Advertisment

এখনও পুড়ছে অ্যামাজনের জঙ্গল, এই ঘা সারার নয়, মত বিশেষজ্ঞদের

নয় বছর ধরে চলা একটি সমীক্ষা বলছে, ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে এমনিতেই আমূল বদলে যাচ্ছে অ্যামাজন জঙ্গলের চরিত্র। ধ্বংস হয়েছে বহু পুরনো বড় গাছ, গড় আয়ু কমছে জীবিত গাছেরও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
amazon rainforest fire

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ছবি

সুখা মরসুমের শেষ হওয়া পর্যন্ত ব্রাজিলের অ্যামাজন জঙ্গলের বিধ্বংসী আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে এখন পর্যন্ত অক্ষত এলাকাগুলিতেও, যার ফলে বিপন্ন হয়ে পড়বে নানা প্রজাতির গাছ। কিন্তু এখনও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে না।

Advertisment

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অক্লান্তভাবে পুড়ে চলেছে অ্যামাজন জঙ্গলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যেখান থেকে আসে পৃথিবীর প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন। আন্তর্জাতিক মহলের মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও নেভানো যায়নি হাজার হাজার আগুন। গতবছরের তুলনায় জানুয়ারি এবং অগাস্টের মধ্যে আগুনের সংখ্যা বেড়েছে ৮২ শতাংশ। এবছরের অগাস্ট মাসেই খবর পাওয়া গেছে প্রায় ২৬ হাজার আগুনের।

আরও পড়ুন: অ্যামাজনের অগ্নিকাণ্ড এত উদ্বেগের বিষয় কেন?

amazon rainforest fire অধিকাংশ আগুনই লাগানো হয় সরকারিভাবে সংরক্ষিত জঙ্গলে। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ছবি

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আগুনের খবর এসেছে ব্রাজিলের পারা প্রদেশ থেকে, যেখানে আধিকারিকরা তদন্ত চালাচ্ছেন একদল কৃষকের ওপর, যাঁরা তথাকথিত 'আগুন দিবসের' আয়োজন করেছিলেন। খবরে প্রকাশ, ১০ অগাস্ট এই কৃষকরা আগুন ধরিয়ে দেন জঙ্গলের বেশ কিছু জায়গায়, রাষ্ট্রপতি হায়ের বোলসোনারোর প্রতি তাঁদের সমর্থন বোঝাতে। এর ফলে স্যাটেলাইট ছবিতে ধরা পড়ে আগুনের উৎসের আধিক্য।

পারা প্রদেশের স্থানীয় সংবাদপত্র 'ফলহা দো প্রোগ্রেসো'-তে প্রথম প্রকাশিত হয় অগ্নিকান্ডের খবর। এই কর্মকাণ্ডের এক উদ্যোক্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি জানায়, "আমরা রাষ্ট্রপতিকে দেখাতে বদ্ধপরিকর যে আমরা কাজ করতে চাই, এবং সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন জঙ্গলবিহীন এলাকাগুলিকে আগুন লাগিয়ে পরিষ্কার করে দিতে পারব আমরা।"

এক তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছেন, অধিকাংশ আগুনই লাগানো হয় সরকারিভাবে সংরক্ষিত জঙ্গলে। জঙ্গলের এই এলাকাগুলিতে সর্বদাই নজর থাকে জমি ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী (কিছু ক্ষেত্রে ফাটকাবাজ), এবং খনির মালিকদের। এছাড়াও পরিবেশ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার ওপর রাষ্ট্রের ছাড়, এবং সরকারি সংস্থা ব্রাজিলিয়ান ইন্সটিটিউট অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড রিনিউয়েবল ন্যাচারাল রিসোর্সেজের কাছ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কমতে থাকা সাহায্যের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: প্রায় ৪০ হাজার ছোটবড় আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অ্যামাজনের জঙ্গল

ইতিমধ্যেই বোলসোনারোর শিথিল পরিবেশ নীতির কারণে অ্যামাজনের জঙ্গল সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত অ্যামাজন ফান্ডে অর্থ প্রদান করা বন্ধ দিয়েছে নরওয়ে এবং জার্মানি। দক্ষিণপন্থী এই নেতা এখন পর্যন্ত আগুন নেভানোর জন্য সবরকম জরুরি আন্তর্জাতিক সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন।

amazon rainforest fire আগুন ছড়াবে গভীরতর জঙ্গলেও। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ছবি

অরণ্যবিনাশের ফলে যেসব এলাকা ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলি আগুনের ক্ষেত্রে আরও বেশি বিপদগ্রস্ত।বিশেষজ্ঞদের মতে, এইসব এলাকার গাছপালা শুকনো হওয়ার ফলে আগুন ধরে আরও সহজে। এছাড়াও অনাবৃষ্টি হলে চাপ বাড়ে জঙ্গলের ওপর, যখন গাছের পাতা ঝরে যাওয়ার ফলে রদের আলো সরাসরি এসে পড়ে মাটিতে এবং আগাছায়। এর ফলে গভীরতর জঙ্গলেও ছড়াবে আগুন।

নয় বছর ধরে চলা একটি সমীক্ষা বলছে, ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে এমনিতেই আমূল বদলে যাচ্ছে অ্যামাজন জঙ্গলের চরিত্র। ধ্বংস হয়েছে বহু পুরনো বড় গাছ, গড় আয়ু কমছে জীবিত গাছেরও। যেসব এলাকায় আগুন নেভার পর কিছুটা হলেও ফের দেখা দিয়েছে সবুজের আভাস, সেখানেও আগামী অন্তত সাত বছর বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ছাড়া, বা কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেওয়ার কাজ করতে পারবে না অ্যামাজনের জঙ্গল। এবং আগুন লাগার আগে যেসব প্রজাতির গাছ পাওয়া যেত এলাকায়, সে সবই যে ফিরে আসবে এমন কথা নেই।

গত কয়েক দশকের তুলনায় এমনিতেও পাল্টেছে অ্যামাজনের পরিবেশ। ষাট বছর আগের তুলনায় গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এক ডিগ্রি, এবং ৪০ বছর আগের তুলনায় সুখার মরসুম দীর্ঘায়িত হয়েছে অন্তত তিন সপ্তাহ।

amazon
Advertisment