হাথরাসের দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করল এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ। উত্তরপ্রদেশ সরকারের শীর্ষ আমলা ও পুলিশ কর্তাদের আদালত সমন করেছে। গণধর্ষিতা মৃতার পরিবার অভিযোগ করেছিল তাঁদের অন্ধকারে রেখেই জোর করে দেহ ছিনিয়ে নিয়ে সৎকার করেছে পুলিশ। কেন এই তাড়াহুড়ো? তা জানতেই হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ এদিন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে। আগামী ১২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ সরকার ও জেলার আমলা, পুলিশ কর্তাদের শরীরে আদালতে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্টও আদালতে আনতে বলা হয়েছে।
Advertisment
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই পুলিশের উপস্থিতিতে হাথরাসের গণধর্ষিতা তরুণীকে দাহ করা হয়। মৃতের পরিজনদের জোর করে ঘরে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে যোগীর পুলিশের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশের পুলিশের কর্তারা যদিও দাবি করেন, পরিবারের সম্মতি নিয়েই সত্কার করা হয়েছে। তরুণীর পরিবার তা অস্বীকার করে। এই ঘটনায় আদালত মর্মাহত বলে জানানো হয়েছে। বিচারপতি রঞ্জন রায় ও বিচারপতি জশপ্রীত সিংয়ের বেঞ্চ জানতে চেয়েছেন, দলিত পরিবারটির অর্থনৈতিক অবস্থার বিচার করেই কী এই পদক্ষেপ করেছে পুলিশ? এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া কোনও স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে করানোর প্রয়োজন রয়েছে কিনা তাও আদালত বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন তুলে ধরে বৃহস্পতিবার বিচারপতি রঞ্জন রায় ও বিচারপতি জশপ্রীত সিংয়ের বেঞ্চ বলেন, এই ঘটনার চার জন গ্রেফতার হয়েছে। তদন্তের জন্য সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, গণধর্ষিতার মৃত্যুর পর ২৯ সেপ্টেম্বর তরণীর সৎকার নিয়ে গভীর রাতে যে ঘটনা ঘটেছে- তা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্যই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হল।
Advertisment
সমাজে বিষয়টির অপরিসীম প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রঞ্জন রায় ও বিচারপতি জশপ্রীত সিংয়ের বেঞ্চ। আদালত মনে করছে, এই ঘটনার সঙ্গে নিহতেরই শুধু নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার লংঘন করার মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে সরকারি প্রশাসনের উচ্চ-কর্তাদের বিরুদ্ধে।
আদালত মনে করে, দলিত তরণীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা নির্মমষ তার কোনও ব্যাখ্যা হয় না। কিন্তু এরপরও সৎকার ঘিরে যা হয়েছে, যে অভিযোগ উঠছে- তা সত্যি হলে বিষয়টি নিহতের পরিবারের প্রতি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
গণধর্ষিতা-মৃতার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে কিনা মামলায় তা খতিয়ে দেখা হবে।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ জানিয়েছে, 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১লা অক্টোবরের প্রতিবেদনের হেডলাইন ছিল পরিবারকে দূরে ঠেলেই জোর করে নির্যাতিতা মৃতার দেহ সৎকার করা হয়েছে। দিল্লি থেকে ২০০ কিমি দূরে হাথরসে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই রাত সাড়ে তিনটের সময় দেহ সৎকরা করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারটির অনুরোধ মানা হয়নি। শেষ কৃত্যেও অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এক্ষেত্রে আইনকে অবজ্ঞা করেছে।' মৃতার বাবার অভিযোগ ছিল হাসপাতাল থেকে মেয়ে দেহ তাঁকে না জানিয়েই বার করা হয়। দেহ সৎকারের পরিবারের সম্মতির কথাও অস্বীকার করা হয়েছে। অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন দেখে এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সৎকারের সময় নিয়ে হিন্দু আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়।
নির্যাতিতা মৃতার পরিবারের উপর যেন কোনও চাপ না আসে তা নিশ্চৎ করতেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এই প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং অতিরিক্ত ডিজিকে সমন পাঠিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চ। এ ছাড়া হাথরসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র পুলিশ সুপারকেও স্বতঃপ্রণোদিমামলায় ১২ অক্টোবর আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।