দুর্গাপুরে দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট। ঘরের দেওয়ালজুড়ে টাঙানো রয়েছে দুর্গা মহিষাসুর বধের ছবি। এই ছবি যেন বলে দিচ্ছে অনেক কথা। এই ফ্ল্যাটেই থাকেন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। প্রবল প্রতাপে দুর্গা মেজাজেই আজ সে লড়ছে রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে। হস্টেলে ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে একটানা আন্দোলনের নেত্রী ঐশী। ক্যাম্পাসে মুখোশধারীদের হাতে মার খেয়েছেন। রয়েছে পুলিশি মামলা। কিন্তু, লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছে সে। মাথায় ফেট্টি, হাতে প্লাস্টার নিয়েই লড়াইয়ের প্রতীক দুর্গাপুর তাপ বিদ্যুৎ কলোনির বছর ২৪-য়ের ঐশী।
ছোট থেকেই আঁকতে ভালোবাসে ঐশী। ফ্ল্যাটের দেওয়ালে টাঙানো ওই মহিষাসুর বধের ছবিটিও তাঁরই হাতের সৃষ্টি। তার নিচে সোফায় বসেই ঐশীর মা শর্মিষ্ঠা ঘোষ বলছিলেন, ‘চারুকলায় বরাবরই মেয়ের ঝোঁক ছিল। স্কুল, কলেজে ছবি এঁকে বহু পুরস্কার জিতেছে। প্রথাগত উচ্চ শিক্ষায় না গেলে মেয়ে হয়তো শিল্পী হয়ে উঠত।’
বামপন্থা, বামপন্থী আন্দোলন প্রথম থেকে অনুপ্রণিত করেছে ঐশীকে। সেই অনুপ্রেরণাতেই বর্তমানে বাম ছাত্র আন্দোলনের মুখ ঘোষ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যা। ৫ জানুয়ারির পর ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। ঐশী এবং লড়াই এখন যেন সমার্থক। দেশজুড়ে মেয়ের প্রশংসা। মেয়ের দৃঢ়তার কারণেই এসএফআইয়ের লোকাল কমিটির তরফেও ঐশীর বাবা মাকে সম্মানিত করা হয়েছে। এই কথা বলার সময় শর্মিষ্ঠাদেবীর মুখে আলতো হাসি।
রাষ্ট্রশক্তি বিরুদ্ধে লড়াই। লড়াই বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ৪ঠা জানুয়ারি সার্ভার রুমে হামলার কারণে ঐশীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। পুলিশের এই ভূমিকায় কী চিন্তা বাড়াছে নেত্রীর অভিবাকদের? মায়ের চোয়াল শক্ত এবার। শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, ‘পুলিশ কেন ৫ তারিখের ঘটনার তদন্ত করছে না? জেএনইউএসইউ থেকে ওকে সরানোর জন্যই এই পরিকল্পিত হামলা। উপাচার্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চান না যে ঐশী জেএনইউতে থেকে প্রকৃত সমস্যার নিয়ে আন্দোলন করুক।’
তবে মেয়ের সাহসে ভর করেই আগামীর পথ দেখছেন শর্মিষ্ঠা। তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইতে মেয়েকে সবাই সমর্থন করছে।’ পেশায় সরকারি কর্মী ও আরএসপির সদস্য ঐশীর বাবা দেবাশিষ ঘোষ ফোনে জানান, ‘আজ আমার মেয়ে আক্রান্ত, অন্যকোনও দিন অন্যকেউ এর শিকার হবে। এই অন্ধকার সময়ে সবার উচিত ঐক্যবদ্ধ থাকা। শত বাধা এসেও মেয়ে লড়াই যাবে।’
বাড়িতে রাজনীতির পরিবেশ রয়েছে। সেই সূত্রেই রাজনীতির প্রতি টান ঐশীর। দৌলত রাম কলেজে পড়ার সময়ই বাম ছাত্র রাজনীতিতে হাতে খড়ি তাঁর। তা বলে পড়াশুনোকে অবহেলা করেনি সে। দশম ও দ্বাদশে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাস করেছেন ঐশী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও ভালো নম্বর রয়েছে। হামলার পর মেয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, ‘প্রয়োজনে ওর সব সংশাপত্র দেখাতে পারি।’ আগামী সপ্তাহেই মেয়ের কাছে যাবেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ। ছোট মেয়েও দিল্লিতে পড়াশোনা করছে। দিদির সমন্ধে মা-বাবার কাছে সেই সব জানায়।
বাবার কথায় লড়াই চালিয়ে যাবে মেয়ে। ঐশীর লড়াই রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে। দাবি না মেটা পর্যন্ত সেই লড়াই চালানোর ডাক দিয়েছেন বছর ২৪য়ের তরুণী। দেশে অস্থির সময়ে দূর করতে যেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ঐশী।
Read the full story in English
Get all the Latest Bengali News and West Bengal News at Indian Express Bangla. You can also catch all the General News in Bangla by following us on Twitter and Facebook
Web Title: