বছর ৩০-এর অমৃতপাল সিং গত ৬-৭ মাস যাবৎ সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন। পাঞ্জাবের এক বিচ্ছিন্নতাবা্দী খালিস্তানি নেতা হিসাবে ‘লাইমলাইটে’ আসেন তিনি। কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বছরব্যাপী কৃষকদের বিক্ষোভ চলাকালীন, অমৃতপাল দুবাই থেকে ভারতে আসেন এবং আন্দোলনে যোগ দেন। বেশ কিছুদিন ধরেই নিরাপত্তা সংস্থার র্যাডারে ছিলেন অমৃতপাল সিং। বড় অশান্তি সৃষ্টি করে সঙ্গীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা, নেপথ্যে কী কারণ তা ভাবিয়েছে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও । জানা গিয়েছে দুবাইতে থাকার সময় ট্রাক ড্রাইভারি করতেন অমৃতপাল সিং। পড়াশুনাতেও বিশেষ একটা ভাল ছিল না সে। পলিটেকনিক কলেজের 'ড্রপআউট' অমৃতপাল দীপ সিধুর সান্নিধ্যেই ওরারিস পাঞ্জাব দে সংগঠনের ছত্রছায়ায় আসে।
দীপ সিধুর ভাই মনদীপ সিধুও মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছিলেন কীভাবে দীপ সিধু নিজেকে অমৃতপাল থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। যাইহোক, ওয়ারিস পাঞ্জাব দে গঠনের কয়েকদিন পর, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ দীপ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। তার পরিবার এবং অন্যান্য সদস্যদের হতবাক করে, সংগঠনের ফেসবুক পেজে ঘোষণা করা হয় যে অমৃতপাল সংগঠনের নতুন প্রধান এবং ফেসবুকে নিয়োগের একটি চিঠিও পোস্ট করা হয়েছিল। অমৃতপাল পাঞ্জাবের সমস্যাগুলির চেয়ে খালিস্তানি চিন্তাধারা নিয়ে তার মতামত ছড়িয়ে দেন। কীভাবে আলাপ দীপ সিধুর সঙ্গে? জানা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ 'ক্লাবহাউসের' মাধ্যমেই দীপ সিধুর সঙ্গে আলাপ অমৃতপাল সিংয়ের।
পঞ্জাবের শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষদের নিয়ে পৃথক খালিস্তানি রাষ্ট্র গড়ে তোলার দাবি জানান খালিস্তান সমর্থকরা। সম্পূর্ণ পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশের কিছু কিছু অংশ নিয়ে এই আলাদা রাষ্ট্র গড়ে তোলার দাবি জোরদার হয়। তবে, মূলত পঞ্জাবের সাধারণ মানুষের দাবি জানানোর জন্যই গড়ে উঠেছিল ‘ওয়ারিস পঞ্জাব দে’, এই দলটি গড়েছিলেন তৎকালীন অভিনেতা থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা দীপ সিধু। তাঁর দলের সক্রিয় ‘কর্মী’ ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভিন্দ্রানওয়ালের ভক্ত অমৃতপাল সিং।
বছর ৩০-এর অমৃতপাল সিং গত ৬-৭ মাস যাবৎ সংবাদ শিরোনামে রয়েছেন। পাঞ্জাবের এক বিচ্ছিন্নতাবা্দী খালিস্তানি নেতা হিসাবে ‘লাইমলাইটে’ আসেন তিনি। কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরুদ্ধে বছরব্যাপী কৃষকদের বিক্ষোভ চলাকালীন, অমৃতপাল দুবাই থেকে ভারতে আসেন এবং আন্দোলনে যোগ দেন। বেশ কিছুদিন ধরেই নিরাপত্তা সংস্থার র্যাডারে ছিলেন অমৃতপাল সিং। বড় অশান্তি সৃষ্টি করে সঙ্গীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা, নেপথ্যে কী কারণ তা ভাবিয়েছে দুঁদে গোয়েন্দাদেরও ।
অমৃতপাল সিং তলোয়ার, লাঠি ও বন্দুক নিয়ে সমর্থকদের সঙ্গেনিয়ে অমৃতসরের আজনালা থানায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। পরদিনই আদালতের নির্দেশে অমৃতপাল সিংয়ের সহযোগী লাভপ্রীত সিং ‘তুফান’কে মুক্তি দেওয়া হয়। পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে হতবাক করেছে এবং তারপর থেকেই ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ সংস্থার প্রধান অমৃতপাল সিং তদন্তকারী সংস্থার র্যাডারে ছিলেন। অমৃতপাল সিং খোলাখুলিভাবে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারণাকে সমর্থন করার কথা বলেছেন।
অমৃতপাল সিং অমৃতসর জেলার জল্লুপুর খেদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে কাজের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সম্প্রতি ভারতে ফিরে আসেন। এখন তিনি খালিস্তানি সমর্থক দীপ সিধুর সংগঠন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’-এর প্রধান। সম্প্রতি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান দীপ সিধু। কৃষক আন্দোলনের সময় লাল কেল্লার হিংসার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। অমৃতপাল সিং, একজন স্বঘোষিত খালিস্তানি সমর্থক, পৃথক শিখ রাষ্ট্রের দাবি করে আসছে এই সংগঠন এবং একাধিক উস্কানিমূলক বক্তব্যও নাম জড়ায় তার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে পরোক্ষভাবে হুমকি দেন তিনি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পাঞ্জাবের মোগা জেলারীক সমাবেশে ভাষণ দেওয়াকালীন সময়ে এই হুমকি দেন। সংবাদ সংস্থা এএনআই-সূত্রে খবর, অমৃতপাল সিং তার বিবৃতিতে বলেছেন, “অমিত শাহ বলেছিলেন যে তিনি খালিস্তান আন্দোলনকে বাড়তে দেবেন না। আমি বলেছিলাম যে ইন্দিরা গান্ধীও তাই করেছেন এবং যদি আপনি তা করেন তবে আপনাকে তার মুখোমুখি হতে হবে। যার পরিণতি খুবই ভয়ঙ্কর।”
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। গতকাল সকালে পাঞ্জাবের মোগায় আত্মসমর্পণ করেছেন খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী পলাতক অমৃতপাল সিং। অমৃতপাল সিং আত্মসমর্পণের আগে মোগা জেলার এক গ্রামের একটি গুরুদ্বারে এক সমাবেশে ভাষণ দেন। আত্মসমর্পণের আগে, খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী এই নেতা বলেন, “এখানেই শেষ নয়”।
পুলিশ সূত্রে খবর, খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অমৃতপাল সিং আত্মসমর্পণের আগে এক গুরুদ্বারে একটি সমাবেশে ভাষণ দেন, তারপর তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তাকে পাঞ্জাব পুলিশ আজ সকালে মোগা থেকে গ্রেফতার করে। সম্ভবত আসামের ডিব্রুগড়ে স্থানান্তরিত করা হতে পারে এই খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে অমৃতপাল সিং মোগার রোদেওয়াল গুরুদ্বারে একটি সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন। পাঞ্জাব পুলিশের আইজিপি সুখচাইন সিং গিল, রবিবার সকাল ১০টায় চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাব পুলিশ সদর দফতরের সকাল ১০ টায় এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছেন। অমৃতপাল সিংয়ের স্ত্রী কিরণদীপ কৌরকে লন্ডনে পালানোর চেষ্টা করার সময় অমৃতসর বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করার তিন দিন পর আত্মসমর্পণ করেন এই খালিস্তানি নেতা। অমৃতপালকে ধরতে গত ১৮ ই মার্চ থেকে পাঞ্জাব পুলিশ অভিযান জারি রাখে। অবশেষে গতকাল সকালে এল সাফল্য।
‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ সংগঠনের একাধিক সদস্যকে ইতিমধ্যেই নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। অমৃতপাল সিং,কে ভাটিন্ডা থেকে ডিব্রুগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কড়া নিরাপত্তায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ডিব্রুগড় জেল।
পাঞ্জাব পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেছেন, ‘অমৃতপালের স্ত্রীকে লন্ডন উড়ে যাওয়ার সময় আটকের পর থেকে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকী স্ত্রী’র গ্রেফতারি নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন ছিলেন এই খালিস্তানি নেতা। কিরণদীপের ভারতে ভিসার মেয়াদ ছিল জুলাই পর্যন্ত এবং সে তার আগেই তিনি ভারত ছাড়তে চেয়েছিলেন। অমৃতপাল সিং ভারত থেকে পালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ তিনি চেয়েছিলেন যে তার স্ত্রী নিরাপদে দেশ থেকে লন্ডনে যাক’।