মণিপুর হিংসা নিয়ে উত্তাল সংসদ। বিরোধীরা মোদীর বিবৃতির বাদিতে অনড়। ইতিমধ্যে পেশ করা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব। মণিপুরে হিংসায় ঘি ঢালে একটি ভাইরাল ভিডিও। যাকে কেন্দ্র করে নিন্দার ঝড় বয়ে যায় দেশজুড়ে। এমনকী এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মণিপুর নিয়ে দেওয়া বিবৃতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়িয়েছে ভারতের। মণিপুরে তিন মাসের বেশি সময় ধরে কুকি ও মেইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত হিংসা মারাত্মক আকার ধারণ করে। কিন্তু এই হিংসার বীজ বপন করা হয় তারও কয়েক মাস আগে। আভাস আগেই ধরা পড়েছিল।
মণিপুরের হিংসা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে একটানা জ্বলছে ভারতের একটি রাজ্য, কীভাবে? সব আশ্বাসের পরও শেষ পর্যন্ত হিংসা থামছে না কেন? প্রশ্ন অনেক, অভিযোগও অনেক। কিন্তু এই পুরো বিতর্কটি কয়েক মাস নয়, কয়েক বছরের পুরনো। মণিপুরে আজ যা কিছু ঘটছে, তার জন্য দায়ি আগের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হিংসার জন্য আদালতের নির্দেশ এবং কিছু ঘটনাকে দায়ি করেছেন। কিন্তু দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা কয়েক দশক ধরে অব্যাহত। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সেই হিংসাই চরম আকার ধারণ করেছে।
২৪মে, ২০২২-এ গ্রেফতার করা হয় টি হাওকিপকে। তিনি চুড়াচাঁদপুরের একজন সমাজসেবক ছিলেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কুকি সম্প্রদায়ের কিছু দাবি পোস্ট করে বিতর্কে জড়ান। শুরু হয় বিতর্ক। মেইতি সম্প্রদায়ের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। এমন পরিস্থিতিতে অধিকারের সংগ্রাম শুরু হয় এবং গ্রেফতার করা হয় হাওকিপকে।
সেই এক গ্রেফতার থেকে শুরু হয় জন্ম দেয় হাজার প্রশ্নের। গ্রেফতারির প্রতিবাদে চুড়াচাঁদপুরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংগঠিন হয়। গত বছরের ২৮ মে জামিন পান এই সমাজকর্মী। এখন এই একটি গ্রেফতার এবং তার উপর দেওয়া কিছু বিবৃতি কুকি ও মাইতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষের প্রাচীরকে আরও শক্তিশালী করেছে।
গত বছর মেইতি সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ থাংজিং পাহাড়ে যাওয়ার সময় কুকি সম্প্রদায় তাদের বাধা দেয়। এরপর ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার কর্মীদের হস্তক্ষেপ করতে হয় এবং তার পরেই মেইতি সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে প্রবেশ করে। কিন্তু ঘটনাটি দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। বীরেন সরকারের আমলে একটি নির্দেশ ঘিরে ফের চওড়া হয় ফাটল। গত বছরের আগস্টে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, চুড়াচাঁদপুর ও ননী এলাকায় বিদ্যমান ৩৮টি গ্রাম অবৈধ, যেগুলি বনাঞ্চলে নির্মিত। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে কুকি সম্প্রদায় প্রবল্ভাবে ক্ষুব্ধ হয়। আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা করে কুকি নেতারা। চলতি বছরের মার্চে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকারের সেই প্রচেষ্টাও অসন্তোষকে উস্কে দেয় এবং হিংসার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গত বছর, বীরেন সিং পার্বত্য জেলাগুলিতে পপি চাষের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছিলেন এবং উপজাতীয় এলাকায় অবৈধ গ্রামগুলিতে চলে অভিযান। নিরাপত্তা সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক বলেছেন ‘পপি চাষের মাথাদের বিরুদ্ধে যারা ইম্ফলে বসে আছেন, যাদের বিরুদ্ধে সরকার সত্যিই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি’।
এরপর মণিপুর হাইকোর্টের এক আদেশে আগুনে ঘি ঢালে। যেখানে রাজ্য সরকারকে মেইতিদের এসটি মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়েছিল। ১৪ এপ্রিলের আদেশটি হাইকোর্টে মেইতি ট্রাইব ইউনিয়নের দায়ের করা একটি পিটিশনের ভিত্তিতে আসে। যাতে মণিপুর সরকারকে কেন্দ্রের উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে একটি সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য মণিপুর সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে সংবিধানের ST তালিকায় মেইতি সম্প্রদায়কে মণিপুরের উপজাতি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।