/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/03/cats-37.jpg)
কাঠের আসবাবপত্রের নকশার চাহিদা এখনও আকাশছোঁয়া। ভারত কেবল প্রক্রিয়াজাত কাঠ রপ্তানির অনুমতি দেয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা কাঠ গৃহস্থালি, আসবাবপত্র এবং অন্যান্য পণ্যের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। সেই সঙ্গে ভারতে ‘বন শংসাপত্র’(forest certification) চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। কাঠের পণ্যের ব্যবসা ক্রমবর্ধমান। জারি করা শংসাপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন। কেটে ফেলা হচ্ছে হাজারে হাজারে গাছ। বিপন্ন পরিবেশ। জলবায়ু সংক্রান্ত হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে দেশ।
‘বন উজাড় রোধ’ করার অর্থ এই নয় যে পণ্যের জন্য একেবারেই গাছ কাটা যাবে না। আসলে, পর্যায়ক্রমে গাছ কাটা বনাঞ্চল রক্ষার জন্য একান্ত ভাবেই প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্যকর। গাছের একটি নির্দিষ্ট জীবনকাল আছে, যার পর তাদেরও ক্ষয় হয়। বৃহৎ আকারে বন উজাড় করা সবসময়ই পরিবেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বন উজাড় বিশ্বব্যাপী একটি সংবেদনশীল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনাঞ্চল প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে যা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে্র ফলেই পরিবেশে নির্গত হয়, বনাঞ্চল উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২১ সালে গ্লাসগো জলবায়ু সভায়, ১০০ টিরও বেশি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধ করার এবং সমাধান খুঁজে বের করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বন উজাড় বন্ধ করার অর্থ এই নয় যে পণ্যের জন্য টেকসই বন কাটা যাবে না। আসলে, পর্যায়ক্রমে গাছ কাটা বনের জন্য প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্যকর। গাছেরও একটি জীবনকাল আছে, যার পর তাদেরও ক্ষয় হয়। এছাড়াও, একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে, গাছের কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করার ক্ষমতা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাজা গাছ কাটা সবসময়ের জন্য পরিবেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকে ডেকে আনে।
বনাঞ্চল এবং বন-ভিত্তিক পণ্যগুলির টেকসই ব্যবস্থার জন্য দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে একটি ফরেস্ট স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিল, বা এফএসসি, অন্যটি ফরেস্ট সার্টিফিকেশনের অনুমোদনের প্রোগ্রাম। FSC সার্টিফিকেশন বেশি জনপ্রিয় এবং এর চাহিদাও বেশি, পাশাপাশি এটি ব্যয়বহুল। ‘ব্যাপক অন্যায়ের অভিযোগে’ এই ফরেস্ট সার্টিফিকেশনকে নিয়েই। এর মধ্যেই হারিয়ে যেতে বসেছে বনাঞ্চল। থার্ড পার্টির মাধ্যমে গ্যাঁটের কড়ি খরচ করলেই মিলবে এই শংসাপত্র।
শচীন রাজ জৈন বলেছেন, “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরণের শংসাপত্র অনেকটাই আই ওয়াশের মত কাজ করে”। ‘বন শংসাপত্র’ মূলত রপ্তানিকারকদের প্রদান করা হয় যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় বাজারগুলিতে কাঠের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। নিয়ম অনুসারে শুধুমাত্র প্রক্রিয়াজাত কাঠের রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। কাঁচা কাঠ নয়। সেই সব কাগজে কলমে। বাস্তবের ছবিটা একেবারেই ভিন্ন।টাকা দিয়ে সহজেই সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে মেয়াদ অতিক্রম হলেও তা আর রিনিউ করা হয়নি।
গত কয়েক মাস ধরে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বেশ কয়েকটি শংসাপত্র প্রদানকারী সংস্থা এবং শংসাপত্র প্রাপক, ব্যবসায়ী, অতীত এবং বর্তমান বন কর্মকর্তা, সরকারি প্রতিনিধি এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে কথা বলেছে এই বিষয়ে। তদন্তে জানা গিয়েছে প্রচুর সংখ্যক সংস্থার CoC সার্টিফিকেশন আছে, ৪০শতাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ । এখন পর্যন্ত, এফএসসি দ্বারা স্বীকৃত ১৫২৭টি CoC শংসাপত্র রয়েছে এবং ১০১০টি মেয়াদোত্তীর্ণ। ভারতে মোট ১০৫টি সংস্থা এখনও পর্যন্ত PEFC CoC সার্টিফিকেশন পেয়েছে, যার মধ্যে ৪০টির মেয়াদ শেষ হয়েছে বা স্থগিত করা হয়েছে।
তদন্তে দেখা গেছে যে ভারতে এই ধরণের শংসাপত্রগুলি মূলত ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাঠের সামগ্রী রপ্তানি করার একটা হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর কাঠের সামগ্রী এই সব দেশে রপ্তানির পরিমাণ ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। বন শংসাপত্র শিল্প প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্যাঁটের কড়ি খরচ করলে অনায়াসেই মিলতে পারে এই সার্টিফিকেট। বেশ কিছু অসাধু সংস্থা রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সহজেই মিলতে পারে এই সার্টিফিকেট। বিদেশী শংসাপত্র সংস্থার অফিসের এক আধিকারিকের দাবি অন্তন এমনই। তদন্তে দেখা গিয়েছে দুটি বৃহত্তম গ্লোবাল সার্টিফিকেশন সিস্টেম - FSC বা ফরেস্ট স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিল, এবং PEFC বা ফরেস্ট সার্টিফিকেশনের চল্লিশ শতাংশ পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। এমন অন্তত ছয়টি ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে ইস্যু করা শংসাপত্রগুলি জালিয়াতির কারণে বাতিল করা হয়েছে।
বন বিভাগের ডিগি সি পি গয়াল বলেছেন, “সরকার স্বদেশীয় শংসাপত্রের ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় যা সহজ, স্বচ্ছ এবং গ্রহণ করা সহজ হবে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়মগুলি মেনে চলবে এবং একই সঙ্গে জাতীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করবে। উদ্দেশ্য হল দেশীয় বাজারের জন্য এই ধরণের পণ্য উপলব্ধ করা।”