হাথরাসের দলিত নির্যাতিতা তরুণীর মৃত্যুর পর রাতের অন্ধকারে তাঁর দেহ সৎকার নিয়ে প্রশ্ন তুলল এলাহাবাদ হাইকোর্ট হাইকোর্ট। আদালত এদিন সরাসরি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ তরুণীর সৎকার নিয়ে পুলিশের ভূমিকার বিরুদ্ধে সুয়ো মোটো মামলা গ্রহণ করেছিল।
সোমবারের শুনানিতে হাইকোর্ট জানায় 'মৃত্যুর পর অন্তত স্বাভাবিক নিয়মে তরণীর সৎকার প্রাপ্য ছিল!' শুধু মাত্র সত্য ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ও অপরাধীদের অপরাধ ঢাকা দেওয়ার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ মোটেই কাম্য নয়।
সোমবারের শুনানিতে পুলিশ আধিকারিক প্রশান্ত কুমারকে আদালতের প্রশ্ন, 'কি করে জানলেন মেয়েটি ধর্ষিত হয়নি? তদন্ত কি শেষ হয়েছে? প্রয়োজন হলে ২০১৩'র ধর্ষণ আইনটি আবার দেখুন।' একইসঙ্গে কোর্টের পর্যবেক্ষণ, তাড়াহুড়ো করে রাতের অন্ধকারে সৎকারের ঘটনায় নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ও উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের সমালোচনা করেছে কোর্ট।
উল্লেখ্য, নির্যাতিতা তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁকে গণঘর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও প্রমাণ মেলেনি। পুলিশের দাবি হাথরাসের ঘটনা গণর্ষণের নয়। তবে করুণীর উপর হামলা চলেছিল। মানসিক আঘাত ও আতঙ্ক থেকেই নির্যাতিতার মৃত্যু হয়েছে। সরকারি ঘোষণানা থাকা সত্ত্বেও সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। কোর্টেও এই বিষয়টি জানিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার।
শুনানিতে কোর্ট জানায়, কেন প্রশাসনের তরফে অন্তত আধ ঘন্টার জন্যও দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া গেল না তা নিয়ে সরকারি ব্যাখ্যায় পোক্ত যুক্তি রয়েছে বলে মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। জেলাশাসক প্রশান্ত কুমার লস্কারের তরফে কোর্টে জানানো হয়, আই-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই দ্রুত দেহ সৎকার করা হয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসনই এউ সিদ্ধান্ত নেয়।
সোমবার আদালতে নির্যাতিত পরিবারের তরফে মামলা মহারাষ্ট্র বা দিল্লিতে সরানোর আবেদন জানানো হয়েছে। নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে আইনজীবী সীমা কুওয়াহা সোমবার আদালতে জানান, সিবিআইয়ের রিপোর্ট গোপন রাখা হোক এবং এই মামলা উত্তরপ্রদেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হোক। মামলা যতদিন না শেষ হয় ততদিন নির্যাতিতার পরিবারকে প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত নিরাপত্তা দেওয়ারও দাবি করা হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ ১৪ সেপ্টেম্বর মাঠে কাজ করার সময়ে ধর্ষণ ও মারধর করা হয় ওই দলিত তরুণীকে। ঘটনার ১৫ দিন পর দিল্লির হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন ২৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তার। এপর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তরুণী পুলিশকে জানিয়েছিলেন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। উচ্চবর্ণের চার ব্যক্তির নামও বলেছিলেন। সেই ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তদের। তবে ফরেন্সিক রিপোর্টে গণধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে দাবি। পুলিশও জানিয়েছে হাথরাসে গণধর্ষমের কোনও ঘটননা ঘটেনি। তরুণীর মৃত্যুর পরই উত্তাল হয় গোটা দেশ।রাতের অন্ধকারে দেহ সৎকার করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সমালোচনা বিদ্ধ হয় যোগী প্রশাসন। প্রশাসনের কার্যকলাপ দেখে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সোমবার কোর্টে প্রশাসনের আধিকারিকদের শরীরে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন