অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পর শনিবার প্রথমবার জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, ৩৭০ বিলোপের পর থেকে উপত্যকায় সন্ত্রাস এবং পাথর ছোঁড়ার ঘটনা কমেছে। এদিন জম্ম-কাশ্মীরের ইয়ুথ ক্লাবে বক্তব্য রাখেন শাহ। সেখানে তিনি বলেন, উন্নয়নের পথে যে বাধা হবে আর শান্তি-শৃঙ্খলা যে ভঙ্গ করবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন তিনি দাবি করেন, ভূস্বর্গে পাথর নিক্ষেপ সন্ত্রাস অদৃশ্য হয়েছে। আমি আশ্বস্ত করছি, উন্নয়নের পথে যে বাধা হবে আর শান্তি-শৃঙ্খলা যে ভঙ্গ করবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা আমাদের অঙ্গীকার। তিনি আরও বলেছেন, ২০১৯, ৫ অগস্ট দিনটা খুব উল্লেখযোগ্য। এই দিনটা সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। এই দিন সন্ত্রাসবাদ, স্বজনপোষণ, দুর্নীতির ইতি হয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের যুব সমাজকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উন্নয়নে শামিল হতে হবে। এটা তাঁদের দায়িত্ব।
প্রসঙ্গত, ৫ অগস্ট, ২০১৯ সালে কাশ্মীর থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের পর প্রথম শনিবার ভূস্বর্গে পা রাখলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। তিনদিনের সফরে কাশ্মীরে যান তিনি। সফরের প্রথমেই গত মাসে জঙ্গিদের হাতে শহিদ ইনস্পেক্টর পারভেজ আহমেদের বাড়িতে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র শহিদ পুলিশ অফিসারের স্ত্রীর হাতে তুলে দেন শাহ।
শাহের সঙ্গে ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এবং ডিজিপি দিলবাগ সিং। এদিন শ্রীনগর এয়ারপোর্টে শাহকে অভ্যর্থনা জানান মনোজ সিনহা এবং প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকরা। গত কয়েক মাসে ধারাবাহিক ভাবে অশান্ত কাশ্মীর। একের পর এক সাধারণ নাগরিকের হত্যায় প্রশ্নের মুখে নাগরিক সুরক্ষা। জঙ্গিরা পুলিশ-সেনা তো বটেই, এবার ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক, সাধারণ বাসিন্দা, বিজেপির নেতা-কর্মীদের টার্গেট করেছে। তার মধ্যেই শাহের কাশ্মীর সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
এদিন রাজভবনে মনোজ সিনহা, ডিজিপি, প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে সুরক্ষা সংক্রান্ত বৈঠকে বসেন শাহ। সেই বৈঠকে ছিলেন চার কর্পস কম্যান্ডার, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা, ইন্টেলিজেন্সের শীর্ষকর্তারা, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে জবাবদিহি চান শাহ। কেন বার বার রক্তাক্ত হচ্ছে, সন্ত্রাস কেন কমছে না, তার উত্তর চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন পরে জঙ্গিদের হাতে নিহত শিখ শিক্ষক মাখন লাল বিন্দ্রু এবং এক মুসলিম বাসিন্দার বাড়িতেও যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন জঙ্গি হামলায় শহিদ ইনস্পেক্টর পারভেজের বাড়িতে শাহ, স্ত্রীকে দিলেন চাকরির কাগজ
উল্লেখযোগ্য হল, এই সফরে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় পুলওয়ামার লেথপুরায় ৪০ শহিদ সিআরপিএফ জওয়ানের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন অমিত শাহ। লেথপোরায় সেই ভয়াবহ হামলায় আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরই বালাকোটে এয়ারস্ট্রাইক করে ভারতীয় বায়ুসেনা।
রবিবার জম্মু উড়ে যাবেন শাহ। সেখানে আইআইটি সমাবর্তনে অংশ নেবেন। তারপর দুপুরে একটি জনসভা করবেন তিনি। সেখানে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সঙ্গেও দেখা করবেন শাহ। তারপর শ্রীনগরে উড়ে যাবেন তিনি। প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহে উপত্যকায় ১১ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক, মুসলিম কাশ্মীরি জঙ্গিদের হামলায় নিহত হয়েছেন। যদিও নিরাপত্তা বাহিনী ১৭ জন জঙ্গিকে নিকেশ করেছে গত কয়েকদিন। তাও শান্ত হচ্ছে না কাশ্মীর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন