কোভিড পর্যালোচনা বৈঠক এড়ালেও ভারত-চিন সীমান্ত বিতর্ক সংক্রান্ত ইস্যুতে আজ প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সর্বদল বৈঠকে হাজির থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃস্পতিবারই সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, 'আমরা সর্বদল বৈঠকের আহ্বানকে সমর্থন করছি। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত।'
শুক্রবারের বৈঠককে ভিন নজরে দেখছে রাজ্যের শাসক দল। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় বলেছেন, 'দেশের নিরাপত্তার সংক্রান্ত বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেই সহায়তার কথা জানিয়েছেন। দেশ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদল বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।'
এর আগে গত বুধবার করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, বক্তার তালিকায় মুখ্যমন্ত্রীর নাম না থাকার কারণেই ভিডিও বৈঠক এড়িয়ে যান মমতা। পরিবর্তে, রাজ্যের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে ওই দিন বিকেলেই জেলা প্রশাসন ও চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
উত্তপ্ত ভারত-চিন সীমান্ত। গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনা বাহিনীর আক্রমণে নিহত ২০ ভারতীয় সেনাকর্মী। এই পরিস্থিতিতে ইন্দো-চিন সীমান্ত ঘিরে উত্তেজনা কয়েকগুণ বেড়েছে। উত্তেজনা প্রশমণে দু'দেশের সেনা ও কৃটনীতিকস্তরে আলোচনা চলছে। ভারত বেজিংকে স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সীমান্ত নিয়ে বিরোধ আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান হবে। ভারতের তরফে সব পদক্ষেপ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এপারেই করা হয়ে থাকে। আশা করব চিন ও তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারেই করবে। গালওয়ানকে তাদের অংশ বলে দাবি করেছে চিন। এ প্রসঙ্গে নয়াদিল্লি জানিয়েছে বেজিংয়ের দাবি ‘অতিরঞ্জিত ও অচল’। এই পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে চিন।
প্রায় ৪৫ বছর পরে ফের ইন্দো-চিন সেনা সংঘর্ষের ঘটনায় দেশ ও দশের নজর এখন রক্তাক্ত লাদাখে। বর্তমানে লাদাখের কি পরিস্থিতি? তা প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জানানো উচিত বলে দাবি তোলে কংগ্রেস। ভারতীয় ভূখণ্ড কী সত্যিই চিনাদের দখলে? এই প্রশ্নেই গত কয়েকদিন ধরে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি রাহুল গান্ধীরা। এর মধ্যেই গত সোমবার রাতে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বুধবার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠকের ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবারই সীমান্তে চিনাদের হামলা নিয়ে টুইটে কেন্দ্রকে খোঁচা দেন রাহুল গান্ধী। তিনি লেখেন, 'একেবারেই পরিষ্কার যে: প্রথমত, গালওয়ানে চিনা আক্রমণ পূর্বপরিকল্পিতই ছিল। দ্বিতীয়ত, সমস্যার সমাধান না করেই ভারত সরকার দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছিল। তৃতীয়ত, সেই ভুলেরই খেসারত দিতে হয়েছে আমাদের শহিদ জওয়ানদের।'
It’s now crystal clear that:
1. The Chinese attack in Galwan was pre-planned.
2. GOI was fast asleep and denied the problem.
3. The price was paid by our martyred Jawans.https://t.co/ZZdk19DHcG
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) June 19, 2020
গত বুধবার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'আমরা দেশের সঙ্গে রয়েছি, তাই তৃণমূল কখনও বিদেশনীতি নিয়ে কথা বলে না। নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি সামলানো হবে তা কেন্দ্রকেই ভাবতে হবে।'
'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধত করে মমতা বলেন 'রাজ্যগুলোকে দুর্বল ভাববেন না।' একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিরোধী বলে তোপ দেগেছেন তৃণমূল নেত্রী। করোনা নিয়ে মোদীর ভার্চুয়াল বৈঠকেও বক্তব্য জানানোর সুযোগ পাননি। সেই প্রেক্ষিতেই মমতার এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, এদিন বিকেল পাঁচার সর্বদল বৈঠককে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। আপ, আরজেডি-কে সর্বদল বৈঠকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। আপ নেতা নেতা সঞ্জয় সিং জানিয়েছেন, আম আদমি পার্টিকে ডাকা হয়নি। মোদী সরকারকে 'অহঙ্কারী' বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। সরকারি সূত্রে খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিরোধী নেতাদের প্রকৃত পরিস্থিতি সমন্ধে জানাবেন।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন