তাঁর নাতনি এখন দেশের সংবাদমাধ্যমে সবথেকে চর্চিত নাম ও মুখ। রবিবার সন্ধ্যায় মুখোশধারীদের লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন নাতনি এবং তাঁর বন্ধু ও শিক্ষকরা। তছনছ হয়েছে জেএনইউ-এর মহিলা হস্টেল। এই খবর কানে আসতেই বিগত কয়েক ঘণ্টায় যেন ঝড় বয়ে গিয়েছে দুর্গাপুরের ঘোষ পরিবারে। এই মুহূর্তে বাড়িতে আছেন কেবল জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের দিদিমা শান্তিদেবী। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি জানান, হামলার পর রক্তাক্ত ঐশীর খবর পেয়েই দিল্লি দৌড়েছেন তাঁর মেয়ে-জামাই (ঐশীর মা-বাবা)। তবে এখনও নাতনির খবর পাননি দিদিমা। এ মুহূর্তে দুশ্চিন্তা নিয়েই বাড়িতে একা রয়েছেন শান্তিদেবী। শান্তিদেবী যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তখনই বাড়ির অদূরে দুর্গাপুর রেল স্টেশন চত্বরে ঐশীদের সমর্থনে চলছে এসএফআই-এর বিক্ষোভ মিছিল।
আরও পড়ুন: ‘দেশ বিরোধীদের মেরে ফেলুন’, জেএনইউ হামলার ছক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে?
বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জেএনইউএর ঐশী নির্বাচনের সময় থেকেই সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছেন বহুবার। কিন্তু রবিবারের ঘটনার পর কপালে গভীর ক্ষত নিয়ে দিল্লির হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নাতনি ঐশীর কথা বলতে গিয়ে দৃশ্যতই চিন্তিত শান্তিদেবী বলেন, "আমার সঙ্গে তো নাতনির এখনও কোনও কথা হয়নি। আমার মেয়ে জামাই ভোরেই বেড়িয়ে গিয়েছে। নাতনির এই অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?"
রক্তাক্ত ঐশী ঘোষ
বয়সের ভারে ন্যুব্জ শান্তি সিনহা এখন নাতনির খবরের জন্য সংবাদমাধ্যমেই ভরসা রাখছেন। টিভিতে চোখ রেখে জেনে নিচ্ছেন, কেমন আছেন ঐশী? আজই দুপুরের পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ঐশী। তবু কথা না বলতে পারায় আক্ষেপের সুর ধরা পড়ল দিদিমার গলায়। কিন্তু ঐশীর এই আন্দোলন, এই লড়াই, কতটা সমর্থন করেন শান্তিদেবী? যেন খানিক অভিমানি গলাতেই বৃদ্ধা বললেন, "আমার সমর্থন করা না করা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ঐশীর উপর। আমি হ্যাঁ বললেও শুনবে না, না বললেও শুনবে না। ওর যদি এই লড়াই চালানোর মনোভাব থাকে তাহলে ও এটা চালিয়ে যাবে। আমরা তাই বলতে যাই না। ও শুনবে না যেটা, সেখানে আর বলে কী হবে?"
আরও পড়ুন: রক্তাক্ত জেএনইউ, মুখোশধারীদের তিন ঘণ্টার তাণ্ডবে আহত ২৬
প্রসঙ্গত, জেএনইউ-এর পড়ুয়া মহলে বাম রাজনীতির জনপ্রিয়তা বরাবরই লক্ষ্যনীয়। দেশের অন্যতম কুলীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাম মনোভাবাপন্নদের এমন রমরমা বরাবরই আদর্শগতভাবে বিপরীত মেরুর গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তির কারণ। অভিযোগ, ছাত্র সংসদে তাঁর লড়াই এবং সভানেত্রীর পদ তাঁঁকে বিরোধী নিশানায় এনে দিয়েছিল। হস্টেলের ফি বৃদ্ধি থেকে নয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা, সবেতেই সরব ঐশীর উপর এই হামলার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে সারা দেশ। পথে নেমেছে দেশের ছাত্র-যুবরা, রাজনৈতিক তরজায় সরগরম খোদ দিল্লি দরবার। কিন্তু, রাজনীতি বা প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে বহু দূরে বসে দিদিমা এখন শুধু চোখ রাখছেন টিভির পর্দায়, যদি একবার ভাল করে দেখতে পাওয়া যায় মেয়েটাকে...