উত্তর প্রদেশের আলিগড়ে দু'বছরের শিশুকন্যার সম্ভাব্য অপহরণ এবং খুনের ঘটনায় শনিবার আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম মেহদি হাসান, এবং সে এই মামলায় আগেই গ্রেফতার হওয়া জাহেদের আত্মীয় বলে জানা যাচ্ছে। তদন্ত চলাকালীন উত্তর প্রদেশ পুলিশ জানতে পারে যে যেদিন ওই শিশুটির মৃতদেহ আবিষ্কার হয়, সেদিন হাসানকে এলাকায় দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই ফেরার হয়ে যায় সে, যদিও প্রাথমিকভাবে তাকে সন্দেহভাজনদের তালিকায় রাখেনি মৃত শিশুর পরিবার।
পুলিশ সূত্রের খবর, দু'বছরের ওই শিশুকে সম্ভবত ৩০ মে তার বাড়ির সামনে থেকে অপহরণ করা হয়, এবং পরে তার দেহ ফেলে দেওয়া হয় আস্তাকুঁড়ে। তিনদিন পর যখন উদ্ধার হয় সেই দেহ, পচন ধরে গিয়েছে তাতে, এবং জন্তু-জানোয়ারে খেয়ে নিয়েছে দেহের একাংশ।
সন্দেহ করা হচ্ছে যে খুনের মোটিভ হিসেবে কাজ করেছিল ধৃতদের একজন এবং মৃতা শিশুর ঠাকুরদার মধ্যে টাকা নিয়ে বচসা। শিশুটির ঠাকুরদা অভিযুক্তকে দেড় বছর আগে ৫০ হাজার টাকা ধার দেন বলে জানা গিয়েছে। শিশুটির এক আত্মীয়ের কথায়, "আমরা টাকাপয়সার বিষয়ে বিশেষ কিছু জানতাম না, কারণ উনিই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেন। আমরা কেউ প্রশ্ন তুলি না। এই সামান্য কটা টাকার যে এত মূল্য দিতে হবে, তা কি আর আমরা জানতাম?"
আরও পড়ুন: আলিগড় শিশুহত্যায় জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বিচার অভিযুক্তদের
শুক্রবার ধৃত দুজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন লাগু করা হয়। একইসঙ্গে উত্তর প্রদেশ পুলিশের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠিত হয়, এবং ফরেনসিক নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় আগ্রায়। অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইন-শৃঙ্খলা) আনন্দ কুমার শুক্রবার জানান, "এই ঘটনায় শোকার্ত গোটা সমাজ। এসপি (গ্রামীণ)-র অধীনে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠিত হয়েছে। এই দলে রয়েছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, সার্কেল অফিসার, এবং ফরেনসিক টিমের সদস্যরা। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এই মামলা আমরা ফাস্ট-ট্র্যাক আদালতে চালান করব।"
এই মামলায় অভিযুক্তের একজনের বিরুদ্ধে নিজের সাত বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করার পূর্বতন একটি অভিযোগ রয়েছে। সে জামিনে ছাড়া পেয়ে বাইরে ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। খবরে প্রকাশ, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় মামলা রয়েছে - ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩৫৪ (মহিলার শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে নিগ্রহ), এবং ৩৬৩ (অপহরণ)। ২০১৪ সালে এক আত্মীয়ের বয়ানের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।
বর্তমান মামলায় স্টেশন হাউজ অফিসার সমেত পাঁচজন পুলিশকর্মীকে কর্তব্যে অবহেলার দায়ে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য মৃতা শিশুটির পরিবার ধর্ষণের অভিযোগও এনেছেন, তবে ময়না তদন্তে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন পাওয়া হায় নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। সিট-এর নেতৃত্বে থাকা আলিগড়ের এসপি (গ্রামীণ) মণিলাল পতিদার জানিয়েছেন, এখনও ধর্ষণ নিশ্চিত করা যায় নি।