Advertisment

অলোক ভার্মা: দিল্লির নিচু তলার পুলিশকর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপিতে আজও 'ভার্মাসাবে'র ছবি

অলোক ভার্মার কেরিয়ারকে হিংসা করেন বহু অফিসারই। তাঁদের দাবি, ভার্মার অতি প্রিয় বন্ধুও বলতে পারবেন না যে তিনি কখনও কোনও বড় তদন্তের সাফল্য পেয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

যুযুধান...রাকেশ আস্থানা ও অলোক ভার্মা। অলঙ্করণ- শুভজিত দে।

দেশের হাই প্রোফাইল তদন্তকারী সংস্থা তাদের ডিরেক্টর অলোক ভার্মা ও স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার মধ্যেকার অভূতপূর্ব লড়াইয়ের সাক্ষী। এই দুই অফিসারের ক্রম উত্থান এবং সিবিআই পর্যন্ত পৌঁছানোর যাত্রাপথ লিপিবদ্ধ থাকল...

Advertisment

দিল্লি পুলিশের নীচের মহলের বহু কর্মীর হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি-তে আজও জ্বল জ্বল করছে অলোক ভার্মার ছবি। কারণ, 'ভার্মাসাবের আমলেই' (দিল্লির পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন) সবচেয়ে বেশি (প্রায় ২১ হাজার) নিচু তলার প্রমোশনের ফাইলে সই হয়েছিল। আবার অলোক ভার্মাকে মোটেও করিৎকর্মা অফিসার মানতে নারাজ তাঁর সঙ্গে কাজ করা বহু আধিকারিকই। চাকরিজীবন জুড়ে তাঁকে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের মতে তিনি 'স্থিতাবস্থাপন্থী' এবং কম কথা বলা নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। অথচ, এমন এক আইপিএস অফিসারই এখন 'বিদ্রহ ঘোষণা' করে দেশ জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে! তাঁকে ইস্যু করে দেশ জুড়ে পথে নেমেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সিবিআই-এর স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে এফআইআর করে ইতিমধ্যে দুর্নীতি বিরোধী 'ধর্মযুদ্ধের প্রতীক'ও হয়ে উঠেছেন সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থকে সদ্য অপসারিত এই অফিসার।

আরও পড়ুন- অলোক ভার্মাকে পদে ফেরানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে রাহুলের কারাবরণ

তবে অলোক ভার্মার কেরিয়ারকে হিংসাও করেন বহু অফিসার। তাঁদের দাবি, ভার্মার অতি প্রিয় বন্ধুও বলতে পারবেন না যে তিনি কখনও কোনও বড় তদন্তে সাফল্য পেয়েছেন। "অথচ, ওর কেরিয়ারটা দেখুন- প্রথমে তিহারের ডিজি, তারপর দিল্লির কমিশনার আর সবশেষ কি না সিবিআই ডিরেক্টর..." আক্ষেপের সুরে এমনটাই বললেন দিল্লি পুলিসের এক সিনিয়র অফিসার। খুব স্বল্প সংখ্যাক সিবিআই প্রধানদের মধ্যে অলোক ভার্মা অন্যতম, যিনি অতীতে কখনও এই বিভাগে কাজই করেননি। এমনকী, দিল্লি পুলিশের ভিজিল্যান্সেও মাত্র এক বছর কাজ করেছেন। পাশাপাশি, ভার্মার কোনও কালেই তেমন রাজনৈতিক যোগাযোগও নেই। তাহলে এমন একজন অফিসারকে হঠাৎ সিবিআই ডিরেক্টর পদে নিয়োগ করা হল কেন, উঠছে সে প্রশ্নও।

১৯৭৯ ব্যাচের কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল ক্যাডারের অলোক ভার্মাই তাঁর ব্যাচের কনিষ্ঠতম আইপিএস অফিসার। ১৯৫৭ সালে জন্মানো অলোক ভার্মা দিল্লির পুসা রোডের সরকারি আবাসনে বড় হয়েছেন। সিভিল লাইনের সেন্ট ডেভিয়ার্সের ছাত্র তিনি, এরপর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হন। তবে তাঁর দুই দাদার মতো রেস্তোরাঁর ব্যবসায় নামেননি অলোক ভার্মা। উল্লেখ্য, অলোকের দুই দাদা অর্থাৎ পি.কে ভার্মা এবং আর.কে. ভার্মার হাত ধরেই দিল্লির প্রথম চাইনিজ রেস্তোরাঁর চেইন 'দ্য গোল্ডেন জ্রাগন'-এর পথ চলা শুরু। বরং ব্যবসায় না নেমে মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথম চেষ্টাতেই আইপিএস পরীক্ষায় সাফল্য পান অলোক ভার্মা। কিন্তু, খাবারের ব্যবসায় না নামলেও, আর পাঁচজন দিল্লিওয়ালার মতোই ভোজন রসিক অলোক ভার্মার নখদর্পণে রয়েছে শহরের সব কচুরি পরোটার দোকান। সব মিলিয়ে ছিমছাম, গোছানো এবং বিতর্ক থেকে দূরত্ব বজায় রাখা এক জীবন কাটিয়ে এসেছেন এই আইপিএস অফিসার।

তবে ৩৮ বছরের চাকরিজীবনে তেমন কোনও বিতর্কে না জড়ানো অলোক ভার্মাকে শান্ত প্রকৃতির এবং 'আবেগপ্রবন' বলে মেনে নিলেও 'তিনি যে ভালর ভাল, মন্দের মন্দ', এ কথাও জানাচ্ছেন সিবিআই-তে তাঁর সঙ্গে খুব কাছ থেকে কাজ করা এক অফিসার।

আরও পড়ুন- সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মার অপসারণের ‘কারণ’ প্রকাশ করলেন রাহুল গান্ধী!

ভার্মা যে সত্যিই ভালর ভাল এবং মন্দের মন্দ, তা বোধ হয় বেশ বুঝেছিলেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার ধর্মেন্দ্র কুমার এবং সিআরপিএফ-এর স্পেশ্যাল ডিজি দীপক মিশ্র। দিল্লি পুলিশের তত্কালীন কমিশনার বি.এস বসসির খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই দুই অফিসার। ফলে, পরবর্তীকালে কমিশনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল দু'জনের চোখেই। কিন্তু, সে সময় সবচেয়ে সিনিয়ার অফিসার (পথের কাঁটা) অবশ্য অলোক ভার্মা। তিনি তখন তিহার জেলের ডিজি। তিহারের দায়িত্ব নিয়ে আবার ভার্মার সময় মোটেই ভাল যাচ্ছিল না। প্রায়শই বন্দি পালানো, বন্দিদের আত্মহত্যার ঘটনা সামনে আসছিল। এমনকী, সেই সুড়ঙ্গ কেটে দুই বন্দির পালানোর ঘটনাটিও অলোক ভার্মার আমলেই। এসব ঘটনাই খুব খারাপভাবে সংবাদ মাধ্যমে চলে আসছিল। আর এখানেই পুলিশ হেটকোয়ার্টারের জনসযোগ আধিকারিক রজন ভগতকে সন্দেহ হয় ভার্মার। তিনি মনে করেছিলেন, ধর্মেন্দ্র কুমার এবং দীপক মিশ্রর অঙ্গুলি হেলনেই এ কাজ করে চলেছেন ভগত। এরপর দিল্লির পুলিশ কমিশনার হয়েই তিনি ভগতকে জনসংযোগ আধিকারিকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু, তবুও ক্রাইম রেকর্ড অফিসের (সিআরও) দায়িত্ব ভগতের হাতে থেকে যাওয়ায়, তিনি হেড কোয়ার্টারে রোজই আসছিলেন। আর এরপরই ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। "একদিন ভগত অফিসে পৌঁছে দেখলেন তার বসার চেয়ার নেই (হারিয়ে গিয়েছে)। ব্যাস এতেই যা বোঝার বুঝে গিয়ে তিনি কমলা মার্কেটে সিআরও-র অফিসে স্থানান্তরিত হয়ে গেলেন", এমনটাই বলছেন এক অফিসার।

আরও পড়ুন- রাকেশ আস্থানা: পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি থেকে গোধরা, কখনওই আলোকবৃত্তের বাইরে থাকেননি

দিল্লি পুলিশের এক প্রবীণ অফিসারও একই কথা বলছেন। তাঁর মতে, ভার্মা এমনিতে খুবই ভাল এবং সকলকে নিয়েই চলতে পছন্দ করেন। কিন্তু, কেউ যদি তাঁর পিছনে লাগে, তাহলে ভার্মাই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শত্রু হয়ে উঠবেন। তবে, রাকেশ আস্থানার সঙ্গে এই চরম বিবাদে ভার্মা কোনও প্রতিশোধ চরিতার্থ করতে নেমেছেন না কি এটি চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এক নির্ঝঞ্ঝাট আইপিএস অফিসারের আত্মসম্মান রক্ষার লড়াই, তা বলবে আগামী দিন...

Read full story in English

cbi
Advertisment