কী করে উদ্ধার হবে আন্দামানের উপজাতিদের হাতে নিহত ২৭ বছরের মার্কিন নাগরিক জন অ্যালেন চাউয়ের মৃতদেহ? ৮৩ বছর বয়স্ক নৃতত্ত্ববিদ টি এন পণ্ডিত কয়েকটা তরিবৎ বাতলেছেন এ ব্যাপারে। তিনি বলছেন বেশ কিছু নারকোল, কিছু লোহা আর অনেকটা সাবধানতা- এই নিয়ে অগ্রসর হতে হবে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিষিদ্ধ উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপের দিকে।
কিন্তু কে এই টি এন পণ্ডিত? ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফ থেকে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যন্ত দ্বীপসমূহে অসংখ্যবার পাড়ি দিয়েছেন তিনি। সেন্টিনেল দ্বীপে পা রাখা প্রথম নৃতত্ত্ববিদও তিনিই। সেখানে গিয়ে দ্বীপের অধিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পেরেছিলেন পণ্ডিত। তিনি বললেন, ‘‘বিকেল বা সন্ধের দিকে তীরের কাছে সাধারণত উপজাতির লোকজন আসে না। সে সময়ে যদি এখানে উপহার হিসেবে নারকোল ও লোহা নিয়ে সেখানে যাওয়া যায়, এবং বন্দুক বা তিরের নাগালের বাইরে বোট দাঁড় করানো হয়, তাহলে আশা করা যায় ওরা মৃতদেহ নিয়ে আসার অনুমতি দেবে। এ ব্যাপারে এলাকার জেলেদের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।’’
আরও পড়ুন, ভক্তির ঠেলায় লুপ্তপ্রায় কচ্ছপ ফিরল জলপাইগুড়ির পুকুরে
উপজাতি উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন টি এন পণ্ডিত। তিনি জানালেন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে নির্জনতাপ্রিয় এই সেন্টিনেল উপজাতির এখানকার ৮০ থেকে ৯০ জন। ‘‘অনেকেই বলে এরা খুব হিংস্র। কিন্তু এ ভাবে দেখা ঠিক হবে না। আমরা ওদের কাছে আক্রমণকারী। আমরা ওদের এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করি। যেটা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক কিন্তু আমার বিশ্বাস উপজাতির লোকজন নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছিল। আমি যেটুকু পড়েছি তাতে ওই মার্কিন ওখানে প্রথমে পৌঁছতেই ওঁকে তির মারা হয়। ওঁর আরেকটু সাবধানী হওয়া উচিত ছিল, আরেকটু ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ছিল।’’
স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, চৌ উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে যাওয়ার ব্যাপারে বন দফতর বা স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও রকম অনুমতি নেননি বা স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি জানাননি। টি এম পণ্ডিতের কার্যকালে, অর্থাৎ ১৯৬৬ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে ওই দ্বীপে ৭-৮ জনের দল নিয়ে নিয়মিতভাবে সফল অভিযান চালানো হয়েছে।
‘‘আমার মনে আছে, প্রথমবার বেশ বড়সড় দল নিয়ে গিয়ে আমরা এলাকা পরিদর্শন করি। আমরা ওখানে ১৮টি কুঁড়েঘর এবং তিরধনুক ও বর্শা দেখতে পেয়েছিলাম। আমরা সে সময়ে বেশ কিছু নারকোল রেখে এসেছিলাম। ওই দ্বীপে নারকোলগাছ হয় না। আর রেখে এসেছিলাম কিছু লোহা, তিরের ফলা বানানোর জন্য।’’ বলছিলেন পণ্ডিত।
১৯৯১ সালে অবশেষে বরফ ভাঙে। টি এন পণ্ডিত এবং তাঁর সহকর্মীদের বিশ্বাস করে তাঁদের সামনে আসা শুরু করেন উপজাতির মানুষজন। শুরু হয় হাত থেকে নারকোল নেওয়া।
‘‘আমি বিশ্বাস করতে চাই না যে ওরাই খুনটা করেছে, কিন্তু তেমনটা যে হতে পারে না, তা নয়। একবার এরকম একটা সফরের সময়ে, আমাকে ফেলে রেখে অন্যরা চলে এসেছিল। আমি হাঁটু জলে দাঁড়িয়েছিলাম। একটি অল্পবয়সী সেন্টিনেল ছেলে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। সে আমার চশমার দিকে হাত বাড়িয়ে সেটা নিয়ে নেয়। আমি ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করতেই ছুরি বের করে আমাকে ভয় দেখায়। আমি তড়িঘড়ি পিছু হঠে আসি।’’
বর্ষীয়ান নৃতত্ত্ববিদ বললেন, উপজাতিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। ‘‘ওদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা মানেই ওদের নতুন নতুন অসুখের আশঙ্কার মুখে ফেলা এবং ওদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে দূষিত করা।’’
Read the Full Story in English