রবিবার অমৃতসরের সিভিল হাসপাতালে শান্ত হয়েছিল ১০ বছরের বিশাল। যন্ত্রণা আর আতঙ্কের ছাপ তার মুখে স্পষ্ট। তার মাথায় ব্যান্ডেজ, একবার পায়ের দিকে, একবার পেটের দিকে, একবার মুখের দিকে আঙুল নিয়ে গিয়ে মা-কে বলতে চায় যে বড্ড ব্যথা করছে তার।
বিশালের বাবা রাজেশ সাহনি ফলের গাড়ি থেকে ফল বিক্রি করেন। বিশাল ও তার অন্য দুই সন্তানকে নিয়ে ঘটনাবহুল রাতে তিনিও গিয়েছিলেন রাবণদহন দেখতে, যে রাবণদহনের ট্র্যাজেডি ৫৯ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সাহনি পরিবার আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে গেছে।
আরও পড়ুন, Amritsar train accident: এত চিতা আগে দেখেনি এ শ্মশান
কিন্তু এ ভয়াবহ স্মৃতি জীবনেও ভুলবেন না ওঁরা, বলছিলেন বিশালের মা কালিন্দী।
হাতে ব্যান্ডেজ করা স্বামী রাজেশ সাহনির পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে কালিন্দী বলছিলেন, ‘‘খুব ভয় পেয়ে গেছে... কোনও কথা বলছে না... আগে কত কথা বলত...’’।
শুক্রবারের ঘটনার কথা মনে করার চেষ্টা করছিল বিশাল, কিন্তু মাঝপথেই থেমে গেল। ‘‘আমার কিছু মনে নেই। আমি পড়ে গেলাম, তারপর কী হল আমি আর জানি না। আমি মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম, আমার মাথায় এখনও ব্যথা করছে।’’
তবে ট্রেন আসার আগে কী ঘটেছিল, তা স্পষ্ট মনে আছে তার। ‘‘আমরা রাবণ পোড়ানো দেখছিলাম। অনেক বাজি পুড়ছিল। খুব শব্দ হচ্ছিল, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পেয়ে আমি কানে আঙুল দিয়েছিলাম। আমি পিছন দিকে হাঁটতে শুরু করেছিলাম, হঠাৎ অনেক লোক আমাকে ধাক্কা মেরে আমার উপর দিয়ে চলে যায়। তারপর কী হয়েছিল আমি আর জানি না।’’
বিশালের বাবা রাজেশ সাহনি বললেন, ‘‘আমার বাচ্চারা বা আমি রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়েছিলাম না। ট্রেন অন্যদের চাপা দেওয়ার পর লোকজন আমাদের পিষে দিয়ে দৌড়তে থাকে। আমার বাচ্চারা নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না, আমি ওদের টেনে তুলি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ওরা তখনও বেঁচে ছিল।’’
কালিন্দী বলছিলেন তাঁর তিন সন্তান, বিশাল, বিবেক (১২) এবং কাজল (৮) এই ট্রমা থেকে খুব শিগগির বেরোতে পারবে না।
‘‘আমার মেয়েটা এখনও মাঝরাতে কেঁদে উঠে বলছে রাবণ দেখতে যাব না। ওরা আরঅন্য কোনও মেলাতে যেতে চায় না।’’
আরও পড়ুন, ‘‘এমার্জেন্সি ব্রেক ব্যবহার করেও সময়মতো থামাতে পারিনি, পাথর ছোড়া শুরুর পর ট্রেন চালিয়ে দিয়েছি’’
‘‘গত ১২-১৩ বছর আমরা কোনও মেলায় যাইনি। এ বছর বিশাল মেলায় য়েতে চেয়েছিল। ও বাবাকে বলেছিল মেলায় নিয়ে যেতেই হবে। আমার মনে হয় আমার বাচ্চারা আর কোনওদিন এ আবদার করবে।’’
এর মধ্যেই বিশাল বলে ওঠে, ‘‘সব জায়গায় ব্যথা করছে... রাবণ দেখতে যাব না, কোনও দিন যাব না।’’
Read Full Story in English