২০০ রোগীর দেহ বয়েছিলেন, করোনাই কাড়ল অ্যাম্বুল্যান্স চালকের প্রাণ

বেওয়ারিশ লাশের সৎকারের দায়িত্বও কখনও কখনও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আরিফ। তা সে হিন্দু হোক বা মুসলিম অথবা অন্য কোনও ধর্মের।

বেওয়ারিশ লাশের সৎকারের দায়িত্বও কখনও কখনও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আরিফ। তা সে হিন্দু হোক বা মুসলিম অথবা অন্য কোনও ধর্মের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অ্যাম্বুল্যান্স চালক আরিফ খান (বাঁদিক থেকে দ্বিতীয়)

গত ৬ মাস ধরে চার চাকার গাড়িই ছিল তাঁর ঘর। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সিলামপুরে নিজের বাড়ি থেকে ২৮ কিমি দূরে একটি পার্কিং লটে অ্যাম্বুল্যান্সেই শেষ ৬ মাস শুতেন আরিফ খান। মোবাইল ফোনই ছিল বউ ও চার সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার একমাত্র মাধ্যম। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্স চালক আরিফ গত ৬ মাস ধরে করোনা রোগীদের পরিষেবায় নিযুক্ত ছিলেন। ২৪ ঘণ্টা, ৭ দিন। ক্লান্তিতেও কর্তব্য অটুট ছিলেন ৪৮ বছরের আরিফ। কিন্তু করোনা থেকে ছাড় পেলেন না তিনিও। মারণ ভাইরাসই শেষপর্যন্ত প্রাণ কাড়ল দিল্লির এই করোনা যোদ্ধার।

Advertisment

শহিদ ভগৎ সিং সেবাদলের কর্মী আরিফ দিনরাত করোনা রোগীদের পরিষেবা দিতেন। তাও আবার বিনামূল্যে। কখনও কখনও করোনায় মৃত রোগীর পরিবারকে দেহ সৎকারের জন্য নিজের পকেট থেকে টাকাও দিয়ে দিতেন। বেওয়ারিশ লাশের সৎকারের দায়িত্বও কখনও কখনও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আরিফ। তা সে হিন্দু হোক বা মুসলিম অথবা অন্য কোনও ধর্মের। মানবসেবার জন্য ধর্মকে অন্তরায় হতে দেননি আরিফ। তাঁর বন্ধু জিতেন্দর কুমার বলেছেন, গত মার্চ থেকে অন্তত ২০০ করোনা রোগীর দেহ বহন করেছেন আরিফ। যে মানুষটা কোনও দেহের সৎকারে সমস্যা হতে দেননি, সেই আরিফের সৎকার করতে পারল না তাঁর পরিবার। বন্ধুর নিথর দেহর দিকে তাকিয়ে একথা বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে জিতেন্দরের।

আরও পড়ুন ভিন্ন ধর্মে বন্ধুত্ব, দিল্লিতে তরুণীর ভাইয়ের হাতে যুবক খুন

আরিফের রিপোর্ট পজিটিভ আসে গত ৩ অক্টোবর। হাসপাতালে ভর্তির একদিন পরই মৃত্যু হয় তাঁর। ছেলে আদিল (২২) জানালেন, শেষবার বাবাকে বাড়িতে দেখেছিলেন গত ২১ মার্চ। তারপর মাঝেমাঝে বাবা স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে যেতেন। বলেছেন, "বাবাকে নিয়ে আমরা চিন্তায় থাকতাম। কিন্তু বাবা কোনওদিনই করোনাকে ভয় পাননি। শুধু মন দিয়ে নিজের কাজ করে গিয়েছেন।" আরেক ছেলে আসিফ বলেছেন, "আমরা বাবাকে আলবিদাও জানাতে পারলাম না। বাবাকে ছাড়া কীভাবে বাঁচব?" আরিফ মাসে ১৬ হাজার টাকা বেতন পেতেন। কিন্তু তাঁদের ঘরভাড়াই ছিল ৯ হাজার টাকা। সংসারের একমাত্র রোজগেরে মানুষের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছে সবাই। দুই ছেলে টুকটাক কাজকর্ম করলেও স্থায়ী কোনও চাকরি পায়নি লকডাউনের মধ্যে।

Advertisment

সেবাদলের প্রতিষ্ঠাতা জিতেন্দ্র সিং শান্টি অশ্রুসজল চোখে জানান, "ও অ্যাম্বুল্যান্স চালক হলেও কখনও কখনও সৎকারে সাহায্য করত। আরিফ মুসলিম হলেও হিন্দু রোগীর দেহ সৎকারেও এগিয়ে যেত। কাজের প্রতি ওঁর নিষ্ঠা ছিল দেখার মতো। গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটা হাসপাতাল বিল না মেটানোয় রোগীর আত্মীয় দেহ ছাড়ছিল না। তখন আরিফ গিয়ে নিজের সর্বস্ব দিয়ে তাঁদের সাহায্য করেছিল। এমন মানবদরদী মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।"

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

COVID-19