পরিবারে পাঁচ ভাই-বোন। এত বড় সংসারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন বছর কুড়ির অঞ্জলি সিং। অনেক দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। নতুন বছরটাই দেখতে পারলেন তিনি। দিল্লির রাজপথে নৃশংস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর পর এখন সংসার কী ভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অঞ্জলির পরিবার।
রবিবার ভোররাতে স্কুটি চালিয়ে বাড়ি থেকে কাজে যাওয়ার সময় একটি গাড়িকে ধাক্কা মারে। সেই গাড়িতে তখন ছিল পাঁচ যুবক। ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে অঞ্জলি এবং তাঁর স্কুটি। কিন্তু গাড়ি তাঁকে পিষে দেওয়ার পর দেহ টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় ১০ কিমি। নৃশংস এই ঘটনায় দিল্লি-সহ গোটা দেশ শিউরে উঠেছে।
অঞ্জলির মৃত্যু অনেক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে তাঁর পরিবারকে। অঞ্জলির বাবা ৮-৯ বছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন। মায়ের কিডলির অসুখ। পরিবারের হাল টানতে দশম শ্রেণির পরই স্কুল ছাড়ে অঞ্জলি। একটি সাঁলোতে কাজ নিয়েছিলেন। তার পর বিয়ের অনুষ্ঠানে কনে সাজানো, মেক-আপের কাজ করতেন অঞ্জলি। ৫০০-১০০০ টাকা প্রতিদিন রোজগার হত তাঁর।
আরও পড়ুন দিল্লির রাজপথে তরুণীকে নৃশংস হত্যা, গ্রেফতার বিজেপি নেতা, উত্তাল রাজধানী
অনেকদিনই কাজ থেকে ফিরতে দেরি হত তাঁর। পরিবার চিন্তায় থাকত। রবিবার রাতে অন্ধকার নেমে এল তাঁর পরিবারে। তাঁর রেখা ঘটনার দৃশ্য টিভিতে দেখে অজ্ঞান হয়ে যান। পোশাক সম্পূর্ণ ছিঁড়ে যায়, পিঠের চামড়া উঠে যায় অঞ্জলির। মা বলেছেন, আমার মেয়ে খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু আমি মর্গে যা দেখেছি তা বিশ্বাস করতে পারিনি। আমাকে বলা হয়েছে, ওঁকে নাকি ১০ কিমি টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটা। আমার বেচারি মেয়ে, আমার অন্য মেয়েদের মতো ছিল না। ওঁ কাজে নামতে চায়নি। ওঁ খুব সাহসী। আমার মনে আছে, ওঁ বলত, ভাইরা কাজ না পেলে বিয়ে করবে না। আমার সবকিছু ছিল অঞ্জলি।
তিনি আরও বলেছেন, সংসারের হাল ধরতে সাঁলোতে কাজ নেন অঞ্জলি। মাসে ১০-১৫ হাজার কামাত। ওঁর মূল কাজ ছিল, অনুষ্ঠান বাড়িতে অতিথিদের স্বাগত জানানো, ফুল দিয়ে সাজানো, কনে সাজানো। পাশাপাশি ছোট বিউটি পার্লারগুলোতে পার্ট টাইম কাজ করত অঞ্জলি। কিন্তু লকডাউনে সেসব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিজের রোজগারের টাকায় টিভিএস জুপিটার স্কুটি কিনেছিল। বেগুনি রঙ ওঁর প্রিয় ছিল, সেই রঙের গাড়ি নিজেকে উপহার দিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে বলেন মা রেখা।