদুনে যেসব ছাত্রছাত্রী নিরাপদ বোধ করছে না, তারা কিছুদিনের জন্য শহর ছেড়ে যেতে পারে, কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ওরা ঘর থেকে বেরোতেই পারছে না।"

আরো পড়ুন: কড়া জবাব দিতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি: মোদী

দেহরাদুনে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন প্রায় ৩,০০০ ছাত্রছাত্রী। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা ঘটে নি, কিন্তু শনিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের সামনেই মার খাচ্ছে ছাত্ররা।

ডিজি (আইন শৃঙ্খলা) অশোক কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "শুক্রবার থেকে দেহরাদুনের যেসব প্রতিষ্ঠানে কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রী পড়ে, সব জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তিলকে তাল করছে। ওরা একদম নিরাপদ। কারোর যদি কোনোরকম ভয় থাকে, আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে আমরা সবরকম সাহায্য করব।"

কুমার আরও বলেন যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, কোনো কাশ্মিরী ছাত্র বা ছাত্রীকে ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হবে না। "কোনো প্রতিষ্ঠানই বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কাশ্মিরী ছাত্রছাত্রীদের পরিত্যাগ করবে না বলে আমাদের জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।"

jammu and kashmir kashmir CRPF
Advertisment