বাংলাদেশ থেকে 'অবৈধ উপায়ে ভারতে আসা অভিবাসী'দের সম্পর্কে কেন্দ্র প্রথম থেকেই বেশ কড়া মনোভাব পোষণ করে আসছে। সমাজের ঘুণ পোকা আখ্যা দেওয়া থেকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ার হুমকি, মোদী সরকারের জমানায় সবই জুটেছে তাঁদের কপালে। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করার বিষয়, নাগরিক পঞ্জি নিয়ে অনেকটাই সুর নরম করেছে কেন্দ্র। গত ৮ সেপ্টেম্বর বিজেপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ভাষণ আপলোড করা হয়েছিল। সেই ভাষণ খুঁটিয়ে পড়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। তাতে এটুকু স্পষ্ট, নাগরিক পঞ্জি নিয়ে হঠাৎই সুর পাল্টেছে বিজেপি। ৫ অক্টোবরের পর যে আটটি সভা করেছেন অমিত শাহ, তার কোথাও উল্লেখ নেই এনআরসি-র।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য বিজেপি এনআরসি নিয়ে এতদিন যতটা আক্রমণাত্মক হয়েছিল, এবার সেই নীতি পালটানোর নির্দেশ এসেছে বিজেপির কাছে। বাংলাদেশে আগামী ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন রয়েছে। তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আরও পড়ুন, নেতৃত্বের সবাই প্রার্থী হলে ভোট সামলাবে কে? বিজেপিতে গুঞ্জন
২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দলের কর্মীদের উদ্দেশে অমিত শাহ বলেছিলেন, "অবৈধ অনুপ্রবেশ ভারতে ঘুণ পোকার মতো বেড়ে চলেছে। দিল্লিতেও সমস্যা বাড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের পদক্ষেপ যেন দেশভক্তদের আতঙ্কের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়"। অমিত শাহের এই মন্তব্য খুবই সমালোচিত হয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক এই প্রসঙ্গে বলেন এ ধরণের মন্তব্য কাঙ্ক্ষিত নয়।
প্রসঙ্গত, 'ঘুণ পোকার' তুলনা কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই বাদ পড়েছে বিজেপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। নাগরিক পঞ্জির প্রসঙ্গও আজকাল সচরাচর উঠছে না বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতির ভাষণে।
সেপ্টেম্বর ৮ থেকে শুরু করে, ১১, ১৫, ১৬, ১৭, ২১, ২৩, ২৫, ২৬, ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ৪ অক্টোবরের অমিত শাহের বক্তৃতায় একটানা অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে খুবই আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল। ৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত কেরালা, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিসগড়ে যে ১৫ টি সভায় অমিত শাহ বক্তব্য রেখেছেন, তার মধ্যে আটটিতে নাগরিক পঞ্জির প্রসং উল্লেখ করা হয়নি। মনে রাখতে হবে এই তিন রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি।
আরও পড়ুন, রাজ্যের নাম বদল নিয়ে টালবাহানায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
১২ নভেম্বরের এক ভিডিওতে মধ্যপ্রদেশের এক সভায় বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে অমিত শাহকে বলতে শোনা গিয়েছে, "আমাদের দেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা যে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, দেশের গরিবদের তা পাওয়ার কথা। কংগ্রেস এটাকে মানবাধিকারের ইস্যু করে তুলতে চেয়েছে। ২০১৯ এ আবার ক্ষমতায় এসে আমরা নতুন নীতি তৈরি করব। তখন অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে। আমাদের কাছে ভোট ব্যাঙ্ক গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এনআরসি নিয়ে বিজেপি কী ভাবছে প্রশ্ন করা হলে বিজেপির মুখপাত্র জি ভি এল রাও বলেছেন, "শীর্ষ আদালত তাঁর সিদ্ধান্ত জানালে স্পষ্ট হয়ে যাবে কারা ভারতীয় নাগরিক এবং কারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তখন আইন তার নিজের পথেই চলবে। যারা ভারতের নাগরিক নন, তাদের কী হবে তা খুব পরিষ্কার। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যে সমস্ত সংখ্যালঘু হিন্দু এবং শিখ আছেন, তাদের ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হবে। এ দেশের নাগরিকত্বও পাবেন তারা"।
Read the full story in English