'ম্য়াডাম বোর্ডিং পাস।'
'সরি, ডোর ক্লোজড্।'
'একটু দেখুন না যদি সম্ভব হয়? কোনও ভাবেই কি সম্ভব নয় অ্য়ালাউ করা?'
'না সরি, কিছুতেই সম্ভব নয়।'
অতএব বিমলবাবুর দিল্লি যাওয়ার আট হাজার টাকার টিকিট জলে। এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক মিস। হয়ত চাকরি নিয়েও টানাটানি। এটা কোনও গল্পের অংশ মনে হতে পারে, তা কিন্তু আদৌ না। চরম বাস্তব। এমন কথোপকথন রোজকার ঘটনা দমদমের নেতাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সৌজন্য়ে এয়ারপোর্ট এলাকার ট্রাফিক জ্য়াম। যে দিক থেকেই এয়ারপোর্টে যেতে চান, যানজটে আটকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। এয়ারপোর্ট সংলগ্ন যশোর রোডে ২৪ ঘণ্টাই যানজট লেগে থাকে। মধ্য়মগ্রাম, বারাসতের দিক থেকে যাতায়াত করা যে কী ভয়ঙ্কর তা নিত্য়দিন যাঁদের যাতায়াত করতে হয় তাঁরাই জানেন। একই দশা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ডানলপ বা বালির দিক থেকে এয়ারপোর্ট আসতে হলে।
আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনের নজরে মোটর ট্রেনিং স্কুল
মধ্য়মগ্রামের বাসিন্দা পার্থ দে প্রতিদিন দমদম পর্যন্ত আসেন বাস বা অটোতে। তারপর মেট্রো ধরে হাজরার অফিসে। পার্থবাবু বলেন, "কলকাতা শহরের কোনও রাস্তায় এধরনের যানজট হয় না। দশটায় অফিস, বাড়ি থেকে বেরোই সকাল সাতটায়। তবুও একেকদিন সময়মত পৌঁছতে পারি না।" তাঁর অভিজ্ঞতা এই রকম - প্রথমে বিরাটিতে কিছু সময়ের জন্য় গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে। তারপর শরৎ কলোনী থেকে এয়ারপোর্টের এক নম্বর গেট পর্যন্ত গাড়ির চাকা গড়াতে চায় না। আড়াই নম্বর কাটা গেট যেন সাক্ষাৎ যমদূত। কাটা গেট উতরে যাওয়ার পর আবার এক নম্বর পর্যন্ত এক অবস্থা। এখন আবার রাস্তার পাশে পাইপলাইনের কাজ হচ্ছে। তার ওপর এক নম্বর থেকে আড়াই নম্বরের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। গাড়ির গতির প্রশ্নই নেই। বরং জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। এক কথায়, এই রাস্তায় যাতায়াত আর নরকে চলাফেলা একই বিষয়। বেসরকারি অফিসে কাজ। সন্ধেয় বেরিয়ে রাত সাড়ে নটায় হয়ত বাড়ি পৌঁছনো। আর একটু রাত, অর্থাৎ দশটা বেজে গেলে মনে হবে বাড়ি না গিয়ে রাস্তায় থেকে যাই। রাতে আবার ট্রাক দাঁড় করিয়ে পুলিশের বিশেষ চেকিং রয়েছে।
শুধু যশোর রোডে নয়, কৈখালির দিকেও রাত হলে জ্য়াম বাড়তে থাকে। তখন কৈখালি থেকে এক নম্বর আসতেই সময় লেগে যায় ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। অতএব এয়ারপোর্ট যাওয়ার সব রাস্তারই এক দশা। তা সে যশোর রোড হোক বা ভিআইপি রোড।যানজটের আরেকটি বড় কারণ, তিন নম্বর গেটে বারাসাতের দিক থেকে আসা বড় গাড়ি, যেগুলি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসেওয়ে ধরার সময় ইউ টার্ন নেয়। এবং এক্সপ্রেসেওয়েতে যাওয়ার উড়ালপুল থাকলেও তা ব্য়বহার করা হয় না। পুলের নীচ দিয়ে গাড়িগুলি ইউ টার্ন নেওয়ায় বারাসাতগামী যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এক নম্বর এবং আড়াই নম্বরের জ্য়াম কাটিয়ে তিন নম্বরে ফের আটকে যেতে হয়। রাতের দিকেই এই সমস্য়া বেশি দেখা দেয়।
প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া কিন্তু আশ্চর্যরকম স্তিমিত। বিধাননগর ট্রাফিক পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করা হয়েছিল। যানজটের কথা শুনে কর্তব্য়রত পুলিশকর্মীরা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর তাঁদের মন্তব্য়, "পাইপলাইনের কাজ হচ্ছে তো, জ্য়াম হতে পারে।" কিন্তু সেই ফোনের জেরে আপাতত পুলিশ এবং পূর্ত দফতর সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। খতিয়ে দেখেছেন কেন এত যানজট। গাড়ির গতি অব্য়াহত রাখতে আপাতত কিছু পরিকল্পনা নিচ্ছে প্রশাসন। এই মুহূর্তে রাস্তায় লেন বাড়িয়ে সমস্য়া মেটানোর উদ্য়োগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা, এবং আগামী অগাস্ট মাস থেকেই লেন বাড়ানোর কাজ শুরু করবে পূর্ত দফতর।
ওই কর্তা আরও জানান, আড়াই নম্বর কাটা গেট এলাকায় রাস্তার জন্য বরাদ্দ জায়গা বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে। এই গেটের জ্য়াম নিয়েই বেশি আতঙ্কে থাকেন নিত্যযাত্রীরা। তিন নম্বর গেটে ইউ টার্ন বন্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। উড়ালপুলের নীচ দিয়ে নতুন রাস্তা করা হবে। সোজাসুজি বড় গাড়ি বারাসাতের দিক থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে চলে যাবে। কলকাতামুখী যান চলাচল যাতে কোনভাবে ব্য়াহত না হয় তার জন্য় তিন নম্বর গেট থেকে অতিরিক্ত লেন তৈরি হবে। বেলঘরিয়া-গামী গাড়িগুলি তিন নম্বরের সিগন্য়ালে আটকে যায়। তাই বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের দিকে একটি বাড়তি লেন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে ওই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।
ট্রাক চলাচলেও অনেকসময় কোনও বিধিনিষেধ মানা হয় না। রাত নটার পর সারি সারি ট্রাক ওই এলাকায় চারিদিক থেকে ঢুকতে শুরু করে। যার ফলে বাকি যানবাহনের ভোগান্তির শেষ থাকে না। যানজট মেটাতে বাড়তি লেন, এবং তার আগে উড়ালপুল নিয়েও প্রশাসনিক স্তরে অনেক আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু সমস্য়া বেড়েছে বৈ কমেনি। দেখার বিষয়, প্রশাসন বাড়তি লেন তৈরির কাজ কবে শুরু করে। সাধারন মানুষ এই বিষম যানজট থেকে আদৌ মুক্তি পান কী না।