মধ্যপ্রদেশের দেওয়াস জেলা থেকে একটি অসুস্থ বন্য চিতাবাঘকে গ্রামবাসীদের একটি দল ঘিরে রাখার মর্মান্তিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। যাতে দেখা গিয়েছে গ্রামবাসীরা ওই চিতাবাঘের সঙ্গে সেলফি তুলছে। এমনকী, তার ওপর চড়ে বসারও চেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গলবার দেওয়াসের ইকলেরা গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এই খবর পাওয়ার পর, বন দফতর অসুস্থ চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করেছে। বন দফতরের বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, প্রাণীটি কিছু মস্তিষ্কের ব্যাধিতে ভুগছে। বুধবার ওই চিতাবাঘটিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ইন্দোরের এক চিড়িয়াখানার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানা গিয়েছে।
এই ব্যাপারে বন দফতরের এক আধিকারিক বিস্ময় প্রকাশ করে জানান যে পুরুষ চিতাবাঘটি তার আশেপাশের লোকজনের দলকে আক্রমণ করেনি। তাদের দিকে গর্জনও করেনি। দেওয়াসের বন বিভাগের খেওনি অভয়ারণ্যের সুপারিনটেনডেন্ট বিকাশ মাহোর বলেছেন, 'ইন্দোর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে ইকলেরা গ্রাম থেকে মঙ্গলবার চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।' ওই বন আধিকারিক জানান, নিরাপত্তার জন্যই গ্রামবাসীরা যাতে ভবিষ্যতে কোনও অসুস্থ বন্যপ্রাণীর কাছে না-যায়, তার জন্য তাঁদের সতর্ক করা হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে দেখা গিয়েছে একদল পুরুষ গ্রামবাসী, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে লাঠি, চিতাবাঘের কাছে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দাগযুক্ত বিড়ালের সাথে ছবি ক্লিক করার চেষ্টা করেছেন। আবার কেউ কেউ প্রাণীটিকে স্পর্শ করে আছেন। প্রাণীটি তাঁদের চেষ্টাকে প্রতিহত করছে না। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে যে একজন লোক ওই পশুর ওপর চাপার চেষ্টা করেছে, সেই সময় বাঘটি হাঁটছিল।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে কথা বলার সময়, ইন্দোরের কমলা নেহেরু চিড়িয়াখানার ইনচার্জ ডা. উত্তম যাদব বলেছেন, বন বিভাগ প্রতিবেশী দেওয়াস জেলার একটি গ্রামীণ এলাকা থেকে প্রায় ১০ বছর বয়সি পুরুষ চিতাবাঘ উদ্ধার করে এবং তাকে চিড়িয়াখানার হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তিনি বলেন, 'চিতাবাঘটি গুরুতর অসুস্থ। তার শরীর শক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাণীটির শরীরে প্রতি ২০ মিনিটে খিঁচুনি ধরছে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়, সে কোনও মস্তিষ্কের ব্যাধিতে ভুগছে।'
আরও পড়ুন- ওজন ১০২ কেজি! গুলিচালনার মধ্যেই সিনেমার কায়দায় দৌড়ে ডাকাত ধরলেন এএসআই
পশুচিকিত্সকদের পরামর্শ অনুসারে, চিতাবাঘের চিকিত্সা শুরু করা হয়েছে এবং প্রাণীটিকে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেই যাদব জানান। তিনি বলেন, 'এই প্রথম আমরা দেখলাম যে গ্রামবাসীদের দ্বারা হয়রানির শিকার হওয়া সত্ত্বেও চিতাবাঘটি তাদের ওপর গর্জন করেনি বা তাদের চেষ্টাকে প্রতিহত করেনি। এটি খুবই মর্মান্তিক, কারণ যতই অসুস্থ এবং দুর্বল বড় বিড়াল হোক না কেন, তারা যখন সমস্যায় পড়ে তখন তারা তাদের অন্তর্নির্মিত প্রতিরোধের প্রকৃতি ছেড়ে দেয় না।' দেওয়াসে স্থানীয় বাসিন্দাদের চিতাবাঘটির প্রতি আচরণ প্রসঙ্গে ডা. যাদব বলেন, 'গ্রামবাসীদের এই আচরণ এবং সাহসিকতা উদ্বেগজনক। চিতাবাঘ তাদের আক্রমণ করলে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারত।'