দেশভাগ, দুই দেশের তিক্ততার মাশুল গুনছে এখনও কতশত পরিবার। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কা তারই সাক্ষী থাকল।
সতেরো মাসের অপেক্ষা, বারবারঅনুমতি প্রত্যাখ্যান এবং তীব্র টানাপোড়েন, শেষপর্ষন্ত পাকিস্তানের ১০৫ বছর বয়সী হাজরা বিবির সঙ্গে দেখা হল তাঁর ভাগ্নী, ৬০ বছর বয়সী ভারতীয় হানিফানের। এই মধুর মিলনেরও সাক্ষী থাকল কাবা।
১৯৭ সালে দেশভাগের সময় বিভক্ত হওয়া পরিবারগুলি আগে একাধিকবার মিলিত হওয়ার চেষ্টা করলেও নানা কারণে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। হাজরা বিবি ও হানিফানের বিষয়টিও একই। তবে, গত বছরের জুনে পাকিস্তানি এক ইউটিউবারের মাধ্যমে এ যাত্রায় কাছের মানুষকে চোখের দেখা দেখলেন শতায়ু হাজরা বিবি। ওই ইউটিউবারের মাধ্যমেই বৃদ্ধার সঙ্গে এপারের বাসিন্দা হানিফানের কথা হয়েছিল, সেই কথোপকথন শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়।
দু'পারের দুই পরিবারের তরফেই কর্তারপুর সাহিবে দেখা করার প্রচেষ্টা বেশ কয়েকার করা হয়েছিল। পাকিস্তানে অবস্থিত কর্তারপুর সাহিব ও পাঞ্জাবের গুরুদাসপুরের গুরুদ্বার ডেরা বাবা নানকের সঙ্গে সংযোগকারী ভিসা-মুক্ত সীমান্ত অঞ্চল। তাই হাজরা বিবি ও তাঁর ভাগ্নির সাক্ষাতের জায়গা হিসাবে ওই স্থানকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলেনি।
পাঞ্জাবের কাপুরথালায় বসবাসকারী হানিফান শেষেপর্যন্ত হাজরা বিবির সঙ্গে দেখা করার জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে ভিসার আবেদন করেছিলেন। যা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল।
গত বছরের জুনে হাজরা বিবি প্রথমবারের মত হানিফার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। ফোন করার সময়ই তিনি ছোটভাগ্নি মাজিদাকে দেখাতে বলেছিলেন। সেই সময়ই তাঁকে জানানো হয় যে মাজিদা তার কিছুক্ষণ আগেই পরলোর গমন করেছেন। খবরে ভেঙে পড়েন হাজরা বিবি। ইচ্ছা প্রকাশ করেন ভারতে থাকা ভাগ্নির সঙ্গে সাক্ষাতের। কিন্তু সে তো যেন সোনার পাথর-বাটি।
যখন উভয় পরিবারই আশা ছেড়ে দিতে শুরু করেছিল, তখন একজন পাকিস্তানি ইউটিউবার, নাসির ধিলোএবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন শিখ ব্যক্তি, পল সিং গিল, তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এই দুই সহ-য় ব্যক্তিই দুই দেশের দুই পরিবারকে মক্কায় যেতে সহায়তা করেন। শেষে কাবায় হাজরা বিবি ও ফানহিনের সাক্ষাৎ হল গত বৃহস্পতিবার।
ইউটিউবার, নাসির ধিলোর কথায়, 'আমরা হাজরা বিবির ভিডিও আপলোড করেছিলাম, যা ভারতের পাঞ্জাবে তাঁর বোনের পরিবারকে সনাক্ত করতে সাহায্য করেছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় হাজরা পাকিস্তানে এসেছিলেন, সেই সময় তাঁর ছোট বোন মাজিদা ভারতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।'
ধিলো তাঁর ইউটুইবে সবটাই রেকর্ড করেছেন। হাজরা বিবি এবং হানিফান দু'জনে দু'জনকে কাবায় একে অপরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। এতদিন তাঁরা ফোনেই যোগাযোগ রক্ষা করত, এবার প্রথমবারের মতো একে অপরকে দেখলেন সশীরের।
ইউটিউবার দিলোর কথায়, 'এটা পরিষ্কার নয় কেন হানিফান গুরুদ্বার কর্তারপুর সাহেব দেখার অনুমতি পাননি। এর আগে, দুই দেশভাগের মর্মান্তিক শিকার দুইভাই, সাদিক খান এবং সিক্কা খান, গুরুদ্বার কর্তারপুর সাহেবেই দেখা করেছিলেন। হানিফান হাজরা বিবির সঙ্গে দেখা করার জন্য পাকিস্তানের ভিসার জন্যও আবেদন করেছিলেন কিন্তু ভারতে পাকিস্তান হাইকমিশন তাঁর অনুরোধটি মঞ্জুর করেনি।'
উভয় পরিবারই আর্থিকভাবে সচ্ছল না থাকায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন শিখ ব্যক্তি মক্কায় ওই দু'জনের যাওয়ার জন্য অর্থ দেন। এই পুনর্মিলনের তাড়াহুড়ো ছিল, কারণ হাজরা বিবির বয়স ইতিমধ্যেই ১০৫ বছর। কিন্তু উপরওয়ালা সহায় হলে সবই সম্ভব।