শুক্রবার থেকে শবরীমালায় শুরু হচ্ছে দু’মাস ব্যাপী ‘মন্ডলম মকরাভিলাক্কু’ তীর্থ। তার একদিন আগেই বৃহস্পতিবার তিরুবনন্তপুরমে সর্ব দলীয় বৈঠকের ডাক দিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
শবরীমালা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিল কেরালার বিরোধীরা। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল আগেই। মুখ্য বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ জানিয়েছে, রায় পুনর্বিবেচনার পরবর্তী শুনানি আগামী ২২ জানুয়ারি। আপাতত বহাল থাকছে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি নিয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ রায় দেয়, কেরালার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন সব বয়সের মহিলারা। ঐতিহাসিক এই রায় নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল রায়ের পর থেকেই। আয়াপ্পা ডিভোটিজ অ্যাসোসিয়েশন-এর পাশাপাশি নাইয়ার সোসাইটি এবং দিল্লির চেতনা কনশিয়েন্স অব উইমেন-এর পক্ষ থেকেও রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। তাদের মতে, শীর্ষ আদালতের রায় “অসমর্থনযোগ্য এবং বিরক্তিকর”।
আরও পড়ুন, শবরীমালা রায় বহাল, পুনর্বিবেচনা নিয়ে পরবর্তী শুনানি ২২ জানুয়ারি
অক্টোবর মাসে মন্দির খোলার প্রথম দিন থেকেই মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। সংবাদমাধ্যমের ওপরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটে। অন্ধ্র প্রদেশের চার সদস্যের একটি পরিবার মন্দির চত্বরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন ট্রেক করে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৪০ বছরের এক মহিলা থাকায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন আয়াপ্পা ভক্তরা। মহিলাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হলে পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়। তৃতীয় দিনে তিনজন মহিলাকে মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ছিলেন হায়দ্রাবাদের সাংবাদিক কবিতা জাক্কাল এবং কোচির সমাজকর্মী রেহানা ফতিমা। রেহানার বাসভবনেও হামলা চালান আয়াপ্পা ভক্তরা। এর মাঝে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জানিয়ে দেন, মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে তালা বন্ধ করে দেওয়া হবে মন্দির। চতুর্থ দিনে পরিচয়পত্র দেখে বয়স যাচাই করে ঢুকতে দেওয়া হয় ৫২ বছরের এক মহিলা ভক্তকে। পঞ্চম দিনেও পাঁচ মহিলাকে ফিরে যেতে হয় মন্দির চত্বর থেকে।
এতদিন ধরে শবরীমালা মন্দিরে প্রথানুযায়ী ১০ থেকে ৫০ বছর পর্য়ন্ত মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শতাধিক বছর ধরে চলে আসা এই প্রথার সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে ১৯৬৫ সালের যে আইন বলে এই প্রথা চালু ছিল তা হিন্দু নারীর ধর্মাচরণের অধিকারে ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী। একই সঙ্গে বেঞ্চ বলেছে ধর্মের পিতৃতন্ত্রকে প্রার্থনার অধিকারে বাধা সৃষ্টি করতে দেওয়া যায় না।
এই সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি আর এফ নরিম্যান, বিচারপতি এ এম খানউইলকর, বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা। এর মধ্যে ভিন্ন মত পোষণ করেন বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা। তাঁর রায় অনুসারে, এ ব্যাপারে যে আবেদন করা হয়েছে তা গুরুত্ব পাওয়ারই যোগ্য নয়।