গত বছরের জুলাইয়েও ঠিক একই জায়গায় হড়পা বান আছড়ে পড়েছিল। অমরনাথ গুহার কাছে হড়পা বানে গতবছর কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি, কারণ সে সময় অতিমারী পরিস্থিতিতে অমরনাথ যাত্রা পুরোপুরি স্থগিত ছিল। অতিমারির দাপট কাটিয়ে ছন্দে ফিরতেই চলতি বছর শুরু হয় অমরনাথ যাত্রা। আর যাত্রা শুরুর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই হড়পা বান কেড়ে নিয়েছে ১৭টি তাজা প্রাণ। এখনও নিখোঁজ বহু। কোন মতে যারা প্রাণে বেঁচেছেন তাঁদের সেদিন সন্ধ্যার সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের গান্দেরওয়াল জেলায় হড়পা বানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১৭। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার নাগাদ হড়পা বানে ক্ষতিগ্রস্তরা অমরনাথ মন্দিরের কাছে শিবিরে ছিলেন। আকস্মিক বন্যায় শিবিরের ওই অংশটি ভেসে গিয়েছে। উদ্ধার অভিযান তদারকি করতে শনিবার ভোরে অমরনাথ পবিত্র গুহায় পৌঁছেছেন আইজিপি কাশ্মীর এবং কাশ্মীরের বিভাগীয় কমিশনার। একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উদ্ধারে কাজে লাগানো হচ্ছে। খবর অনুসারে জানা গিয়েছে অন্তত ১৫ হাজার তীর্থযাত্রী, যাঁরা অমরনাথ পবিত্র গুহার কাছে আটকা পড়েছিল, তাদের অপেক্ষাকৃত নীচে পাঞ্জতারনির বেস ক্যাম্পে স্থানান্তরিত করা হয়। “কোন যাত্রীকে ট্র্যাকে রাখা হয়নি”, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের (আইটিবিপি) মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
জানা গিয়েছে গত বছর ২৮ জুলাই অমরনাথ গুহার সামনেই প্রবল বৃষ্টির কারণে হড়পা বানের সৃষ্টি হলেও ক্ষয়ক্ষতি সেভাবে হয়নি। নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের বেশ কয়েকটি তাঁবু হড়পা বানে ভেসে গেলেও কোন প্রাণ হানির ঘটনা ঘটেনি। এব্যাপারে রাজ্যের প্রশাসনিক এক কর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “ একই জায়গায় বার বার হড়পা বানের প্রবণতা যেখানে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সেই স্থানেও তীর্থযাত্রীদের তাঁবু স্থাপন করার অনুমতি দেওয়া একেবারেই উচিৎ ছিল না। পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণরূপে চিন্তাভাবনার অভাব ছিল, বিশেষ করে বছরের এই সময়ে আবহাওয়া সম্পর্কে আপডেট রাখাটা জরুরি ছিল”।
আরও পড়ুন: <আজই শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনের উদ্বোধন, কবে থেকে শুরু যাত্রী পরিষেবা?>
জম্মু কাশ্মীরের আবহাওয়া দফতরের আধিকারিক সোনম লোটাস বলেন, “ গত বছরের ২৮শে জুলাই অমরনাথে কতটা বৃষ্টি হয়েছিল তা সঠিক বলতে পারব না। যেহেতু করোনার কারণে অমরনাথ যাত্রা স্থগিত ছিল তাই ওই এলাকায় বৃষ্টিপাত পরিমাপ যন্ত্র বসানো হয়নি”। গত বছরের হড়পা বানের পর রাজভবনের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অমরনাথ গুহার কাছে হড়পা বানে কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর মেলেনি, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একটি যৌথ দল, উদ্ধারকার্য পরিচালনা করছে। পবিত্র গুহা মন্দিরটি নিরাপদ রয়েছে”। চলতি বছর নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনের তরফে দু ফুট উঁচু পাথরের একটি প্রাচীর নির্মাণ করা হয় যদিও হড়পা বানে মুহূর্তেই সেটি ভেঙ্গে হুহু করে জল ঢুকে তাঁবুগুলিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় ১.১৩ লক্ষ পূনার্থী অমরনাথ গুহায় মন্দিরে প্রবেশ করেছিলেন।
বর্তমান অবস্থার জেরে অমরনাথ যাত্রা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। আইটিবিপির মুখপাত্র বিবেক কুমার পাণ্ডে এএনআইকে জানিয়েছেন যে, প্রায় ৩০-৪০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। শনিবারই উদ্ধারকার্যের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৩৫ জন তীর্থযাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। জম্মু-কাশ্মীরের স্বাস্থ্য সচিব সানডে এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন “বালতালে বেস হাসপাতালে ৩৮ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ছয়জনকে শ্রীনগরের পাঠানো হয়েছে। সকলেই আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন। উদ্ধারাভিযান চলছে”।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, সিআরপিএফের ডিরেক্টর কুলদীপ সিং বলেছেন “ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া দুই তীর্থযাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে”। স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ বলেন, “ দীর্ঘ ভ্রমণের পরে, বেশিরভাগ তীর্থযাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। বাইরে তখন প্রবল বৃষ্টি। অনেকে তাঁবুর ভিতর ঘুমিয়েও পড়েছিলেন। হঠাৎ করে জলের স্রোত বাড়তে থাকে। আমরা চিৎকার করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলি। কিন্তু সকলেই এতটাই ক্লান্ত ছিল পালানোর সময়টুকু পায়নি তারা”।
জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা উদ্ধার কার্য নিয়ে এদিনও এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন যাতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিমান বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিনহা যাত্রীদের ক্যাম্পে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “প্রশাসনের তরফে তীর্থযাত্রীদের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাত্রা পুনরায় চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছি”। প্রথমবার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশনের মাধ্যমে সকল তীর্থযাত্রীদের ট্র্যাক করার পদ্ধতি চালু হয়েছে। যা উদ্ধারকার্যে তীর্থযাত্রীদের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করতে বিশেষ সাহায্য করেছে।